আজকাল ওয়েবডেস্ক: অপপ্রচার, ভুয়ো তথ্য, হিংসাত্বক মন্তব্য ও পর্নোগ্রাফি রুখতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক বন্ধ করা হল পাপুয়া নিউগিনিতে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি-এর প্রতিবেদন অনুসারে গত সোমবার থেকেই এই দেশটিতে সরকার আচমকা ফেরসবুক বন্ধ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আপাতত পরীক্ষামূলকভাবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারি এই সিদ্ধান্ত ঘিরে রীতিমত ঝড় উঠেছে সেদেশে। চলছে প্রবল সমালোচনা। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির দাবি, ফেসবুক বন্ধের সিদ্ধান্ত পাপুয়া নিউগিনির মানুষের মানবাধিকারের লঙ্ঘন এবং ব্যক্তি স্বাধীনতায় আঘাত। পাল্টা সেদেশের পুলিশ বিষয়ক মন্ত্রী পিটার সিয়ামালিলির জুনিয়রের, সরকার বাকস্বাধীনতা দমন করার চেষ্টা করছে না। বরং নাগরিকদের ক্ষতিকর বিষয়বস্তু থেকে রক্ষা করতেই এই প্রয়াস।
পাপুয়া নিউগিনিতে সবচেয়ে জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম হল ফেসবুক। দেশটিতে আনুমানিক ১৩ লাখ ফেসবুক ব্যবহারকারী রয়েছে, যার মধ্যে অনেকে ফেসবুকের মাধ্যমে ছোট ব্যবসাও করেন।
বিবিসি-এর প্রতিবেদন অনুসারে পাপুয়া নিউগিনিতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কমছে বলে সাম্প্রতিককালে সমালোচনা হচ্ছে। এ কারণে ফেসবুকে অনেকে নিজের মতো করে মত প্রকাশ করছেন। বর্তমানে পাপুয়া নিউগিনিতে এই প্রবণতা বেড়েছে। তার জেরেই ফেসবুক বন্ধের সিদ্ধান্ত দেশটিতে আলোড়ন ফেলেছে।
PNG government “testing” controls over facebook @Meta in PNG. Blackout, blanket suppression. This is stuff dictators do. pic.twitter.com/p1vd9NJZ3S
— MICHAEL KABUNI (@miqurlkabuni)Tweet by @miqurlkabuni
এ ব্যাপারে পাপুয়া নিউগিনির মিডিয়া কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট নেভিল চই বলছেন, "এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক স্বৈরতন্ত্রে সীমানা গড়ে দিল, মানবাধিকারের চরম অবমাননা হল। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, যোগাযোগ ও প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত অন্তত দু'টো সরকারি সংস্থাই সরকারের এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে জানে না। কিন্তু সরকার বলছে, তারা এই পরীক্ষামূলক কার্যক্রমের ব্যাপারে এসব সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।"
পাপুয়া নিউগিনিতে নতুন সন্ত্রাসবিরোধী আইন পাস হওয়ার কয়েক মাস পর গত সোমবার এল ফেসবুকে নিষেধাজ্ঞা। এটি সরকারকে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে অনলাইন যোগাযোগ পর্যবেক্ষণ এবং তা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা দেয়। এই নিয়ে এক মানবাধিকারকর্মীর প্রতিক্রিয়া, "এটি একটি কঠোর আইন, যা আমাদের স্বাধীনতা হরণ করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। ফেসবুক ব্লক করা এর প্রথম পদক্ষেপ।"
পাপুয়া নিউগিনির ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান জন পোরা, ফেসবুকে জীবিকা নির্বাহকারী হাজার হাজার খুচরা বিক্রেতাদের নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। তাঁর কথায়, "সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক ব্যবহার করে কয়েক লক্ষ লোক অএনলাইনে জীবীকা নির্বাহ করেন। সরকারি সিদ্ধান্তে তাঁরা অনিশ্চিত বোধ করবেন, ফলে আমি আশা করছি ফের আগের অবস্থা ফিরে আসবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা অনলাইনে সুষ্ঠুভাবে ব্যবসা করতে পারবেন।"
পাপুয়া নিউগিনি কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন ধরেই ফেসবুকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার হুমকি দিয়ে আসছিল। ২০১৮ সালে, দেশটি এক মাসের জন্য প্ল্যাটফর্মটি নিষিদ্ধ করে দেয়। ভুয়া প্রোফাইল নির্মূল করতেই সেই পদক্ষেপ ছিল বলে জানিয়েছিল প্রশাসন। সেই সময়ে, কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্র পরিচালিত বিকল্পের ধারণাটি উত্থাপন করেছিল। ২০২৩ সালে পাপুয়া নিউ গিনি দেশে "ভুয়া খবর, খারাপ খবর রিপোর্টিং এবং সোশ্যাল মিডিয়া" সম্পর্কে একটি সংসদীয় তদন্ত করেছিল।
