ফের ভাইরাল হয়েছে বাবা ভাঙ্গার নাম। সোশ্যাল মিডিয়ায় উঠছে দাবি—২০২৬ সালে নাকি তিনি ইউরোপে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। কিন্তু আসল প্রশ্ন হল, কতটা সত্য এই দাবি? কতটা নথিবদ্ধ তথ্য এবং কতটাই বা ইন্টারনেট-জন্মানো কল্পকাহিনি? গবেষক, নথিভুক্ত উৎস এবং বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য মিলিয়ে বিষয়টি বিশ্লেষণ করলেই সামনে আসে ভিন্ন চিত্র।
2
11
অনেক অনলাইন রিপোর্ট ও সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে দাবি করা হচ্ছে যে বাবা ভাঙ্গা নাকি ২০২৫ বা ২০২৬ সালে ইউরোপে ভয়াবহ বিপর্যয়ের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। বলা হচ্ছে, ইউরোপ ধ্বংস হবে, জনসংখ্যা মারাত্মকভাবে কমে যাবে বা ইউরোপ একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবেই হারিয়ে যাবে। কোথাও বলা হচ্ছে, “ইউরোপ প্রায় শূন্য হয়ে যাবে”, আবার কোথাও—“পূর্বের যুদ্ধ পশ্চিমকে ধ্বংস করবে।”
3
11
বাবা ভাঙ্গার ভবিষ্যদ্বাণীর আসল নথি বা প্রমাণ অত্যন্ত অস্পষ্ট। তিনি মুখে অসংখ্য কথা বলেছিলেন, কিন্তু তাঁর কোনও সম্পূর্ণ, সরকারি, যাচাইযোগ্য লিখিত রেকর্ড নেই। উইকিপিডিয়াতেও উল্লেখ আছে—তাঁর নামে প্রচলিত বহু ভবিষ্যদ্বাণী সত্যিকার অর্থে তাঁর বলে নিশ্চিত করা যায় না।
4
11
ইউরোপ “ধ্বংস হয়ে যাবে”—এই ধারণাটি মূলত ইন্টারনেট-ভিত্তিক ব্যাখ্যা, জনপ্রিয় সারসংক্ষেপ, নস্ত্রাদামুসের মতো অন্যান্য ভবিষ্যদ্বক্তাদের সঙ্গে তুলনা, এবং সোশ্যাল মিডিয়া বাড়াবাড়ির ফল।
5
11
কেউ বলছেন বিপর্যয় আসবে ২০২৫ সালে, আবার কেউ ২০২৬ সালকে উল্লেখ করছেন। এক রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল, ইউরোপে ভয়াবহ সংঘাত নাকি ২০২৫ সালের মধ্যে জনসংখ্যাকে ধ্বংস করে দেবে। সাম্প্রতিক পোস্টগুলো আবার বলছে, ২০২৬ সালে নাকি বড় বিপর্যয় নেমে আসবে। তার কোনওটাই নিশ্চিত উৎসভিত্তিক নয়।
6
11
যেসব ‘ভবিষ্যদ্বাণী’ ছড়ানো হচ্ছে, তার মূল বক্তব্যগুলো হল, ইউরোপে বৃহৎ যুদ্ধ বা অভ্যন্তরীণ সংঘাত। পরিকাঠামো ধ্বংস, জনসংখ্যার ব্যাপক পতন। ইউরোপ দুর্বল হয়ে পড়বে বা বিশ্ব শক্তি হিসেবে তার স্থান হারাবে। ইউরোপ অন্য কোনও শক্তি বা মতাদর্শের অধীনে চলে যাবে।
এর কোনও সূত্রই প্রামাণিক নয়।
7
11
কেন দাবিটি এত ছড়াচ্ছে? ইউরোপ বিশ্ব রাজনীতির কেন্দ্র—তাই যেকোনও ভবিষ্যদ্বাণী সহজেই ভাইরাল হয়। প্রলয়-ধর্মী ভবিষ্যদ্বাণী সোশ্যাল মিডিয়ায় দ্রুত ছড়ায়। বাবা ভাঙ্গার “অতীতে নাকি সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী”–এর জনপ্রিয়তা এসব দাবিকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলে।
8
11
বিশেষজ্ঞ ও সংশয়বাদীরা কী বলছেন? কোনও আসল উৎস বা তারিখ পাওয়া যায়নি—এটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। কথিত ভবিষ্যদ্বাণী এতটাই অস্পষ্ট যে ইউরোপের যেকোনও সংকটের সঙ্গে তা জুড়ে দেওয়া যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব গল্প মানুষের ভয় ও অনুমানের প্রতিফলন, ভবিষ্যদ্বাণী নয়।
9
11
যদি সত্যিই ইউরোপে ২০২৫/২৬ সালে “প্রলয়” ঘটতে চলত, তবে তা বিশ্ব অর্থনীতি, রাজনীতি ও মানবিক পরিস্থিতিকে নাড়িয়ে দিত। কিন্তু যেহেতু এ বিষয়ে কোনও নির্ভরযোগ্য প্রমাণ নেই।
10
11
তাই এটিকে বাস্তব ভবিষ্যদ্বাণী নয়, বরং প্রতীকী সতর্কতা হিসেবে দেখা উচিত। ইউরোপের বাস্তব রাজনৈতিক সংকট, জনসংখ্যাগত পরিবর্তন, যুদ্ধ পরিস্থিতি ও জলবায়ু ঝুঁকির দিকে নজর দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। কোনও ভবিষ্যদ্বাণী শেয়ার করার আগে তার উৎস যাচাই করাটা জরুরি।
11
11
২০২৬ সালে ইউরোপ “ধ্বংস” হবে—এমন দাবি বাবা ভাঙ্গার নামে ব্যাপক প্রচার পেলেও এটি প্রমাণ-নির্ভর নয়। তারিখ, ঘটনা এবং প্রমাণ—সব ক্ষেত্রেই অস্পষ্টতা রয়েছে। ফলে এটিকে সরাসরি ভবিষ্যদ্বাণী না ধরে, বরং একটি অতিরঞ্জিত ইন্টারনেট-গল্প হিসেবে বিবেচনা করাই যুক্তিযুক্ত।