আজকাল ওয়েবডেস্ক: পুত্রবধূকে দিনরাত অত্যাচার, শারীরিক নির্যাতন। ছেলের আচরণ আর সহ্য করতে পারছিলেন না মা। অবশেষে নিজের ছেলেকে নৃশংসভাবে খুন করলেন তিনি। এরপর দেহটি টুকরো টুকরো করে লুকিয়ে রাখলেন বাড়ির মধ্যেই। অবশেষে পুলিশের জালে ধরা পড়লেন বৃদ্ধা। তদন্তে নেমে চমকে গেল পুলিশ।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে ইতালিতে। মূল অভিযুক্তের নাম, লোরেনা ভেনিয়ার। ৬১ বছরের বৃদ্ধার বিরুদ্ধে নিজের ছেলেকে কুপিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠেছে। খুনের পর ছেলের দেহটি কয়েক টুকরো করেন তিনি। নৃশংস হত্যাকাণ্ডে তাঁকে সাহায্য করেছিলেন পুত্রবধূ। বৃদ্ধার পুত্রবধূর নাম, মাইলিন ক্যাস্ট্রো মনসালভো।
ঘটনাটি ঘটেছিল ২৫ আগস্ট। ভয়ঙ্কর ঘটনাটির বিষয়ে পুলিশে প্রথম জানিয়েছেন বৃদ্ধার পুত্রবধূ। ৩০ বছর বয়সি তরুণীর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, অভিযুক্ত বৃদ্ধা লোরেনা পেশায় একজন নার্স। পুলিশি জেরায় খুনের ঘটনাটি তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন। ৩৫ বছর বয়সি যুবক অ্যালেসান্ড্রো ভেনিয়ারকে খুন করেন তাঁর মা। এই খুনের বৃদ্ধা মাকে সাহায্য করেছিলেন অ্যালেসান্ড্রোর স্ত্রী মাইলিন।
পুলিশ জানিয়েছে, জেমোনা ডেল ফ্রিউলি শহরে বাড়ির বেসমেন্টে মাইলিন ও অ্যালেসান্ড্রো থাকতেন। সঙ্গে থাকত তাঁদের ছয় মাসের সন্তান। সেই বেসমেন্ট থেকে অ্যালেসান্ড্রোর দেহের টুকরো উদ্ধার করে পুলিশ। তদন্তে নেমে পুলিশ আরও জানতে পারে, মাইলিনকে নিত্যদিন শারীরিক নির্যাতন করতেন অ্যালেসান্ড্রো। যা কখনও কখনও চরম পর্যায়ে পৌঁছে যেত।
প্রায়ই পুত্রবধূর চিৎকার, কান্নার আওয়াজ শুনতে পেতেন বৃদ্ধা। একদিন জিজ্ঞেস করায়, মাইলিন জানিয়েছিলেন, তাঁর ছেলে প্রায়ই চরম নির্যাতন করেন তাঁকে। ঘটনাটি ঘিরে তীব্র ক্ষোভ উগড়ে দেন বৃদ্ধা। তিনিও ছেলের বিরুদ্ধে চরম পদক্ষেপ করার পরিকল্পনা করেন। এরপর পুত্রবধূর সঙ্গে মিলে পরিকল্পনা করেন, অ্যালেসান্ড্রোকে তাঁরা খুন করবেন।
পুলিশকে বৃদ্ধা জানিয়েছিলেন, চলতি বছর জানুয়ারি মাসে মাইলিন কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। তখন থেকেই অ্যালেসান্ড্রোকে চিরতরে গায়েব করার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন। গত কয়েক মাসে একাধিকবার তাঁকে খুনের জন্য জোরাজুরি করেন মাইলিন। খুনের পরিকল্পনাটি কয়েক মাস আগেই করা হয়েছিল।
বৃদ্ধা আরও জানান, 'অ্যালেসান্ড্রো অবসাদে ভুগছিলেন। যার জেরে মাইলিনকে প্রায়ই মারধর করতেন। নিত্যদিন অপমান, মারধরের পাশাপাশি কখনও কখনও খুনের হুমকি পর্যন্ত দিয়েছিলেন। একসময় আমিও এর প্রতিবাদ করি। তখন আমাকেও পিছনে আঘাত করেন ছেলে।' জানা গেছে, কন্যাসন্তানের জন্মের পর স্ত্রী, সন্তানকে নিয়ে কলম্বিয়ায় চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন অ্যালেসান্ড্রো। কিন্তু লরেনা, আরও ভয়ঙ্কর পরিণতির আশঙ্কা করছিলেন।
ঘটনার দিন বৃদ্ধা মাদক মেশানো পানীয় খেতে দিয়েছিলেন ছেলেকে। এরপর ইনসুলিনের ডবল ডোজ দেন তাঁকে। যা হাসপাতাল থেকে নিয়ে এসেছিলেন তিনি। তারপরেও শ্বাসপ্রশ্বাস চলছিল তাঁর। জ্ঞান হারাতেই তাঁর মুখে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করেন লরেনা। এরপর দেহটি টুকরো টুকরো করে লুকিয়ে রাখেন। লরেনা জানিয়েছেন, শুধুমাত্র দেহটি সরিয়ে দিতে সাহায্য করেছিলেন মাইলিন। ভেবেছিলেন, ছেলের নিখোঁজের খবর কেউ নেবেন না। তাঁরা কলম্বিয়ায় চলে গেছেন বলে জানাবেন সকলকে। অবশেষে পুলিশের জালে ধরা পড়েন লরেনা। তাঁর বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করেছে পুলিশ।
