আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রবল বর্ষণ ও আকস্মিক বন্যায় পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তর এবং প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ শনিবার জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৩০৭। শুধুমাত্র বুনের জেলাতেই প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৮৪ জন। শুক্রবার প্রবল বর্ষণ ও মেঘভাঙা বৃষ্টির ফলে বিভিন্ন জেলায় হঠাৎ বন্যা দেখা দেয়। ওই একদিনেই ২০০-রও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। পিডিএমএ মুখপাত্র ফায়জি জানান, বাজওর, বুনের, সোয়াত, মানসেহরা, শাংলা, তোরঘর এবং বত্তাগ্রাম জেলাগুলি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শাংলায় ৩৬ জন, মানসেহরায় ২৩ জন, সোয়াতে ২২ জন, বাজওরে ২১ জন, বত্তাগ্রামে ১৫ জন, লোয়ার দিরে পাঁচজন এবং আবোটাবাদে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সংস্থার পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, বহু মানুষ এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।
ফলে মৃত ও আহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। ভারী বর্ষণের কারণে রাস্তা-ঘাট ভেসে গেছে, বাড়িঘর ভেঙে পড়েছে এবং পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের ঘটনাও ঘটেছে। গত জুনের শেষ থেকে শুরু হওয়া বর্ষার মরশুমে পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে খাইবার পাখতুনখোয়া ও উত্তরাঞ্চলে প্রবল বর্ষণ, আকস্মিক বন্যা এবং ভূমিধস ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ডেকে এনেছে। বহু মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন এবং বিপুল পরিমাণ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।নদীর জলবণ্টন নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আবারও উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। পাকিস্তানের আবহাওয়া বিভাগ এর আগে সতর্ক করে জানিয়েছে যে, ভারত যদি পাকিস্তানের দিকে প্রবাহিত নদীগুলিতে অতিরিক্ত জল ছেড়ে দেয়, তাহলে দেশের বহু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।
ভারী বর্ষা বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে, সেই সঙ্গেই হিমবাহ গলে যাওয়ার ফলে আকস্মিক বন্যার ঝুঁকি রয়েছে, যা হিমবাহের হ্রদ আউটবার্স্ট বন্যা (GLOFs) নামে পরিচিত। ফলে পাকিস্তানিদের শঙ্কা ক্রমশ গাঢ় হচ্ছে। চাপ বাড়ছে শরিফ সরকারেরও। পিএমডির ডিরেক্টর মেহের সাহেবজাদ খান জানান যে, ভারতীয় বাঁধগুলিতে জল সঞ্চয়ের কারণে, রাভি নদীতে বর্তমানে হু-হু করে জল বইছে। এছাড়া, ঝিলাম এবং শতদ্রু নদীতে তাৎক্ষণিকভাবে বন্যার কোনও আশঙ্কা নেই, তবে চন্দ্রভাগা নদীর পরিস্থিতি বেশ উদ্বেগের। পিএমডির ডিরেক্টর মেহের সাহেবজাদ খান উল্লেখ করেছিলেন, বৃষ্টিপাত ২৫ জুলাই, শুক্রবার পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে, তার পরে মাসের শেষের দিকে আরও এক দফা ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এই অব্যাহত বৃষ্টিপাত, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে, জলস্তর বিপজ্জনকভাবে বৃদ্ধি করতে পারে এবং বন্যার আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলছে।
তিনি সতর্ক করে বলেছেন, "বৃষ্টি ক্রমাগতভাবে বাঁধের জমা জলের স্তর বাড়িয়ে দিচ্ছে, এবং যদিও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, বিপদ এখনও কেটে যায়নি। মাসের শেষ নাগাদ তীব্র বৃষ্টিপাত হতে পারে। ফলে পরিস্থিতি বেশ উদ্বেগের।" প্রায় আড়াই সপ্তাহ টানা বৃষ্টির কারণে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয় পাকিস্তানে। জলে ভাসছে পাকিস্তানের বিস্তীর্ণ এলাকা। ২১ জুলাই পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এক কোটিরও বেশি মানুষ। মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতির হিসেবে শীর্ষে পঞ্জাব প্রদেশ। সেখানে মৃত্যু হয়েছে ১২৩ জনের। খাইবার পাখতুনখাওয়ায় মারা গেছেন ৪০ জন। সিন্ধু প্রদেশে ২১ জন। বালোচিস্তানে ১৬ জন এবং রাজধানী ইসলামাবাদ এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে এক জন করে নাগরিক বন্যা জলে ডুবে, ভূমিধস-সহ অতিবৃষ্টিজনিত নানা দুর্ঘটনায় বা বজ্রপাতের মারা গিয়েছেন। পাশাপাশি, এ পর্যন্ত ৫৬০ জন আহত হয়েছেন। যাঁদের মধ্যে ১৮২ জন শিশু। পুরোপুরি ধ্বংস বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েক হাজার ঘরবাড়ি! পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনা করে সেনাবাহিনীকেও প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ।
