Zubeen Gargs secret message through Victor Banerjee in last film Roi Roi Binale
শেষ ছবিতে গোপন ইঙ্গিত! ‘রই রই বিনালে’-য় ভিক্টরের মাধ্যমে কী বার্তা রেখে গেলেন জুবিন
নিজস্ব সংবাদদাতা
৬ নভেম্বর ২০২৫ ১৪ : ৩৫
শেয়ার করুন
1
12
অসমের বিদ্রোহী রকস্টার জুবিন গর্গ যেমন প্রতিবাদের সরব ছিলেন, আবার নীরবে সাহায্যের হাতও বাড়িয়েছেন। তাঁর শেষ ছবি ‘রই রই বিনালে’ যেন সেই দুই দিকেরই এক প্রতিফলন—যেখানে বাস্তব এবং পর্দার সীমারেখা মিশে গিয়েছে অদ্ভুতভাবে। এই অসমিয়া ছবিতে, যা ইতিমধ্যেই বহু রেকর্ড গড়েছে, জুবিন অভিনয় করেছেন এক অন্ধ গায়ক রাউল-এর ভূমিকায়। রাউলের জীবনে তাঁর সঙ্গীতগুরু ভিক্টর ঈশ্বরের সমান—যিনি তাঁকে ‘দুনিয়া দেখতে’ শিখিয়েছেন।
2
12
এই গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রটির জন্য জুবিন বেছে নিয়েছিলেন বর্ষীয়ান অভিনেতা ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়কে। অর্থাৎ পর্দায় ভিক্টর চরিত্রে অভিনয় করছেন সত্যিকারের ভিক্টর। এখানে বাস্তবের সঙ্গে মিল অস্বীকার করা যায় না—কারণ ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে অসমে মরান ব্লাইন্ড স্কুল পরিচালনা করেন, যেখানে তিনি দৃষ্টিহীন শিশুদের দেখতে শেখান সঙ্গীত ও শিক্ষার মাধ্যমে, ঠিক যেমনটি তিনি ছবিতে করেন।
3
12
“জুবিন আগে থেকেই বলেছিলেন, তিনি চান আমি তাঁর ছবিতে অভিনয় করি। পরে ফোন করে জানালেন, মাত্র দু’দিনের শুটই যথেষ্ট,” এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে জানান ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়।
4
12
জুবিন জানতেন ভিক্টরের স্কুলটির কথা। দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের নিয়ে তাঁর আগ্রহও ছিল গভীর—তিনি একবার ওই স্কুলেরই এক ছাত্র গায়ককে পুরস্কৃতও করেছিলেন। ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “হ্যাঁ, সবটাই পরিকল্পিত ছিল জুবিনের। সে বলেছিল, ‘চলুন, আপনার বাস্তব নামটাই ব্যবহার করি ছবিতে।’”
৩১ অক্টোবর, মুক্তির দিনেই মরান ব্লাইন্ড স্কুল-এর ৪০ জন ছাত্রছাত্রী এবং কর্মী ছবি দেখতে গিয়েছিলেন। “আমার মাতৃভূমির কণ্ঠস্বর হল জুবিন দা”—ছবি দেখে এক ছাত্রের এই মন্তব্য এখনও মনে রেখেছেন স্কুলের প্রধান নরেশ জোশি।
5
12
রাউলের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য জুবিন এমন একটি বিশেষ লেন্স পরতেন, যা তাঁর দৃষ্টিশক্তি ৫ শতাংশে নামিয়ে আনত। সহ-অভিনেত্রী মৌসুমী অলিফা জানান, “প্রতিদিন ৮ থেকে ১২ ঘণ্টা সেই লেন্স পরে থাকতেন তিনি, যাতে দৃষ্টিহীন মানুষের অনুভূতি উপলব্ধি করতে পারেন।”
6
12
নরেশ বলেন, “জুবিনের অন্ধ চরিত্রের উপস্থাপন নিখুঁত ছিল। আমি ছবিটি দেখতে গিয়ে বহুবার কেঁদেছি।” অসমের ডিব্রুগড় জেলার মরান শহরে অবস্থিত এই বিদ্যালয়টি ১৯৭২ সালে ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিতা, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা এস.এন. বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিষ্ঠা করেন। এখন এটি ১০ বিঘা জমির উপর গড়ে উঠেছে একটি পূর্ণাঙ্গ ক্যাম্পাস।
