আজকাল ওয়েবডেস্ক: দক্ষিন আফ্রিকায় সম্প্রতি এক ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে। একটি ছোট্ট শিশুকে চুরি করে নিয়ে যাওয়ার প্রায় ১৭ বছর পর যখন সেই মেয়ে জানতে পারলেন যে যাঁর কোলে তিনি বড় হয়েছেন, যাঁকে তিনি মা বলে জানতেন, সেই মানুষটিই তাঁকে চুরি করেছিলেন। এহেন পরিস্থিতিতে তাঁর হৃদয়ে যে ঝড় বয়ে গিয়েছে, তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। এক মুহূর্তে কি ১৭ বছরের ভালোবাসা, যত্ন, আর মায়া মুছে ফেলা যায়? এমনই এক নির্মম বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার এক তরুণী।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর পাওয়া গিয়েছে, এই হৃদয়বিদারক ঘটনার সূত্রপাত ১৯৯৭ সালে। দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউনে অবস্থিত গ্রোট শুর হাসপাতাল থেকে। মাত্র তিন দিনের শিশু জেফানি নার্সকে হাসপাতাল থেকে এক অজানা মহিলা তুলে নিয়ে পালিয়ে যান। মেয়েটির জন্মদাত্রী মা, সেলিন নার্স জানান, এক অজ্ঞাত মহিলা শিশুটিকে কোলে নেন। এরপর তিনি সেখান থেকে সোজা বেরিয়ে যান। পুলিশ তৎক্ষণাৎ তল্লাশি শুরু করলেও, কোনও খোঁজ মেলেনি শিশুর। এই ঘটনায় সারা দেশজুড়ে তোলপাড় পড়ে যায়। কিন্তু তৎকালীন সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়।
প্রায় ১৭ বছর পর, ২০১৫ সালে ঘটে যায় অদ্ভুত এক ঘটনা। সূত্রে জানা গিয়েছে, মিশে সোলোমন নামের এক তরুনী তাঁর ‘বোনের’ স্কুলে যান। সেই স্কুলেই এক বান্ধবী তাঁকে জানান, যে তাঁকে দেখতে হুবহু তাঁর আরেক বান্ধবীর মতো। যেন যমজ বোন। খবর শুনে মিশে অবাক হয়ে যান। কারণ তিনি কখনও ভাবেননি তাঁর যমজ বোন থাকতে পারে।
কৌতূহল থেকে সেই বান্ধবী মিশেকে একটি ছবি দেখান। সেখানে মিশে এবং তাঁর বান্ধবীর ছোটবেলার ছবি ছিল। ছবিটি দেখে চমকে ওঠেন মিশে। তাঁদের এতটাই মিল ছিল যে, নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল মিশের। এরপর থেকেই মিশে তাঁর মা লাভোনা সোলোমনের কাছে প্রশ্ন করতে শুরু করেন। শুরুতে লাভোনা এড়িয়ে যেতে চাইলেও, মিশে থেমে থাকেননি।
এরপর মিশে রীতিমত সত্য উদঘাটনে নেমে পড়েন। পরে সামাজিক কর্মীরা বিষয়টি নিয়ে তদন্তে নেমে পড়ে। ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। ফলাফল দেখে সবার চক্ষু চড়কগাছ। বিস্ময়ে ও বেদনায় আপ্লুত হয় সবাই। মিশে সোলোমন আসলে জেফানি নার্স। অর্থাৎ, লাভোনা সোলোমনই সেই মহিলা, যিনি ১৭ বছর আগে হাসপাতাল থেকে শিশুটিকে চুরি করে নিজের মেয়ে হিসেবে লালন-পালন করেছিলেন।
আরও পড়ুনঃ হাঁটতে বেরিয়েছিলেন তিন প্রৌঢ়া, কয়েক মুহূর্তে চরম পরিণতি তাঁদের! অসমে হাড়হিম কাণ্ড ...
এই সত্য উন্মোচনের পর পরিবারের সদস্যরা ভয়াবহ ধাক্কা খায়। মিশে জানতে পারেন, তাঁর প্রকৃত মা সেলিন নার্স বিগত ১৭ বছর ধরে তার খোঁজে দিন কাটিয়েছেন। চুরি হয়ে যাওয়ার পর সেই শিশুই আজ এতবছর পর তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে, তবে এক ভিন্ন পরিচয়ে। লাভোনা সোলোমনকে চুরির দায়ে গ্রেপ্তার করা হয়। এই অপরাধের জেরে আদালত তাঁকে সাজা শোনায়।
তবে সবচেয়ে কষ্টের বিষয় ছিল মিশের জন্য। ঘটনার জেরে তাঁর জীবনের প্রতিটি বিশ্বাস, প্রতিটি সম্পর্ক এক মুহূর্তে বদলে যায়। যে মানুষটিকে মা হিসেবে জানতেন, ভালোবেসেছিলেন, তাঁর পরিচয় মুহূর্তে বদলে যায় এক অপরাধীর রূপে। আর এহেন বাস্তবতা তাঁকে ফিরিয়ে দেয় এক নতুন পরিবারে, এক নতুন জীবনে, যেটা তাঁর হলেও তাঁর মতো করে গড়ে ওঠেনি। এই কাহিনি শুধু একটি মেয়ে ফিরে পাওয়ার গল্প নয়, বরং এটি এক বিভ্রান্ত পরিচয়, যন্ত্রণার, ও আত্ম-অন্বেষণের দীর্ঘ যাত্রার কাহিনি হিসেবে সবার কাছে বিবেচিত হয়েছে৷
