আজকাল ওয়েবডেস্ক: শত চেষ্টাতেও নোবেল হাতছাড়া হয়েছে। আফসোস মনেই পুষে রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু প্রকাশ্যে দমতে নারাজ ট্রাম্প। উল্টে নিজেকে 'যুদ্ধ সমাধানকারী' হিসাবে আরও বেশি করে তুলে ধরতে চাইছেন তিনি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন যে, তিনি "যুদ্ধ সমাধানে পারদর্শী"। দাবি করেছেন, শান্তি প্রচেষ্টার জন্য তিনি নোবেল পুরস্কার চাননি। শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ অব্যাহত রাখতে আপাতত তাই, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংঘাতের দিকে মনোযোগ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
মিশরের উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে এয়ার ফোর্স ওয়ানে বক্তৃতার সময়ে ট্রাম্প তাঁর দীর্ঘদিনের দাবির পুনরাবৃত্তি করেছেন। দাবি কেরছেন যে, শুল্ক হুমকি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ এড়াতে সাহায্য করেছে। জোর দিয়ে বলেছেন যে, তাঁর কূটনীতির লক্ষ্য ছিল জীবন বাঁচানো, পুরষ্কার জেতা নয়।
ট্রাম্প আরও বলেছেন যে, গাজা যুদ্ধ শেষ হয়ে গিয়েছে। ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধবিরতিকে তাঁর দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট কুর্সি আরোহনের সময়ে সমাধান করা "অষ্টম যুদ্ধ" বলে অভিহিত করেছেন। তিনি আরও বলেছেন যে, যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করার পর তাঁর প্রথম ইজরায়েল এবং মিশরে সফরের লক্ষ্য হল- যুদ্ধবিরতিকে সুসংহত করা, গাজায় পুনর্গঠন প্রচেষ্টা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এবং আঞ্চলিক শান্তিকে গতিশীল করে তোলার উপর জোর দেওয়া।
ট্রাম্পের দাবি, 'আটটি যুদ্ধ সমাধান করেছি'
মার্কিন প্রেসিডেন্ট সংঘাতের মধ্যস্থতায় নিজের রেকর্ড সম্পর্কে গর্ব করে বলেছেন, তাঁর প্রশাসন একাধিক বিশ্বব্যাপী বিরোধের সমাধান করেছে। ট্রাম্প বলেছেন, "এটি হবে আমার অষ্টম যুদ্ধ যা আমি সমাধান করেছি এবং আমি শুনেছি পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে এখন একটি যুদ্ধ চলছে। আমি বলেছিলাম, ফিরে না আসা পর্যন্ত আমাকে অপেক্ষা করতে হবে। আমি আরেকটি যুদ্ধ থামাবো। কারণ আমি যুদ্ধ সমাধানে পারদর্শী।" পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার সময় তাঁর মন্তব্য এই প্রথম।
উল্লেখ্য, আফগানিস্তান-পাকিস্তানে সংঘাত ক্রমশ বাড়ছে। গত কয়েকদিন রাতভর তীব্র সংঘর্ষের খবর পাওয়া গিয়েছে। আফগান সরকারের তরফে তালিবানরা বলেছেন যে, শনিবার রাতে প্রতিশোধমূলক অভিযানে ৫৮ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের প্রতিবেদন অনুসারে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ২৩ জন হতাহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
ট্রাম্প পূর্ববর্তী সংঘাতগুলিকেও তুলে ধরেছেন যা তাঁর হস্তক্ষেপে সমাধানে অগ্রগতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের কথায়, "ভারত ও পাকিস্তানের কথা ভাবুন, বছরের পর বছর ধরে চলমান কিছু যুদ্ধের কথা ভাবুন। এক একটা যুদ্ধে প্রায় ৩১, ৩২, ৩৭ বছরের বেশি চলছে। প্রতিটি দেশেই লক্ষ লক্ষ মানুষ নিহত হয়েছেন। তবে আমি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একদিনের মধ্যে প্রতিটি যুদ্ধ শেষ করেছি। এটা বেশ ভাল।"
আমি জীবন বাঁচানোর জন্য এটা করেছি, নোবেলের জন্য নয়: ট্রাম্প
