আজকাল ওয়েবডেস্ক: ইসরায়েলকে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়ায় আগামী বছরের ইউরোভিশন গান প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তত চারটি দেশ— স্লোভেনিয়া, স্পেন, আয়ারল্যান্ড এবং নেদারল্যান্ডস। সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ইউরোপিয়ান ব্রডকাস্টিং ইউনিয়ন (ইবিইউ)-এর বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্তগুলি প্রকাশ্যে আসে।

স্লোভেনিয়ার সরকারি সম্প্রচার সংস্থা RTV Slovenija জানায়, গাজায় ইসরায়েলের সামরিক হামলা ও হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক, বিশেষ করে শিশু হত্যার দায়ে অভিযুক্ত একটি রাষ্ট্রের প্রতিনিধির সঙ্গে একই সাংস্কৃতিক মঞ্চে দাঁড়ানো তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। RTV Slovenija–র টেলিভিশন বিভাগের প্রধান কসেনিজা হরভাত বলেন, “গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আমরা সতর্ক করেছি। গাজায় গণহত্যা চালানো একটি রাষ্ট্রের প্রতিনিধি পাশে দাঁড়ানো আমাদের মূল্যবোধের বিরুদ্ধে।” সংস্থার আরেক কর্মকর্তা নাতালিজা গোর্চাক যোগ করেন, “এই সিদ্ধান্ত ২০,০০০ নিহত প্যালেস্তিনীয় শিশুর জন্য আমাদের নৈতিক অবস্থান।”

বিভিন্ন সম্প্রচার সংস্থা অভিযোগ করেছে, ইসরায়েল শুধু যুদ্ধাপরাধই নয়, বরং সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে এবং শতাধিক সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। তাদের দাবি, এমন পরিস্থিতিতে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় ইসরায়েলের অংশগ্রহণ স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

ইবিইউ বৈঠকে কয়েকটি সদস্য দেশ ইসরায়েলের অংশগ্রহণের বিষয়ে ভোটাভুটির দাবি তুললেও তা প্রত্যাখ্যান করা হয়। বরং ইবিইউ নতুন কিছু নিয়ম চালুর ঘোষণা দিয়েছে, যা প্রতিযোগীদের রাজনৈতিক প্রচারণা নিয়ন্ত্রণ করবে। সমালোচকদের মতে, এই নিয়ম কেবল একটি “প্রযুক্তিগত আড়াল”— মূল সমস্যাটি রাজনৈতিক বার্তা নয়, বরং যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত একটি রাষ্ট্রকে বৈধতা দেওয়া।

স্পেনের RTVE তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে, গাজায় চলমান পরিস্থিতি এবং প্রতিযোগিতাকে রাজনৈতিক প্রচারণার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহারের কারণে ইউরোভিশনের নিরপেক্ষতা বজায় রাখা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

ইসরায়েলের সাংস্কৃতিক বয়কট আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া PACBI এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় সম্প্রচার সংস্থাগুলো নৈতিক অবস্থান নিয়েছে এবং ইবিইউ ইতিহাসের সবচেয়ে বিতর্কিত ইউরোভিশন আয়োজন করছে।

বেলজিয়ামে চাপ বাড়ছে। বামপন্থী দল PTB-PVDA–র সংসদ সদস্য নাবিল বৌকিলি বলেছেন, “ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পরদিনই রাশিয়াকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। অথচ দুই বছর ধরে গাজায় নৃশংসতা চললেও ইসরায়েলকে স্বাভাবিক রাষ্ট্র হিসেবে রাখা হচ্ছে— এটি চরম ভণ্ডামি।”

ইউরোপ জুড়ে জনমত উত্তপ্ত, এবং ধারণা করা হচ্ছে আরও কয়েকটি দেশ সরে দাঁড়ানোর বিষয়ে শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেবে। অনেকের মতে, ইউরোভিশন এখন শুধু একটি সংগীত প্রতিযোগিতা নয়— বরং মানবিকতা ও আন্তর্জাতিক নৈতিকতার পরীক্ষাক্ষেত্র।