আজকাল ওয়েবডেস্ক: দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণ চুংচেওং প্রদেশে বৃহস্পতিবার ভয়াবহ বৃষ্টিপাতে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন এবং ১,০০০-র বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র ও নিরাপত্তা মন্ত্রক। আবহাওয়া অফিস জানায়, সিওসান এলাকায় প্রতি ঘণ্টায় ১১৪.৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে—যা গত ১২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
এই বৃষ্টিপাতকে “শতাব্দীতে একবার ঘটে এমন ঘটনা” বলে অভিহিত করেছে কোরিয়ান আবহাওয়া সংস্থা। তারা জানিয়েছে, উত্তরের প্রশান্ত মহাসাগরীয় উচ্চচাপ বলয়ের প্রান্ত ঘেঁষে উষ্ণ ও আর্দ্র বাতাস প্রবাহিত হওয়ায় বায়ুমণ্ডলে চরম অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে এবং তার ফলেই এই ভয়াবহ বর্ষণের সৃষ্টি।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বিকেল ৪টার মধ্যে তিনজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে মন্ত্রক জানায়, মৃতরা সবাই দক্ষিণ চুংচেওং প্রদেশের বাসিন্দা। একজনকে একটি ডুবে যাওয়া গাড়ির ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়, অপর এক প্রবীণ ব্যক্তি বন্যার জলে ভেসে যান, এবং তৃতীয়জনের মৃত্যু হয় একটি প্লাবিত বেসমেন্ট অ্যাপার্টমেন্টে, যেখানে তার ছেলে তার নিখোঁজ হওয়ার খবর মিলেছিল।
সিওসান শহরে স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শহরের বাজার, অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স, পার্কিং লট—সবই জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। বহু গাড়ি সম্পূর্ণভাবে জল ডুবে গেছে। সেখানকার বাসিন্দারা ক্ষতির পরিমাণে হতবাক। এক স্থানীয় নাইটক্লাব মালিক চোই হি-জিন বলেন, “জল ক্লাবের পুরো ভেতরটা ভরে ফেলেছে। সোফা, ফ্রিজ, আসবাব, এমনকি কম্পিউটারও ভেসে বেড়াচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, যেন পুরো পৃথিবীটাই ভেঙে পড়েছে।”
আরও পড়ুন: হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকদের বেআইনি ঘোষণায় চাঞ্চল্য! ৮ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিলেন আন্দোলনকারীরা
এদিকে সিওসানে বৃহস্পতিবার সকাল ১০:৩০ পর্যন্ত প্রায় ৪৪০ মিলিমিটার (প্রায় ১৭.৩ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা ওই অঞ্চলের বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের প্রায় ৩৫ শতাংশ। শহরের বাসিন্দা ৫০ বছর বয়সী কিম মিন-সেও বলেন, “জল অনেক গভীর, এবং কাদা এতটাই ঠেসে ঢুকেছে যে আমি পাঁচ ঘণ্টা ধরে জল বের করার চেষ্টা করছি। এখনো শেষ করতে পারিনি।”
হংসেওং কাউন্টিতে নিকটবর্তী একটি স্রোতস্বিনীর প্লাবনে বৃহস্পতিবার ভোরে জরুরি ভিত্তিতে বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে বলা হয়। পাশাপাশি কাউন্টির অনেক স্কুল ও নার্সারি বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রসঙ্গত, দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রতি বছর গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বর্ষাকালে বন্যা হয়, তবে দেশটি সাধারণত ভালো প্রস্তুত থাকে এবং মৃত্যুর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম থাকে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বব্যাপী এই ধরনের চরম আবহাওয়ার ঘটনা আরও ঘন ও তীব্র হচ্ছে।
২০২২ সালেও দক্ষিণ কোরিয়ায় রেকর্ড বৃষ্টিপাতে অন্তত ১১ জন মারা যান, যার মধ্যে তিনজন ‘প্যারাসাইট’ চলচ্চিত্রে দেখানো ধরণের একটি বেসমেন্ট অ্যাপার্টমেন্টে আটকা পড়ে মৃত্যুর কবলে করেন। সরকার সেসময় জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করেছিল। এবারেও বিশেষজ্ঞরা একই সতর্কবার্তা দিচ্ছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষ আবারও ভয়ংকর বাস্তবতার মুখোমুখি।
