আজকাল ওয়েবডেস্ক: পদার্থবিজ্ঞানের মূলনীতি বলে—প্রতিটি গতি, পরিবর্তন বা বিক্রিয়ার পেছনে একটি নির্দিষ্ট বল কাজ করে। এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানের জানা চারটি মৌলিক বল হচ্ছে—মহাকর্ষ বল, তড়িৎ-চুম্বকীয় বল, সবল নিউক্লিয় বল ও দুর্বল নিউক্লিয় বল। তবে দীর্ঘদিন ধরেই একটি প্রশ্ন বিজ্ঞানী সমাজে ঘুরপাক খাচ্ছিল—এই চারটির বাইরে কি আরও কোনো অজানা বল থাকতে পারে?
সম্প্রতি জার্মানি, সুইজারল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার এক যৌথ গবেষণায় সেই সম্ভাবনার নতুন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, ক্যালসিয়ামের পাঁচটি ভিন্ন আইসোটোপ নিয়ে পরীক্ষা চালিয়ে তারা এমন একটি বিচ্যুতি লক্ষ করেছেন, যা বর্তমান পদার্থবিজ্ঞানের 'স্ট্যান্ডার্ড মডেল' দিয়ে পুরোপুরি ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়।
গবেষণায় বিজ্ঞানীরা ক্যালসিয়াম আইসোটোপে থাকা ইলেকট্রনগুলোর শক্তির স্তর পরিবর্তন বা 'অ্যাটমিক ট্রানজিশন' পর্যালোচনা করেন। অত্যন্ত সূক্ষ্ম পরিমাপের মাধ্যমে দেখা যায়—ইলেকট্রনের শক্তি-পরিবর্তনে এমন কিছু অজানা অনিয়ম রয়েছে, যা শুধু চারটি মৌলিক বল দিয়ে বোঝানো যাচ্ছে না।
এই অজানা বিভ্রান্তির পেছনে নতুন কোনো বল কাজ করছে কি না, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে গবেষকরা এক সম্ভাব্য ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন। তাঁদের মতে, ইলেকট্রন ও নিউট্রনের মধ্যে হয়তো এমন একটি গোপন বল কাজ করছে, যার বাহক হতে পারে 'Yukawa কণা' নামের এক অনুমানভিত্তিক উপাদান। এই Yukawa কণাই সেই অজানা সংযোগ তৈরি করে দিতে পারে, যা দিয়ে এই নতুন বল তার প্রভাব বিস্তার করছে।
যদিও Yukawa কণার অস্তিত্ব এখনও পর্যবেক্ষণযোগ্য নয় এবং এই ‘পঞ্চম বল’ এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়েই আছে, তবুও গবেষকরা মনে করছেন—এটি পদার্থবিজ্ঞানে এক যুগান্তকারী সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিতে পারে। গবেষণার অন্যতম সদস্য অধ্যাপক টোবিয়াস শ্মিডার বলেন, “আমরা এখনো নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না যে পঞ্চম বল আবিষ্কৃত হয়েছে। কিন্তু এটুকু বলতে পারি—তার অস্তিত্বের পক্ষে বৈজ্ঞানিক ভিত্তি অনেকটা শক্ত হয়েছে।”
বিশ্বজুড়ে পদার্থবিজ্ঞানীরা এখন এই তথ্যের দিকে নজর রাখছেন। ভবিষ্যতের আরও গবেষণা এবং অধিক নিখুঁত পরিমাপ হয়তো একদিন এই ‘অদৃশ্য বল’-এর অস্তিত্বের সত্যতা প্রমাণ করতে পারবে। ততদিন পর্যন্ত, একে বলা যায় বিজ্ঞানের নতুন রহস্য—যার পেছনে ছুটছে মানব জিজ্ঞাসার তীক্ষ্ণতম অনুসন্ধান।
