আজকাল ওয়েবডেস্ক: ইরানের পার্লামেন্ট দেশটির মুদ্রা রিয়াল থেকে চারটি শূন্য অপসারণের জন্য একটি ঐতিহাসিক বিল পাস করেছে। এই পদক্ষেপের লক্ষ্য আর্থিক লেনদেন সহজ করা এবং অর্থনীতিতে কিছুটা স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। নতুন নীতিতে পুরনো  ১০,০০০ রিয়ালকে এক নতুন রিয়াল সমতুল্য করা হবে। যদিও এটি একটি সাধারণ সংখ্যাগত সমন্বয় বলে মনে হতে পারে, কিন্তু এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে রয়েছে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এবং অর্থনৈতিক দুর্দশার সঙ্গে দেশটির সংগ্রাম।

ইরান কেন তার মুদ্রা থেকে চারটি শূন্য বাদ দিচ্ছে?

১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে ইরানি রিয়াল উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। বছরের পর বছর ধরে মুদ্রাটির মূল্য উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। এক মার্কিন ডলার এখন প্রায় ১,১৫০,০০০ রিয়ালের সমান। এর ফলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে যেখানে প্রতিদিনের লেনদেনের জন্যও প্রচুর পরিমাণে অর্থের প্রয়োজন হয়। সাধারণ মানুষকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে লক্ষ লক্ষ রিয়াল গুনতে হচ্ছে। উচ্চ মূল্যের নোটগুলি দেশের অর্থনৈতিক সংগ্রামের প্রতীক হয়ে উঠেছে।

আরও পড়ুন: ‘তুমি ঠিক আছো তো?’ জিজ্ঞেস করতেই বিকট শব্দে কেঁপে উঠল চারিদিক, মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন ভারতীয় মোটেল ম্যানেজার

মুদ্রাস্ফীতি এবং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা

ইরানের অর্থনীতি উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির হারের সঙ্গেও লড়াই করছে। দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতির হার প্রায়শই ৩৫ শতাংশের উপরে থাকে। দেশটি তেল রপ্তানির উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। কিন্তু মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে তেলের গ্রাহক কমে গিয়েছে। চীন ছাড়া তেল রপ্তানির কেউ নেই। এর ফলে দেশটির অর্থব্যবস্থার উপর বিধ্বংসী প্রভাব পড়েছে। যার ফলে রিয়ালের মূল্য তীব্রভাবে হ্রাস পেয়েছে। আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার (আইএমএফ)-ও ইরানের অর্থনীতির চ্যালেঞ্জগুলি তুলে ধরেছে। যার মধ্যে রয়েছে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এবং তেল রপ্তানি হ্রাস।

শূন্য অপসারণের প্রভাব কী হবে?

ইরান সরকারের মতে, মুদ্রা থেকে চারটি শূন্য অপসারণের ফলে রিয়ালের মূল্যের কোনও পরিবর্তন হবে না বরং, লেনদেন সহজ হবে এবং আর্থিক লেনদেন পরিচালনা করা সহজ হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের এই পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত হতে দুই বছর সময় পাবে। এরপর তিন বছরের একটি রূপান্তরকাল থাকবে যেই সময় পুরনো এবং নতুন উভয় নোটই প্রচলিত থাকবে। এই পদক্ষেপ আর্থিক লেনদেনের জটিলতা কমাবে এবং মানুষের দৈনন্দিন কেনাকাটা সহজ করে তুলবে বলে আশা করা হচ্ছে।

অতীতে বেশ কয়েকটি দেশ একই রকম মুদ্রা সংস্কার বাস্তবায়ন করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ভেনেজুয়েলা ২০১৮ সালে এবং আবার ২০২১ সালে তার মুদ্রা থেকে পাঁচটি শূন্য অপসারণ করেছে, কিন্তু মুদ্রাস্ফীতি এখনও একটি চ্যালেঞ্জ। জিম্বাবুয়েও ২০০০ সালে তার মুদ্রা থেকে শূন্য অপসারণ করেছিল, কিন্তু অর্থনীতি এখনও উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে লড়াই করছে। অন্যদিকে, তুরস্ক ২০০৫ সালে তার মুদ্রা থেকে ছয়টি শূন্য সফলভাবে অপসারণ করেছে, যা অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করতে এবং মুদ্রাস্ফীতি কমাতে সাহায্য করেছে। ১৯৯৪ সালে রিয়েল প্ল্যানের সংস্কারে ফলে ব্রাজিলের মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এনেছিল এবং অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করেছিল।

জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া কী?

যদিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ইরান সরকারের এই সিদ্ধান্তের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। একজন ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, “ইরানি রিয়াল কাগজের চেয়ে সস্তা। প্রতি ডলারে মূল্য ১০ লক্ষ রিয়াল। এ দিকে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক শূন্য অপসারণের পরিকল্পনা করছে।” অন্য একজন ব্যবহারকারী ব্যঙ্গ করেছেন, “রিয়ালকে ‘ইরানিয় মিস্টে’ পরিবর্তন করুন।” এই মন্তব্যগুলি দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রতি ব্যাপক হতাশাকে প্রতিফলিত করে।

ইরানের মুদ্রা সংস্কারের সাফল্য নির্ভর করবে সরকারের উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এবং বিদেশী বিনিয়োগের অভাবের মতো অন্তর্নিহিত অর্থনৈতিক সমস্যাগুলি মোকাবিলা করার ক্ষমতার উপর। মুদ্রা থেকে শূন্য অপসারণ একটি আভাসজনক পরিবর্তন যা সাময়িক স্বস্তি প্রদান করতে পারে কিন্তু অর্থনীতির মৌলিক চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলা করবে না। একজন বিশেষজ্ঞ উল্লেখ করেছেন, “৮০ শতাংশ মানুষ এখন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের উপর বেশি ব্যয় করছেন এবং তাদের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে।”