আজকাল ওয়েবডেস্ক:  আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে রবিবার ভোরে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। জার্মান রিসার্চ সেন্টার ফর জিওসায়েন্সেস জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল রিক্টার স্কেলে ৬.০৭। আকস্মিক এই কম্পনে দ্বীপপুঞ্জজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং বহু মানুষ ঘর থেকে বেরিয়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেন।


জিএফজেডের প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল সমুদ্রের তলদেশে, যা আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের ভূকম্পন-প্রবণ অঞ্চলের পরিচিত একটি অংশ। ভারতীয় সময় অনুযায়ী সকালে কম্পন অনুভূত হয়। যদিও ভূমিকম্পটি শক্তিশালী ছিল, তবে এখন পর্যন্ত বড় কোনও ক্ষয়ক্ষতি বা প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। তবু কর্তৃপক্ষ সতর্ক রয়েছে এবং পরিস্থিতি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।


দ্বীপপুঞ্জের বিভিন্ন এলাকা—বিশেষ করে পোর্ট ব্লেয়ার ও আশপাশের অঞ্চলে—জোরালো কম্পন অনুভূত হয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। অনেকেই জানান যে তাদের বাড়ির জানালা ও দরজা কেঁপে ওঠে এবং মাটিতে স্থিরভাবে দাঁড়ানো কঠিন হয়ে পড়ে কয়েক সেকেন্ডের জন্য। ভূমিকম্পের সময় অনেকেই বাইরে বেরিয়ে পড়েন এবং উপকূলের নিকটবর্তী এলাকায় সতর্কতা জারি করা হয়।


আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ভারত-বার্মা টেকটনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত হওয়ায় অঞ্চলটি ভূমিকম্প প্রবণ হিসেবে পরিচিত। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরনের মাঝারি থেকে শক্তিশালী ভূমিকম্প অঞ্চলটির জন্য নতুন নয়। তবে ৬-এর ওপরে মাত্রার কম্পন যেকোনও সময় বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির কারণ হতে পারে, তাই সতর্ক থাকতে হবে।


ভূমিকম্পের পর সুনামি সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, কম্পনটি গভীর উৎসস্থল হওয়ায় সুনামির সম্ভাবনা রয়েছে। উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জরুরি সেবা, দুর্যোগ মোকাবিলা দল এবং স্থানীয় প্রশাসন ঘটনাস্থলজুড়ে নজরদারি বাড়িয়েছে।


আন্দামানের স্কুল, সরকারি অফিস ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির খোঁজ নিতে তাৎক্ষণিকভাবে পরিদর্শন শুরু হয়েছে। কিছু একাধিক ভবনে চিড় ধরা ও সামান্য ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে, তবে বড় ধরনের বিপর্যয় এখন পর্যন্ত হয়নি।


এর আগে গত কয়েক মাসে আন্দামান অঞ্চলে একাধিক মাঝারি মাত্রার ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে, যা বিশেষজ্ঞদের মতে ভারত মহাসাগরের নিচে টেকটনিক চাপ বৃদ্ধির ইঙ্গিত দেয়। জিএফজেড জানিয়েছে, আজকের ভূমিকম্পটির পর আরও কয়েকটি আফটারশকের সম্ভাবনা রয়েছে, যা সাধারণত প্রধান কম্পনের পর স্বাভাবিক ঘটনা।


ভূমিকম্পের খবরে সারা দেশে উদ্বেগ দেখা দিলেও ভারতীয় নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ড জানিয়েছে, দ্বীপপুঞ্জে তাদের কাজ স্বাভাবিক রয়েছে এবং কোনও বড় ক্ষতির খবর তাদের কাছে নেই। তবে তারা জরুরি পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত রয়েছে।


সার্বিকভাবে, শক্তিশালী ৬.০৭ মাত্রার ভূমিকম্প আন্দামান দ্বীপপুঞ্জকে কাঁপিয়ে দিলেও বড় কোনও বিপর্যয় না ঘটায় প্রশাসন স্বস্তি প্রকাশ করেছে। তবুও বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দিয়েছেন—অঞ্চলটি ভূমিকম্পপ্রবণ হওয়ায় যেকোনো সময় বড় কম্পন আসতে পারে, তাই সতর্কতা ও প্রস্তুতির বিকল্প নেই।