আজকাল ওয়েবডেস্ক: নেপালের প্রধান ব্যাংক চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান চায়না ব্যাংকনোট প্রিন্টিং অ্যান্ড মিন্টিং কর্পোরেশনকে একটি লেটার অফ ইন্টেন্ট পাঠিয়েছে। এই চিঠির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটিকে নেপালের ১,০০০ টাকার ৪৩০ মিলিয়ন নোট ডিজাইন, ছাপা ও সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।


এই প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬.৯৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এনআরবি জানিয়েছে, দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে চীনা কোম্পানিটি ছিল ‘সবচেয়ে কম দামে ও যথাযথভাবে যোগ্য’ বিডার।


গত তিন বছর ধরে চীনের এই প্রতিষ্ঠানটি ধারাবাহিকভাবে নেপালের ব্যাংকনোট ছাপার চুক্তি জিতছে। এপর্যন্ত সাতবার পরপর তারা দরপত্রে জয়ী হয়েছে। এই সময়ে প্রতিষ্ঠানটি নেপাল থেকে প্রায় ৬৩ মিলিয়ন ডলার আয় করবে, যার বিনিময়ে তারা প্রায় ২.৩৮ বিলিয়ন টুকরো নোট ছাপবে।
চায়না ব্যাংকনোট প্রিন্টিং অ্যান্ড মিন্টিং কর্পোরেশন প্রথমবার নেপালের মুদ্রা ছাপার দায়িত্ব পায় ২০১৬ সালে। এর আগে নেপালের মুদ্রা ছাপানো হত ভারতের নাসিকের সিকিউরিটি প্রেসে, ১৯৪৫ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত। সর্বশেষ, ভারতীয় কোনও কোম্পানি এই দায়িত্ব পেয়েছিল ২০২৩ সালের ১০ জানুয়ারি, যখন নেপাল রাষ্ট ব্যাংক ভারতের সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড মিন্টিং কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া লিমিটেডকে ৫০ টাকার ৩০০ মিলিয়ন নোট ছাপার চুক্তি দেয়, যার মূল্য ছিল প্রায় ৫.০৪৮ মিলিয়ন ডলার।


তবে নেপালের ভারত থেকে চীনমুখী হওয়ার কারণ শুধু খরচ নয়—এর পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক সংবেদনশীলতা। নেপালের নতুন নোটে এখন দেশের বিতর্কিত অঞ্চল লিপুলেখ, লিম্পিয়াধুরা ও কালাপানি-কে নেপালের মানচিত্রের অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছে। এই অঞ্চলগুলো নিয়ে ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধ রয়েছে। ফলে ভারতের কোনও প্রতিষ্ঠান দিয়ে সেই মানচিত্রসহ নোট ছাপানো রাজনৈতিকভাবে জটিল ও সংবেদনশীল হয়ে পড়ত।


অন্যদিকে, চীনা প্রতিষ্ঠানটি শুধু কম খরচে ও নিরাপদ সেবা দেয়নি, বরং আধুনিক সিকিউরিটি ফিচার ও উচ্চমানের ছাপার প্রযুক্তি প্রস্তাব করেছিল, যা নেপালকে চূড়ান্তভাবে চীনের দিকেই ঝুঁকিয়েছে। বর্তমানে নেপালের সব কটি ব্যাংকনোটই চীনে ছাপানো হচ্ছে।


নেপালই একমাত্র দেশ নয়, যে তার মুদ্রা ছাপাতে চীনকে বেছে নিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার আরও কয়েকটি দেশ—যেমন বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও আফগানিস্তান—তাদের মুদ্রা ছাপানোর কাজ চীনা প্রতিষ্ঠানকেই দিয়েছে।


চায়না ব্যাংকনোট প্রিন্টিং অ্যান্ড মিন্টিং কর্পোরেশন বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুদ্রা ছাপার প্রতিষ্ঠান। এটি শুধুমাত্র চীনের মুদ্রাই নয়, বরং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জন্যও উচ্চ নিরাপত্তাসম্পন্ন নথি ও নোট মুদ্রণ করে। বিশ্বের অন্য বড় সরকারি মুদ্রা ছাপার সংস্থাগুলির মধ্যে রয়েছে জাপানের ন্যাশনাল প্রিন্টিং ব্যুরো, রাশিয়ার গজনাক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যুরো অফ এনগ্রেভিং অ্যান্ড প্রিন্টিং।


নেপালের এই নতুন সিদ্ধান্ত শুধু অর্থনৈতিক সুবিধার প্রতিফলন নয়, বরং এটি দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক বাস্তবতারও একটি ইঙ্গিত—যেখানে নেপাল ধীরে ধীরে চীনের দিকে কৌশলগতভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, ভারতের ঐতিহ্যগত প্রভাব থেকে কিছুটা দূরে সরে।