আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রযুক্তি জায়ান্ট গুগল ফের বড়সড় ছাঁটাই করেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, কোম্পানির ডিজাইন-সংক্রান্ত বিভাগে কাজ করা ১০০-রও বেশি কর্মীকে চাকরি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে চলতি সপ্তাহের শুরুতেই।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গুগলের ক্লাউড ইউনিটের “কোয়ান্টিটেটিভ ইউজার এক্সপেরিয়েন্স রিসার্চ” এবং “প্ল্যাটফর্ম অ্যান্ড সার্ভিস এক্সপেরিয়েন্স” টিমে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে। এছাড়াও আরও কয়েকটি বিভাগে চাকরি কাটা হয়েছে। এই ভূমিকাগুলি মূলত ব্যবহারকারীদের আচরণ বিশ্লেষণ করে, হিসেব করে এবং গবেষণার মাধ্যমে প্রোডাক্ট ডিজাইনের মান উন্নয়নে সহায়তা করত। জানা গেছে, কিছু ক্লাউড ডিজাইন টিমের প্রায় অর্ধেক কর্মীকে বাদ দেওয়া হয়েছে। বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কর্মীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। যাঁরা ছাঁটাই হয়েছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকে ডিসেম্বরের শুরু পর্যন্ত সংস্থার ভেতরে বিকল্প পদ খুঁজে নেওয়ার সময়সীমা পেয়েছেন।
গুগলের এই ছাঁটাই প্রক্রিয়া কোম্পানির বৃহত্তর পুনর্গঠনের অংশ। সংস্থাটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কেন্দ্র করে ভবিষ্যতের কৌশল গড়ে তুলছে এবং এজন্য বিশাল বিনিয়োগ করছে নিজের উন্নয়নে। সেই কারণেই তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিভাগ থেকে কর্মী সংখ্যা কমানো হচ্ছে।
গত মাসেই Wired জানিয়েছিল, প্রায় ২০০ কন্ট্রাক্টরকে ছাঁটাই করা হয়েছে যারা জেমিনি ও এআই ওভারভিউসের মতো টুল নিয়ে কাজ করছিলেন। সেই সময় কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়— কম বেতন, চাকরির অনিশ্চয়তা এবং বাড়তে থাকা টানাপড়েনকে দায়ী করা হয়েছিল। অনেকে অভিযোগ করেছিলেন, কর্মপরিবেশ নিয়ে চলা প্রতিবাদের সঙ্গেও ছাঁটাইয়ের যোগ থাকতে পারে।
আরও পড়ুন: এবার থেকে ২৪ ঘণ্টাই দোকান থাকবে খোলা, চওড়া হাসি ব্যবসায়ীদের মুখে
ডিজাইন টিমের ছাঁটাই একক ঘটনা নয়। এর আগে চলতি বছরেই গুগল ক্লাউড ইউনিটে কর্মী কমিয়েছিল। তখন কোম্পানি দাবি করেছিল, ব্যবসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিতে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার জন্যই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও গুগলের গ্লোবাল বিজনেস ইউনিট এবং Platforms & Devices বিভাগ—যেখানে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার নিয়ে কাজ হয়—সেখানেও কর্মী ছাঁটাই হয়েছে।
এক বিবৃতিতে গুগল জানিয়েছে, তারা টিমগুলির মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানো এবং গ্রাহক পরিষেবা উন্নত করার জন্য “ছোটখাটো পরিবর্তন” করছে। তবে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এই পরিবর্তনের প্রভাব পড়ছে একাধিক বিভাগে। ২০২৫ সালের শুরু থেকেই মানবসম্পদ, হার্ডওয়্যার, সার্চ, বিজ্ঞাপন, মার্কেটিং, ফিনান্স এবং কমার্স বিভাগের কর্মীদের জন্য স্বেচ্ছা-অবসর প্যাকেজও ঘোষণা করা হয়েছে।
গুগল শুধু কর্মীই নয়, ম্যানেজমেন্ট স্তর থেকেও ছাঁটাই করেছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, মাঝারি পর্যায়ের ম্যানেজারদের সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি কমানো হয়েছে, বিশেষত যাঁরা ছোট টিম দেখাশোনা করতেন। এর লক্ষ্য হল ব্যবস্থাপনাকে সরলীকরণ করা, দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ তৈরি করা এবং এআই-ভিত্তিক কাজে আরও বেশি সম্পদ বরাদ্দ করা।
যদিও ধারাবাহিক ছাঁটাই চলছে, তবু গুগল এখনও বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম নিয়োগকর্তা। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জমা দেওয়া এক নিয়ন্ত্রক নথি অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে কোম্পানিতে কর্মী সংখ্যা ছিল ১,৮৩,৩২৩ জন।
বিশ্লেষকদের মতে, গুগলের এই পদক্ষেপ শুধু একক ঘটনা নয়। গোটা প্রযুক্তি শিল্পেই এআই এবং অটোমেশনের দিকে জোর দিয়ে বহু কোম্পানি খরচ কমাতে কর্মী ছাঁটাই করছে। ফলে গুগলের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত সেই বৃহত্তর প্রবণতারই প্রতিফলন।