প্রেসিডেন্ট দাবি করেছেন যে তাঁর শান্তি উদ্যোগগুলি "লক্ষ লক্ষ জীবন বাঁচিয়েছে।"। এই উদ্যোগকে তিনি "সম্মানের" বলেও জানাতে ভোলেননি। তাঁর কথায়, "আমি লক্ষ লক্ষ জীবন বাঁচিয়েছি। নোবেল কমিটি যে সম্মান দিয়েছে তা ছিল ২০২৪ সালের জন্য। তবে অনেকেই বলেছেন যে, আপনি ব্যতিক্রমী। ২০২৫ সালে অনেক কিছু ঘটেছে, তার মধ্যেই সব থেকে বড় কাজ হল যুদ্ধ বন্ধ করে দেওয়া। কিন্তু আমি নোবেলের জন্য এইসব করিনি। আমি জীবন বাঁচানোর জন্য এটা করেছি।"
ট্রাম্প বলেছিলেন যে কূটনীতি নয়, অর্থনৈতিক চাপ-ই তাঁকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ রোধ করতে সাহায্য করেছিল। প্রেসিডেন্ট বলেছেন, "আমি কেবল শুল্কের ভিত্তিতে কয়েকটি যুদ্ধের নিষ্পত্তি করেছি। উদাহরণস্বরূপ, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে, যদি তোমরা যুদ্ধ করতে চাও এবং তোমাদের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র থাকে, তাহলে আমি তোমাদের উভয়ের উপরই বড় শুল্ক আরোপ করব -- ১০০ শতাংশ, ১৫০ শতাংশ, ২০০ শতাংশ। আমি বলেছিলাম আমি শুল্ক আরোপ করছি, এবং আমি ২৪ ঘন্টার মধ্যে সেই বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে পারতাম। যদি আমার শুল্ক না থাকত, তাহলে তোমরা কখনই সেই যুদ্ধের নিষ্পত্তি করতে পারতে না।"
মধ্যপ্রাচ্যের দিকে রওনা ট্রাম্পের:
ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফরের লক্ষ্য হল ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি জোরদার করা এবং ইজরায়েল ও হামাসের মধ্যে বন্দি বিনিময়ের অগ্রগতি তদারকি করা।
তিনি বলেন, "হামাসের হাতে আটক যুদ্ধবন্দিদের প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত মুক্তি দেওয়া যেতে পারে এবং তাদের প্রত্যাবর্তন সোমবার বা মঙ্গলবার সম্পন্ন হওয়ার প্রত্যাশা করা হয়েছে। ২০ জন জীবিত বন্দির মুক্তি, অন্যদের দেহাবশেষ ফেরত দেওয়া এবং গাজার প্রধান শহরগুলি থেকে আংশিক ইজরায়েলী সেনা প্রত্যাহারের পাশাপাশি ইজরায়েলের হাতে বন্দি শত শত প্যালেস্তানীয়কে মুক্তি দেওয়া।"
যুদ্ধ শেষ হয়ে গিয়েছে। আমার মনে হয় মানুষ এতে ক্লান্ত: ট্রাম্প
মার্কিনভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ফক্স নিউজকে বলেছেন যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর সফরকালে মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দি এবং তাদের পরিবারের সঙ্গেও দেখা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
ট্রাম্প প্রথমে জেরুজালেম যাবেন, যেখানে তিনি ইজরায়েলের সংসদ, নেসেটে ভাষণ দেবেন - যেখানে ২০০৮ সালে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশকে শেষবার সম্মানিত করা হয়েছিল। তারপর ট্রাম্প মিশরের শার্ম আল-শেখ যাবেন। মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সঙ্গে একটি শান্তি শীর্ষ সম্মেলনে সহ-সভাপতিত্ব করবেন। ২০ জনেরও বেশি বিশ্ব নেতার অংশগ্রহণে এই শীর্ষ সম্মেলনের লক্ষ্য যুদ্ধবিরতি কাঠামো চূড়ান্ত করা, গাজার পুনর্গঠনের রূপরেখা তৈরি করা এবং আঞ্চলিক স্বাভাবিকীকরণকে উৎসাহিত করা।
ট্রাম্প বলেছেন যে, তিনি বিশ্বাস করেন যে মধ্যপ্রাচ্যকে পুনর্গঠন এবং ইজরায়েল এবং তার আরব প্রতিবেশীদের মধ্যে বিভাজন দূর করার জন্য একটি সংকীর্ণ জানালা রয়েছে। ওয়াশিংটন ছাড়ার আগে বলেছেন, "এবার স্থায়ী কিছু তৈরি করার সময়।"
চতুর্থ দিনে এই যুদ্ধবিরতি ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শান্তি কাঠামোর প্রথম ধাপ, যা গাজা সংঘাতের স্থায়ী অবসান এবং এই অঞ্চলের জন্য একটি নতুন শাসন কাঠামো প্রতিষ্ঠার জন্য তৈরি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন- গাজা যুদ্ধের অবসান ঘোষণা ট্রাম্পের, শান্তি সম্মেলনে যোগ দিতে রওনা ইসরায়েল ও মিশরে
