আজকাল ওয়েবডেস্ক: মহাভূমিকম্পের সতর্কতা জারি করল জাপানের আবহাওয়া সংস্থা। দেশটিতে শীঘ্রই আঘাত হানতে পারে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জানিয়েছে সংস্থাটি। সোমবার জাপানের প্রধান হোনশু দ্বীপের উত্তরতম প্রিফেকচার আওমোরির উপকূলে প্রশান্ত মহাসাগরে ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। তারপরেই মঙ্গলবার এই সতর্কতা জারি করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলের কাছাকাছি বসবাসকারীদের এই সপ্তাহ জুড়ে সতর্ক থাকতে বলেছে। তাদেরও সরে যেতে হতে পারে এবং স্বল্প সময়ের নোটিশে তাদের বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।

মহাভূমিকম্প হল ৮.০ বা তার বেশি মাত্রার একটি ভূমিকম্প। প্রশাসন সতর্ক করেছে যে এটি জাপানের প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল জুড়ে বড় সুনামির সৃষ্টি করতে পারে। যা হোক্কাইডো থেকে চিবা পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। ২০২২ সালে সতর্কতা ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর এটিই প্রথম সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

যে কোনও পরিস্থিতির জন্য জনগণকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। তাদেরকে নিম্নলিখিত ব্যবহারিক পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে- সুরক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছনোর জন্য পথগুলিকে পর্যালোচনা করা, জরুরি সরবরাহ সংগ্রহ করা, বাড়ির ভিতরে ভারী জিনিসপত্র সুরক্ষিত করা এবং নিশ্চিত করা যে তাদের কাছে পর্যাপ্ত খাবার, জল এবং কয়েক দিনের জন্য বহনযোগ্য স্যানিটেশন ব্যবস্থা রয়েছে।

সোমবার দেশটিতে ৭.৬ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এর ফলে কমপক্ষে ৩৩ জন আহত হয়েছেন এবং সুনামির সতর্কতা জারি করা হয়েছে। জাপান আবহাওয়া সংস্থা জানিয়েছে, বেশ কয়েকটি অঞ্চলে ৭ থেকে ২৭ ইঞ্চি উঁচু ঢেউয়ের খবর পাওয়া গিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা ১০ ফুট পর্যন্ত উঁচু সুনামির ঢেউয়ের পূর্বাভাস দেওয়ায় উপকূলের বাসিন্দাদের উঁচু জায়গায় সরে যেতে বলা হয়েছে। সরকার এখনও সুনামির ঢেউ এবং ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়ন করছে। 

সোমবারের ভূমিকম্পের পর প্রায় ৯০ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী সানে তাকাইচি বলেছেন, “আমরা মানুষের জীবনকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি এবং ক্ষয়ক্ষতি রোধে যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।” 

তিনি নাগরিকদের আফটারশকের জন্য প্রস্তুত থাকার এবং দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “দয়া করে প্রস্তুত থাকুন যাতে আপনি কম্পন অনুভব করার সঙ্গে সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে পারেন।” কর্তৃপক্ষ গোটা সপ্তাহ ধরে শক্তিশালী আফটারশকের পূর্বাভাস দিয়েছে।

গত এপ্রিলে মহাকম্পের সতর্কতা জারি করেছিল জাপান সরকার। সে দেশের সরকারি রিপোর্ট অনুযায়ী, নানকাই ভূতাত্ত্বিক খাত বরাবর ‘মহাকম্প’-এ কাঁপতে পারে জাপান। এর ফলে রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা হতে পারে ৮.০ বা তারও বেশি। এর ফলে সুনামির সম্ভাবনাও রয়েছে। প্রাণ হারাতে পারেন প্রায় তিন লক্ষ মানুষ। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হতে পারে প্রায় দুই ট্রিলিয়ন ডলার।

গত ১,৪০০ বছর ধরে, নানকাই খাতে প্রতি ১০০ থেকে ২০০ বছরে একবার মহাভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এর মধ্যে সর্বশেষটি ঘটেছিল ১৯৪৬ সালে। ২০১২-১৩ সালেও এই সম্ভাব্য ‘মহাকম্প’ নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল জাপানের সরকার। তখন সম্ভাব্য মৃত্যু সংখ্যা তিন লক্ষ ২৩ হাজার জন।