আজকাল ওয়েবডেস্ক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত ব্যাপক শুল্কনীতিকে কেন্দ্র করে এবার সুপ্রিম কোর্টে চূড়ান্ত লড়াই শুরু হতে চলেছে। ট্রাম্প প্রশাসন যদি এই মামলায় হেরে যায়, তবে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে শত শত বিলিয়ন ডলারের শুল্ক রাজস্ব ফেরত দিতে হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন মার্কিন ট্রেজারি সেক্রেটারি স্কট বেসেন্ট। রবিবার এনবিসি’র Meet the Press অনুষ্ঠানে বেসেন্ট বলেন, “আমাদের প্রায় অর্ধেক শুল্ক ফেরত দিতে হবে। এটা ট্রেজারির জন্য ভয়ঙ্কর আঘাত হবে।” প্রশ্ন করা হলে তিনি স্বীকার করেন যে, আদালতের নির্দেশ এলে সরকারকে অর্থ ফেরত দিতেই হবে, যদিও তিনি নিশ্চিত যে ট্রাম্প প্রশাসন শেষ পর্যন্ত জয়ী হবে।
আদালতের রায় ও আইনি প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে। দুই ফেডারেল আদালত ইতিমধ্যেই রায় দিয়েছে যে, ১৯৭৭ সালের International Emergency Economic Powers Act (IEEPA) অনুযায়ী ট্রাম্প এত বিস্তৃতভাবে শুল্ক আরোপের ক্ষমতা রাখেন না। মার্কিন Court of Appeals for the Federal Circuit ২৯ আগস্ট জানায়, ট্রাম্প “reciprocal tariffs” চালু করে ক্ষমতার সীমা অতিক্রম করেছেন। তবে আদালত আপিলের সুযোগ দিয়ে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত রায় স্থগিত রেখেছে। ট্রাম্প প্রশাসন এখন সুপ্রিম কোর্টে শুনানির আবেদন করেছে, যা নভেম্বরের শুরুতেই হতে পারে।
বিপুল রাজস্ব ফেরতের ঝুঁকি রয়েছে আমেরিকার। আগস্টে নতুন শুল্ক কার্যকর হওয়ার পর থেকে US Customs and Border Protection ইতিমধ্যেই ৭০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি রাজস্ব তুলেছে। তবে এই বছরের মোট শুল্ক আয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৮০ বিলিয়ন ডলার। যদি মামলা ২০২৬ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত গড়ায় এবং ট্রাম্প প্রশাসন হেরে যায়, তবে ফেরতযোগ্য অর্থ ৭৫০ বিলিয়ন থেকে ১ ট্রিলিয়ন ডলারের মধ্যে পৌঁছতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বেসেন্ট।
বিকল্প পথে অগ্রসর হওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে এরই মধ্যে। ন্যাশনাল ইকোনমিক কাউন্সিলের পরিচালক কেভিন হ্যাসেট জানান, প্রয়োজনে প্রশাসন Trade Expansion Act–এর সেকশন ২৩২ ব্যবহার করতে পারে, যা জাতীয় নিরাপত্তার ভিত্তিতে শুল্ক আরোপের সুযোগ দেয়। ট্রাম্প ইতিমধ্যেই ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামে ৫০ শতাংশ শুল্ক বসিয়ে তা ৪০০–র বেশি পণ্যে সম্প্রসারিত করেছেন। ভবিষ্যতে সেমিকন্ডাক্টর ও ফার্মাসিউটিক্যালসেও শুল্ক আরোপের হুমকি দেওয়া হয়েছে।
রাশিয়ার তেলকে ঘিরে নতুন পদক্ষেপ শুরু হয়েছে আমেরিকায়। একইসঙ্গে বেসেন্ট ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে সমন্বয় করে রাশিয়ার তেল ক্রয়কারী দেশগুলির বিরুদ্ধে বাড়তি নিষেধাজ্ঞা ও শুল্ক আরোপের ইঙ্গিত দেন। তিনি বলেন, “যদি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ একসঙ্গে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেয়, তবে রুশ অর্থনীতি পুরোপুরি ভেঙে পড়বে এবং পুতিনকে আলোচনার টেবিলে টেনে আনা সম্ভব হবে।”
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ভারত থেকে রুশ তেল কেনার কারণে ৫০ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে। অন্যদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মার্কিন ও ইউরোপীয় উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছেন। দেশের ভেতরে চাকরি নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। আগস্টে মাত্র ২২,০০০ নতুন চাকরি তৈরি হয়েছে এবং বেকারত্ব বেড়ে ৪.৩ শতাংশে পৌঁছেছে—যা গত চার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তবে বেসেন্ট ‘চাকরি মন্দা’র আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “যদি পরিস্থিতি এত খারাপ হয়, তবে জিডিপি ৩.৩ শতাংশ হলো কীভাবে? কেন শেয়ারবাজার সর্বকালের সর্বোচ্চে?”
তিনি দাবি করেন, শুল্ক আয় আর্থিক স্থিতিশীলতা বাড়িয়েছে এবং দীর্ঘমেয়াদে তা মার্কিন জনগণের জন্য উচ্চ বেতনের চাকরির সুযোগ তৈরি করবে। সুপ্রিম কোর্টের আসন্ন রায় শুধু মার্কিন অর্থনীতি নয়, ট্রাম্পের রাজনৈতিক অবস্থান ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যনীতিকেও গভীরভাবে প্রভাবিত করবে। যদি প্রশাসন মামলায় হেরে যায়, তবে এক ট্রিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি রাজস্ব ফেরতের দায় যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক ব্যবস্থায় এক বিশাল চাপ সৃষ্টি করবে।
