আজকাল ওয়েবডেস্ক:  নাসার একাধিক মহাকাশযান প্রথমবারের মতো পৃথিবীর কাছেই চিহ্নিত করেছে এক বিরল ও রহস্যময় ঘটনা। ম্যাগনেটিক সুইচব্যাক, অর্থাৎ পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের ধারায় হঠাৎ জিগজ্যাগ ভাবের বাঁক। এতদিন পর্যন্ত এই ধরনের বিকৃতি কেবল সূর্যের কাছে পার্কার সোলার প্রোব দেখে এসেছিল। নতুন আবিষ্কার জানিয়ে দিল এই অদ্ভুত চৌম্বকীয় পাক পৃথিবীর সুরক্ষা-বলয়ের ধারেও তৈরি হয়।


এই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব নিউ হ্যাম্পশায়ারের পদার্থবিজ্ঞানী ই. ও. ম্যাকডুগাল। তাঁর গবেষণার মূল বিষয়—ম্যাগনেটিক সুইচব্যাক, চৌম্বক পুনঃসংযোগ (Magnetic Reconnection) এবং মহাকাশের প্লাজমার আচরণ।


ম্যাগনেটোস্ফিয়ারের সীমানায় আবিষ্কার
পৃথিবীকে ঘিরে থাকা সুরক্ষা-বলয় ম্যাগনেটোস্ফিয়ার সূর্যের তীব্র চার্জযুক্ত কণাকে প্রতিহত করে আমাদের রক্ষা করে। এই সুরক্ষার ঠিক বাইরের অশান্ত অঞ্চল—ম্যাগনেটোশিথ—যেখানে সূর্য বায়ু পৃথিবীর চৌম্বক ঢাল ঘিরে প্রবাহিত হয়। সেখানেই নাসার চার-যানবিশিষ্ট ম্যাগনেটোস্ফেরিক মাল্টিস্কেল মিশন একটি সুস্পষ্ট সুইচব্যাকের চিহ্ন ধরে।


MMS অত্যন্ত দ্রুত সেন্সরযুক্ত যন্ত্র নিয়ে তৈরি যা মিলিসেকেন্ডের পরিবর্তনও সঠিকভাবে রেকর্ড করতে পারে। চারটি মহাকাশযান একসঙ্গে গুচ্ছ আকারে উড়ে ত্রিমাত্রিকভাবে ডেটা সংগ্রহ করে, যা পুনঃসংযোগের প্রকৃত প্রক্রিয়াকে ‘লাইভ’ দেখার সুযোগ দেয়।


সুইচব্যাক কীভাবে তৈরি হয়
পার্কার সোলার প্রোবের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে—সুইচব্যাক সূর্যের কাছে খুব সাধারণ, কিন্তু এর উৎস নিয়ে বিতর্ক ছিল। নাসার মতে, সুইচব্যাক হল সূর্য বায়ুর ভেতরে চলা এমন এক বিকৃতি, যা চৌম্বক রেখাকে একদিকে বেঁকিয়ে পরে আবার মূল অবস্থায় ফিরিয়ে আনে।


পৃথিবীর কাছে ধরা পড়া ঘটনাতেও দেখা গেল—একটি পাকানো প্লাজমার অংশ হঠাৎ ঘুরে গিয়ে আবার দিক পরিবর্তন করে আগের অবস্থায় ফিরে আসে। এর ভেতরে থাকা উচ্চ-শক্তির ইলেকট্রন দেখিয়েছে যে এই পদার্থের উৎস পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের অভ্যন্তরেই।


সেই স্থানে একটি কারেন্ট শিট চিহ্নিত হয়—এক পাতলা স্তর যেখানে বৈদ্যুতিক প্রবাহ অত্যন্ত ঘন। সেখানেই সক্রিয়ভাবে ম্যাগনেটিক রিকনেকশন চলছিল। গবেষকেরা আরও জানান, ওই অংশে গাইড ফিল্ড নামে পরিচিত চৌম্বক উপাদান ছিল, যার শক্তি ছিল ১.২। সুইচব্যাক শ্রেণিতে ফেলতে তাঁরা ব্যবহার করেন Z প্যারামিটার, যা ০.৫-এর বেশি ছিল—এটাই নিশ্চিত করে যে এটি প্রকৃত সুইচব্যাক।


কেন এই টুইস্ট গুরুত্বপূর্ণ
এই ধরনের পাক সূর্যের প্লাজমা ও পৃথিবীর প্লাজমাকে মিশিয়ে দিতে পারে। এর ফলে উচ্চ বায়ুমণ্ডলে শক্তির প্রবাহ বদলে যায়, যা বাঁধা সৃষ্টি করতে পারে স্যাটেলাইটের কার্যকারিতায়, রেডিও যোগাযোগে, নেভিগেশন সিস্টেমে, এমনকি পৃথিবীর বিদ্যুৎ গ্রিডেও।


একই ধরনের আরও ঘটনা ধরতে চায়, যাতে জানা যায় এই সুইচব্যাক কত ঘনঘন তৈরি হয়। কোন পরিস্থিতিতে এগুলির সৃষ্টি হয়। সূর্য বায়ুর অশান্তি নাকি চৌম্বক পুনঃসংযোগ—কোনটি বেশি দায়ী।
মডেল নির্মাতারা এই ডেটা ব্যবহার করে আরও নির্ভুল মহাকাশ আবহাওয়া মডেল তৈরি করতে পারবেন, যা ভবিষ্যতে সৌরঝড়ের প্রভাব পূর্বাভাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।


এই আবিষ্কার ইঙ্গিত দিচ্ছে—সূর্যের কাছে দেখা সুইচব্যাক এবং পৃথিবীর কাছের সুইচব্যাক হয়তো একই ধরনের প্রক্রিয়ায় তৈরি হয়। মহাকাশ-প্লাজমার আচরণ বুঝতে এটি এক বড় অগ্রগতি।