আজকাল ওয়েবডেস্ক: জইশ কম্যান্ডার ও পুলওয়ামা হামলার মাস্টারমাইন্ড উমর ফারুকের স্ত্রী আফিরা বিবির সঙ্গে চিকিৎসক শাহিন সাঈদের যোগাযোগ রয়েছে। দিল্লিতে বিস্ফোরণের কয়েক সপ্তাহ আগেই আফিরা বিবি জইশ-ই-মহম্মদের মহিলা শাখা ‘জামাত-উল-মোমিনাত’-তে নাম লিখিয়ে ছিল। দিল্লির বিস্ফোরণ কাণ্ডের তদন্তে এই নয়া তথ্য উঠে এসেছে গোয়েন্দাদের হাতে।
তদন্তকারীরা আরও জানতে পেরেছেন যে, আফিরা বিবির জইশ প্রধান মাসুদ আজহারের ছোট বোন সাদিয়া আজহারের সঙ্গে কাজ করেছে এবং তাঁরা দু'জন শাহিন সাইদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন।
গোয়েন্দা সূত্রে খবর, শাহিন- ফরিদাবাদের আল ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেওয়ার আগে একাধিক মেডিক্যাল কলেজে কাজ করেছে। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত কানপুরে মেডিক্যাল কলেজে ডিপার্টমেন্ট অফ ফার্মাকোলজিতে কর্মরতা ছিল সে। তার পাসপোর্টে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, ২০১৬ থেকে ২০১৮, দু'বছর সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে ছিল সে। তবে শাহিনের আচরণ যে অদ্ভুত ছিল, তা ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন আল ফলাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই অধ্যাপক বলেছেন, 'শাহিন কোনও নিয়ম মানত না। কাউকে কিছু না জানিয়ে বেরিয়ে যেত ক্লাস থেকে। কলেজে অনেক লোক তার সঙ্গে দেখা করতে আসত। শাহিনের আচরণ প্রায়শই অদ্ভুত ছিল।' শাহিনের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের কাছেও অভিযোগ করা হয়েছিল বলেও জানান ওই অধ্যাপক।
তল্লাশিতে শাহিন সাঈদের গাড়িতে অ্যাসল্ট রাইফেল এবং গুলি পাওয়ার পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তদন্তে দেখা গিয়েছে যে শহিন সাঈদকে জামাত-উল-মোমিনাত-এর ভারত শাখা প্রতিষ্ঠা এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য উগ্রপন্থী মহিলাদের নিয়োগের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
শাহিন সাঈদের বিয়ে হয়েছিল ডা. হায়াত জাফরের সঙ্গে। কিন্তু ২০১২ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তাঁদের দু'টি সন্তান আছে, যারা ডা. জাফরের সঙ্গেই থাকে। শহিনের প্রাক্তন স্বামী জাফর বলেছেন যে, বিচ্ছেদের পর থেকে তিনি শাহিনের সঙ্গে আর যোগাযোগ করেননি। জাফর বলেছেন, "ধার্মিক নয়, বরং একজন উদার মানসিকার মানুষ ছিল শাহিন। আমাদের সম্বন্ধ করে বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু ২০১৫ সালে বিবাহবিচ্ছেদের পর থেকে শাহিনের সঙ্গে আমার কোনও যোগাযোগ হয়নি। আমাদের মধ্যে কোনও বিরোধ ছিল না। কিন্তু শাহিন ইউরোপ বা অস্ট্রেলিয়ায় চলে যেতে চেয়েছিল। সেখানে গেলে আরও কর্মসংস্থানের সুযোগ পাওয়া যেত এবং আমাদের ভবিষ্যতের জন্য ভাল হত একথা চিন্তা করেছিল শাহিন। কিন্তু আমি ভারত ছেড়ে যেতে রাজি ছিলাম না। এরপরই আমরা আলাদা হয়ে যাই। দুই সন্তানই আমার কাছে থাকে এখন। ওদের মায়ের সম্পর্কে খবরে কী বলা হচ্ছে, সেটা আমি ওদের জানাইনি।"
উল্লেখ্য, আফিরা বিবির স্বামী উমর ফারুক ছিল জইশের শীর্ষ কমান্ডার এবং পুলওয়ামা হামলার মূল ষড়যন্ত্রকারী। ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি একটি বিস্ফোরক ভর্তি গাড়ি কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ বাহিনীর (সিআরপিএফ) একটি কনভয়কে ধাক্কা দেয়, যার ফলে ৪০ জন জওয়ান নিহত হন। ২০১৯ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের দাচিগাম জাতীয় উদ্যান এলাকায় একটি এনকাউন্টারে সে নিহত হয়।
গোয়েন্দাদের দাবি, লখনউয়ের বাসিন্দা ডা. শাহিন সাঈদের গ্রেফতারের পর দিল্লির লালকেল্লা বিস্ফোরণের সঙ্গে জইশে মহিলা ব্রিগেডের যোগসূত্র পাওয়া গিয়েছে। ভারতে জামাত-উন-মোমিনাত-এর সদস্য শাহিনকে ভারতের সংগঠনের স্থানীয় ইউনিট প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। হরিয়ানার ফরিদাবাদের আল ফালাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র চিকিৎসক শাহিন। তার গাড়ি থেকেই প্রচুর পরিমাণে বিস্ফোরক উদ্ধার হয়।
