আজকাল ওয়েবডেস্ক: জাতিসংঘে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ নিতে চলেছে ফ্রান্স। সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে আনুষ্ঠানিকভাবে প্যালেস্তাইন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে পারে প্যারিস। সৌদি আরব ইতিমধ্যেই এই উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছে। একই পথে হাঁটার কথা ভাবছে যুক্তরাজ্যও। গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ ও বাস্তুচ্যুতির ভয়াবহ মানবিক সংকটের প্রেক্ষাপটে এই সম্মেলন আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র আলোড়ন তুলেছে। সোমবার থেকে নিউ ইয়র্কে শুরু হয়েছে তিনদিনব্যাপী একটি কূটনৈতিক সম্মেলন, যার মূল লক্ষ্য প্যালেস্তাইন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি প্রদান এবং দুই-রাষ্ট্র সমাধান পুনর্জীবিত করা। সম্মেলনে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ ঘোষণা করেন, গাজা ও পশ্চিম তীরে জন্য বিশ্বব্যাংকের মাধ্যমে ৩০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা পাঠাবে রিয়াদ। তিনি বলেন, “১৯৬৭ সালের সীমারেখা অনুযায়ী পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে স্বাধীন প্যালেস্তাইন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির একমাত্র উপায়।”
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁ আগেই জানিয়েছেন, সেপ্টেম্বর মাসে প্যালেস্তাইন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে ফ্রান্স। ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জঁ-নোয়েল বারো বলেন, “ইজরায়েল ও প্যালেস্তাইনের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের একমাত্র পথ দুই-রাষ্ট্র সমাধান। এর কোনো বিকল্প নেই।” এই সম্মেলনে ফ্রান্স ও সৌদি আরব ছাড়াও ১৬টি দেশ ও সংস্থা অংশ নিচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এদিকে, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার নিজ দলের এমপিদের চাপের মুখে পড়েছেন। ইতিমধ্যেই ২২০ জন এমপি, যা পার্লামেন্টের এক-তৃতীয়াংশ, একটি চিঠিতে স্টারমারকে আহ্বান জানিয়েছেন প্যালেস্তাইন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য সময় ও রূপরেখা নির্ধারণ করতে। সরকারী সূত্রে জানা গেছে, “এটা এখন কেবল সময়ের ব্যাপার,” এবং স্টারমার এই ইস্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় মানবিক সাহায্য ও গাজায় চলমান দুর্ভিক্ষ নিয়ে চাপ সৃষ্টি করতে চলেছেন।
স্টারমার বলেন, “গাজায় দুর্ভিক্ষ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। সেখানে মানবিক সাহায্য পৌঁছে দিতে হলে ইজরায়েলের ওপর চাপ তৈরি করতেই হবে।” তবে এই সম্মেলনের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছে ইজরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু মাক্রোঁর ঘোষণাকে “সন্ত্রাসের পুরস্কার” বলে অভিহিত করেছেন। জাতিসংঘে ইজরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন বলেন, “এই সম্মেলন বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন। তারা গাজায় হামাস নির্মূল বা পন বন্দিদের মুক্তির কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে কেবল একটি রাজনৈতিক ইলিউশন তৈরি করছে।” যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এই সম্মেলনকে “অপ্রয়োজনীয় ও বিভ্রান্তিকর” বলে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, “আমরা এ ধরনের স্টেজ-ম্যানেজড সম্মেলনে অংশ নেব না। আমাদের লক্ষ্য বাস্তব কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো, যাতে যুদ্ধ বন্ধ হয় এবং স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।”
বিশ্লেষকদের মতে, এই সম্মেলন বর্তমান পশ্চিমা কূটনীতির দ্বিচারিতা প্রকাশ করেছে। ১৯৪৭ সালের জাতিসংঘ পার্টিশন পরিকল্পনা যখন একসঙ্গে ইহুদি ও আরব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে ছিল, তখন আজ সেই একই শক্তিগুলো প্যালেস্তাইন রাষ্ট্র গঠনে বাধা দিচ্ছে। ফলে প্রশ্ন উঠছে—এই দোটানা আর কতদিন চলবে, এবং তার মাশুল কে দেবে? উত্তর একটাই—গাজায় প্রতিদিন মরছে মানুষ, ক্ষুধার্ত শিশুরা, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে জীবন্ত শহর।
