আজকাল ওয়েবডেস্ক: ইজরায়েলে বাড়ছে সামরিক সেবার বিরুদ্ধে তরুণদের প্রতিবাদ। গাজার বিরুদ্ধে ইজরায়েলি সেনাবাহিনীর সহিংস অভিযানে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে সেনা প্রশিক্ষণ শিবিরে যোগ না দিয়ে জেল বেছে নিচ্ছেন অনেকেই। ১৮ বছর বয়সী তেল আবিবের বাসিন্দা সোল বেহার চালিক এমনই এক তরুণ, যিনি ২০২৩ সালের ২৭ নভেম্বর সেনাবাহিনীর ডাকে সাড়া না দিয়ে জেলে যান। তাঁর কথায়, ইজরায়েলে জন্ম থেকেই ছেলেমেয়েরা সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার প্রত্যাশায় বেড়ে ওঠে। ১৬ বছর বয়সেই তারা ড্রাফট নোটিশ পেতে শুরু করে এবং সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ইউনিটে জায়গা পাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে। কিন্তু বেহার চালিক এই প্রথাকে অমানবিক বলেই মনে করেন। Truthout-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, “১৮ বছর বয়সে যখন চূড়ান্ত ড্রাফট নোটিশ আসে, তখন সবাই জানে কী ইউনিটে যেতে হবে। কিন্তু আমি জানি, আমি হয়তো জেলেই যাচ্ছি।”

ইজরায়েলে সামরিক সেবা বাধ্যতামূলক হলেও, বাস্তবে মোট নাগরিকের প্রায় ৫০ শতাংশই সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। প্যালেস্তাইন নাগরিক এবং ধর্মভিত্তিক ‘আল্ট্রা-অর্থোডক্স’ ইহুদিরা এই সেবায় বাধ্য নন। অনেক ইজরায়েলি আবার চিকিৎসাজনিত ছাড় বা মানসিক কারণে সেবা এড়িয়ে চলেন। কিছু যুবক মাসব্যাপী জেল খাটলেও বহু বছর সেনাবাহিনীতে কাজ করতে রাজি নন। সামরিক সেবা থেকে বিরত থাকা বা ‘refusers’ হিসেবে পরিচিত এই প্রতিবাদীদের অনেকেই সরাসরি রাজনৈতিক অবস্থান প্রকাশ করতে চান না। কারণ, শুধু দীর্ঘ জেল নয়, সমাজের ঘৃণাও তাঁদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। তবুও, Mesarvot ও Yesh Gvul-এর মতো সংগঠনের সহায়তায় অনেকে প্রকাশ্যে ‘না’ বলছেন।

আরও পড়ুন: ২০০৬ মুম্বই ট্রেন বিস্ফোরণ মামলা: ১২ জনের বম্বে হাইকোর্টের বেকসুর খালাস স্থগিত করল সুপ্রিম কোর্ট, তবে পুনরায় গ্রেপ্তারের নির্দেশ নয়

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের পর, কিছু ইজরায়েলি রিজার্ভ সদস্য যুদ্ধক্ষেত্রে যোগ দিতে আগ্রহী হলেও পরে তাঁদের অনেকেই বুঝতে পারেন, তাঁরা আসলে প্রতিশোধমূলক অভিযানে অংশ নিচ্ছেন। চিকিৎসক ইউভাল গ্রিন জানান, গাজায় মোতায়েন হওয়ার পর তাঁকে একটি প্যালেস্তাইন বাড়ি জ্বালিয়ে দিতে বলা হয়। তিনি নির্দেশ অমান্য করেন এবং গাজা ত্যাগ করেন। এই হত্যাযজ্ঞ থামাতে প্যালেস্তাইনের স্বাস্থ্যমন্ত্রকের মতে ৪৩,০০০-এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ১৬,০০০ শিশু। জাতিসংঘের মতে, মৃতদের ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু। The Guardian অনুমান করছে, এই গণহত্যার প্রকৃত সংখ্যা ৩.৩ লক্ষ ছাড়িয়ে যেতে পারে।

এমন পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন নতুন মাত্রা পেয়েছে। Yesh Gvul-এর মুখপাত্র ইশাই মেনুচিন জানান, আগে লেবাননে আক্রমণের সময় ৩,০০০ জন রিজার্ভ সদস্য পুনরায় মোতায়েন হতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। এবার যদিও সংখ্যায় কম, তবুও আন্দোলনের ভিত্তি আগের চেয়ে বিস্তৃত। বহু বন্দি জানান, সামরিক জেলগুলো এখন ‘deserters’-দের ভরে গেছে। New Profile নামের একটি বামপন্থী সংগঠনের কর্মী বলেন, “যুদ্ধ চালাতে সেনা লাগে। যদি কেউ না যায়, তাহলে যুদ্ধও সম্ভব নয়।” এই অবস্থানকেই তিনি ইজরায়েলি নাগরিকদের সবচেয়ে ‘বাস্তববাদী প্রতিবাদ’ বলে আখ্যা দেন। বেহার চালিক জানিয়েছেন, দুই বছর আগেই তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ৭ অক্টোবরের পর পরিস্থিতি আরো পরিষ্কার হয়েছে। তিনি বলেন, “আমার অনেক বন্ধুই এখন যুদ্ধ করছে। তারা যা করছে, তা শুধু অন্যদের নয়, নিজেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিছু জায়গায় থেমে যেতে হয়, কিছু জায়গায় দাঁড়িয়ে বলতে হয়—‘আমি করব না"।