আজকাল ওয়েবডেস্ক: চেন্নাই থেকে শুরু হয়েছে ফ্রান্স সরকারের শিক্ষা প্রচারাভিযান ‘চুজ ফ্রান্স ট্যুর ২০২৫’, যা ৫ অক্টোবর উদ্বোধনের পর ৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়েছে দিল্লিতে। আগামী দিনে এই শিক্ষা মেলা অনুষ্ঠিত হযে কলকাতায় এবং মুম্বইয়ে। এই উদ্যোগের লক্ষ্য ভারতীয় ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের ফ্রান্সের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে পরিচিত করানো।
ফ্রান্সের দূতাবাসের তথ্যানুসারে, ২০২৪–২০২৫ শিক্ষাবর্ষে ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেড়েছে, যা ফ্রান্সের ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০,০০০ ভারতীয় ছাত্রছাত্রীকে স্বাগত জানানোর লক্ষ্যকে আরও কাছাকাছি নিয়ে গেছে। দূতাবাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “এই বৃদ্ধি আমাদের উচ্চ পর্যায়ে নির্ধারিত লক্ষ্যের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”
এই বছরের চুজ ফ্রান্স ট্যুরে অংশ নিচ্ছে ৫০টিরও বেশি ফরাসি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যার মধ্যে রয়েছে শীর্ষ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং ও বিজনেস স্কুল, এবং শিল্পকলার কলেজ। অংশগ্রহণকারীরা এই মেলায় কোর্স, বৃত্তি, ভিসা প্রক্রিয়া এবং ফ্রান্সে ছাত্রজীবন সম্পর্কে বিস্তারিত দিকনির্দেশনা পাচ্ছেন।
দিল্লি অনুষ্ঠানে ফ্রান্সের ভারতের রাষ্ট্রদূত থিয়েরি মাতু (Thierry Mathou) বলেন, “ফ্রান্স ভারতের প্রতিভার প্রতি গভীর আস্থা রাখে। আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০,০০০ ভারতীয় ছাত্রছাত্রীকে ফ্রান্সে স্বাগত জানাতে চাই, যা আমাদের দুই দেশের পারস্পরিক আস্থার প্রতীক।”
রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, এই সম্পর্ক শুধুমাত্র শিক্ষাক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নয়। “প্রত্যেক ভারতীয় ছাত্রই ভবিষ্যতের এক সহযোগী। তাঁদের সাফল্য ভারতে সক্রিয় ১,০০০-রও বেশি ফরাসি কোম্পানির সঙ্গে সম্পর্ককে আরও মজবুত করবে। আমরা আপনাদের শুধু ছাত্র হিসেবে নয়, বরং এক উজ্জ্বল যৌথ ভবিষ্যতের অংশীদার হিসেবে দেখি,” তিনি যোগ করেন।
আরও পড়ুন: কোয়ান্টাম মেকানিক্যালে বিরাট অবদান, পদার্থবিদ্যায় নোবেলজয়ী তিন মার্কিন বিজ্ঞানী
ফ্রান্সের দূতাবাসের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক কাউন্সেলর গ্রেগর ট্রুমেল (Gregor Trumel) জানান, “ভারতীয় ছাত্রদের সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ছে। এ বছর ১৭ শতাংশ বৃদ্ধি ঘটেছে, দুই বছর আগে ছিল ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি। আমরা ক্রমাগত কাজ করছি এবং খুব খুশি যে চুজ ফ্রান্স ট্যুর এত সাফল্য পাচ্ছে।”