7
12
১৯৮২ সাল থেকে ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায় ট্রাস্টের সভাপতি হিসেবে স্কুলটি পরিচালনা করছেন। বর্তমানে এখানে ৬৫ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে। নরেশের কথায়, “ভিক্টর স্যার নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন, প্রতিদিন মেসেজ পাঠান এবং বছরে অন্তত চারবার স্কুলে আসেন।” ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এটি ভারতের অন্যতম সুন্দর বিদ্যালয়, আর আমি এতে গর্বিত।”
8
12
১৫ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভিক্টর ছিলেন মরানে। ঠিক তার পরের দিন, ১৯ সেপ্টেম্বর, সিঙ্গাপুরে প্রাণ হারান জুবিন গার্গ। তাঁর ফিরে এসে ডাবিং সম্পন্ন করার কথা ছিল। “আমরা সেটে খুব আনন্দ করেছি, এমনকি ‘মায়া’ গানটিও একসঙ্গে গেয়েছিলাম,” স্মৃতিচারণা করেন ভিক্টর। ছবির প্রযোজক এবং জুবিনের স্ত্রী গরিমা সাইকা গর্গ ভিক্টরকে ধন্যবাদ জানিয়ে লিখেছিলেন, ‘আপনার উপস্থিতিতেই ছবিটি এক অনন্য মর্যাদা পেয়েছে, স্যর।’
9
12
মরান ব্লাইন্ড স্কুলের শিক্ষার্থীরা এই ছবি নিয়ে প্রবল উচ্ছ্বসিত। “অনেকে মৃত্যুর পর জুবিনদার ভক্ত হয়েছেন, কিন্তু আমাদের ছাত্ররা বহু বছর ধরে তাঁকে ভালবাসে,” বলেন নরেশ জোশি। অষ্টম শ্রেণির ছাত্র জাহ্নু দত্তের কথায়, “তিনি আমাদের শক্তি দিয়েছেন। মানুষ ভাবে অন্ধ মানে দুর্বল। কিন্তু তিনি প্রমাণ করেছেন আমরা দুর্বল নই।” নবম শ্রেণির ছাত্রী প্রিয়াঙ্কা দে বলেন, “জুবিনদা দেখিয়েছেন যে অন্ধ মানুষও নিজের প্রতিভায় সফল হতে পারে। আর আমাদের প্রেসিডেন্ট স্যর (ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়) ছবিতে আছেন—এটাই সবচেয়ে আনন্দের।”
10
12
স্কুলটির ৯৯ শতাংশ শিক্ষার্থী সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন। তাদের কাছে সিনেমা দেখা মানে সংলাপ ও গানের মাধ্যমে গল্প শোনা। নরেশ জোশি জানান, জুবিনের ইচ্ছে ছিল স্কুলটিতে নিজে আসার—কিন্তু তা আর সম্ভব হয়নি।
11
12
জুবিন ছিলেন এমন এক মানুষ, যিনি একদিকে মঞ্চে মাইক্রোফোন হাতে অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জে উঠতেন। আর অন্যদিকে নিঃশব্দে সহায়তা করতেন অসংখ্য মানুষকে। চলচ্চিত্র সমালোচক ও জাতীয় পুরস্কারজয়ী নির্মাতা উৎপল বরপুজারি জানান, “আমার সঙ্গে শেষ দেখা হয় গুয়াহাটিতে। তিনি হঠাৎ পাশের এক ছোট বেকারি থেকে প্যাটি কিনে আনলেন, আর বললেন, ‘ওরা দারুণ পরিশ্রমী দম্পতি, সবাইকে বলো এখান থেকে কিনতে।’”
12
12
গুয়াহাটির ওই ক্ষুদ্র বেকারির মালিক বলেন, “অনেকেই আসতেন, বলতেন—জুবিন দা-র পরামর্শে এসেছি।” তাই ‘রই রই বিনালে’-তে ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাধ্যমে এক অন্ধ শিশুকে ‘দেখতে শেখানো’ নিছক কাকতালীয় নয়। ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ছবিতে আমি যা করেছি, সেটাই তো প্রতিদিন করার চেষ্টা করি বাস্তবে।” নিজের শেষ ছবিতে জুবিন যেন এক নিঃশব্দ বার্তা রেখে গেছেন—যে অন্ধত্ব কোনও সীমাবদ্ধতা নয়, বরং আলোর এক নতুন সংজ্ঞা।