আজকাল ওয়েবডেস্ক: বাংলার কথা এক নাগাড়ে তুলে ধরেছিলেন তিনি। কেলগ কলেজে তখন তৈরি হচ্ছিল ইতিহাস। আর ঠিক সেই মুহূর্তেই হঠাৎই ধেয়ে এল তীব্র কটূক্তি। যখন মুখ্যমন্ত্রী বলছেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ঐক্যের কথা, তখন প্রতিবাদের নামে দাঙ্গাবাজদের চিৎকার ভেসে এল, 'আপনি কি হিন্দু?' আর ঠিক সেই মুহূর্তেই মুখ্যমন্ত্রী চটলেন না মোটে।

 মমতা ওই সভাতেও ভোলেননি গণতন্ত্রের প্রাথমিক শর্ত। তিনি বারবার বলেন, গণতন্ত্রে সবাই কথা বলবে, সবাই প্রশ্ন করবে, ওদের বলতে দিন। ইদানিং রাজনীতিতে যা দুর্লভ, সেই সৌজন্য দেখিয়ে প্রতিটি প্রশ্নের সুস্থ জবাব দিতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু প্রতিবাদীরা এসেছিল সভায় গোলমাল পাকাতে, শুনতে নয়। তাই চেঁচামেচি হল দেদার। শেষে মুখ্যমন্ত্রী সবিনয়ে বললেন, আপনারা দয়া করে বসুন। সব মিলিয়ে সৌজন্য আর আত্মবিশ্বাসের নজির তিনি তৈরি করলেন। তিনি ধৈর্য না হারালেও ততক্ষণে ধৈর্য হারিয়েছেন দেশের সফলতম মুখ্যমন্ত্রীর কথা শুনতে আসা জনতা। জনতা যেভাবে পর পর নির্বাচনে ঘাড় ধাক্কা দিয়েছে এই রাজ্যের বিরোধীদের, সেই কায়দায় অর্ধচন্দ্র জুটল কেলগের মমতা বিরোধীদেরও। আনুষ্ঠানিক ভাবে আয়োজকদের তরফ থেকে ক্ষমাও চাওয়া হল আলোচনায় বাধা পড়ার জন্য। কিন্তু এত প্রতিকূলতার মধ্যেও যেন আত্মবিশ্বাসের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ দেখা গেল মুখ্যমন্ত্রীর বাচনে। তিনি টানা কথা বলে গেলেন, তুলে ধরলেন তাঁর বর্ণময় কর্মজীবনের নানা দিক। শেষে উত্তর দিলেন একাধিক প্রশ্নেরও। বারবার তাঁর কথায় হাততালিতে ভরে উঠল সভার ঘর। মমতা বুঝিয়ে দিলেন, প্রতিকূলতায় তিনি আরও বেশি শাণিত তরবারি, আরও ঝকঝকে। দশকের পর দশক কেটেছে, কিন্তু সেই ধার কমেনি মোটে। 

কেলগ কলেজের ঘটনায় দেশ, বিদেশে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। সোশ্যাল মিডিয়ায় বাম রামের অসভ্যতা নিয়ে চূড়ান্ত বিরক্তি প্রকাশ করেছেন অনেকেই। এরকম যে হবে, সেটা বুঝতে পেরেছিলেন মমতা। সেই কারণে সফরের আগেই সাংবাদিক বৈঠকে এই নিয়ে জানিয়েছিলেন। প্রস্তুত ছিলেন অন্দরে। তাই কুরুচিকর আক্রমণের উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে কড়া গলায় বলতে পারলেন, দেশে ফিরে নিজেদের শূন্য হয়ে যাওয়া দলকে শক্তি দিন, এখানে না। যতবার সংকটের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, ততবার তিনি ঝলসে উঠেছেন। কিন্তু গতকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবারের পরিস্থিতি ছিল একেবারে অন্য। মমতা সেক্ষেত্রেও বুঝিয়ে দিলেন, তাঁর লড়াইয়ের শক্তি এটুকু কমেনি। আর এটাও সঙ্গে সঙ্গে বুঝে গেল মানুষ, বাংলায় মমতার কাছাকাছি পৌঁছনোর ক্ষমতা কোনও রাজনীতিকের নেই।