তিনি আরও জানান, বর্তমানে প্রায় ১০,০০০ ভারতীয় ছাত্রছাত্রী ফ্রান্সে অধ্যয়ন করছে, যার মধ্যে ৮৫ শতাংশই ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তি। তবে ইঞ্জিনিয়ারিং, বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান এবং মানবিক বিষয়েও প্রচুর সুযোগ রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ট্রুমেল বলেন, “অনেকে ভাবেন ভাষা সমস্যা হবে, কিন্তু ফ্রান্সে ১,৬০০টি ইংরেজি ভাষায় পড়ানো প্রোগ্রাম রয়েছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হোক বা বেসরকারি স্কুল, সুযোগের অভাব নেই।”
তিনি ভারতীয় ছাত্রদের উদ্দেশে বলেন, “চুজ ফ্রান্স ট্যুরে এসে আমাদের সঙ্গে কথা বলুন। আপনি ফ্রান্সে পড়াশোনার অসংখ্য সম্ভাবনা দেখতে পাবেন। এটি আপনার জন্য এক নতুন দিগন্ত।”
ফ্রান্স সরকার ভারতের প্রতি তাদের অগ্রাধিকার নীতি অপরিবর্তিত রাখছে বলেও তিনি জানান। “ভারত আমাদের অন্যতম অগ্রাধিকার দেশ। ছাত্রছাত্রীদের জন্য কোনো নতুন বিধিনিষেধ নেই। ভারতীয় ছাত্ররা অত্যন্ত পরিশ্রমী ও মেধাবী, তাঁদের স্বাগত জানাতে আমরা আগ্রহী,” বলেন ট্রুমেল।
তিনি আরও যোগ করেন, “ভারতীয় ছাত্ররা দ্রুত ফরাসি ভাষা শিখে নিচ্ছে, তারা নতুন সংস্কৃতি ও কর্মপদ্ধতি রপ্ত করছে। এটি তাদের ভবিষ্যৎ পেশাজীবনে অত্যন্ত সহায়ক হবে।”
ফ্রান্সের শিক্ষাগত উৎকর্ষের কথা উল্লেখ করে ট্রুমেল বলেন, “আমাদের দেশে বহু নোবেল বিজয়ী রয়েছেন, গণিত, বিজ্ঞান, প্রকৌশল, স্বাস্থ্য ও বিমানক্ষেত্রে ফ্রান্সের সুনাম বিশ্বজোড়া। ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে আমরা এয়ারস্পেস ও হেলথ সেক্টরে বড় কাজ করছি।”
তিনি জানান, ফ্রান্স বর্তমানে উদ্ভাবন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ও উদীয়মান প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে। “আমরা চাই ভারতীয় ছাত্ররা এই নতুন ক্ষেত্রগুলোকেও জানুক ও কাজে লাগাক,” বলেন তিনি।
ট্রুমেল আরও উল্লেখ করেন যে ফরাসি ভাষা শেখার মাধ্যমে ছাত্ররা শুধু ফ্রান্সেই নয়, বরং বিশ্বজুড়ে ৪০০ মিলিয়নেরও বেশি ফরাসি ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।
ফ্রান্সে পড়াশোনার খরচ তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ফ্রান্সের উচ্চশিক্ষা মান ও ব্যয়ের দিক থেকে বিশ্বের সেরা সমন্বয়। আমাদের বৃত্তি ব্যবস্থাও শক্তিশালী—৫০০টি বৃত্তি বর্তমানে ভারতীয় ছাত্রদের জন্য উন্মুক্ত।”
শেষে তিনি বলেন, “ভারতে ১,০০০ ফরাসি কোম্পানি কাজ করছে, যা প্রায় পাঁচ লক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। সম্পর্ক আরও বাড়বে। তাই এখনই সঠিক সময় ফ্রান্সে পড়াশোনা করতে যাওয়ার। চুজ ফ্রান্স ট্যুরে আসুন, তথ্য জেনে নিন, আর নিজের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলুন।”
সংক্ষেপে, ফ্রান্সে ভারতীয় ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি দ্রুত বাড়ছে, যা দুই দেশের শিক্ষা ও কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে তুলছে। ফরাসি সরকারের এই উদ্যোগ শুধু শিক্ষার নয়, বরং এক দীর্ঘমেয়াদি সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রতীক হিসেবে উঠে এসেছে।
