আজকাল ওয়েবডেস্ক: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই কম্পিউটিংয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তিগুলির একটি হল উন্নত সেমিকন্ডাক্টর চিপ। সেই চিপ তৈরির জন্য প্রয়োজন অত্যাধুনিক এক্সট্রিম আল্ট্রাভায়োলেট লিথোগ্রাফি মেশিন—যা এতদিন কার্যত বিশ্বের একমাত্র সরবরাহকারী ডাচ সংস্থা ASML-এর নিয়ন্ত্রণে ছিল। এবার সেই একচেটিয়া নির্ভরতা ভাঙতে বড়সড় উদ্যোগ নিয়েছে চীন।
রয়টার্স ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, শেনঝেনের একটি গবেষণাগারে চীন নিজস্ব EUV লিথোগ্রাফি প্রযুক্তি তৈরির কাজ চালাচ্ছে। প্রকল্পটির লক্ষ্য ২০২৮ সালের মধ্যে দেশীয় প্রযুক্তিতে উন্নত এআই চিপ উৎপাদন শুরু করা। এই উদ্যোগকে চীনের নিজস্ব “ম্যানহাটন প্রজেক্ট” বলেও উল্লেখ করা হচ্ছে।
রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের নেতৃত্বে এই কাজটি করা হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনের উপর উন্নত চিপ ও চিপ তৈরির যন্ত্রাংশ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর এই প্রকল্প আরও গতি পেয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, চীনের সেরা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে।
এই উদ্যোগে যুক্ত রয়েছে একাধিক চীনা গবেষণা প্রতিষ্ঠানও। চ্যাংচুন ইনস্টিটিউট অব অপটিক্স, ফাইন মেকানিক্স অ্যান্ড ফিজিক্স অপটিক্যাল সিস্টেম উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য হল, বিশ্বের শীর্ষ সেমিকন্ডাক্টর যন্ত্র প্রস্তুতকারী সংস্থা ASML-এর প্রাক্তন একাধিক ইঞ্জিনিয়ার এই প্রকল্পে যুক্ত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন লিন নান, যিনি একসময় ASML-এর লাইট সোর্স প্রযুক্তির প্রধান ছিলেন।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সিস্টেম প্রয়োজনীয় তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো তৈরি করতে সক্ষম হলেও, তা দিয়ে এখনও কার্যকর চিপ তৈরি হয়নি। প্রকল্পটির নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত কড়াকড়ি। কর্মীদের জন্য আলাদা আলাদা বিভাগ, বিচ্ছিন্ন কর্মক্ষেত্র এবং এমনকি ছদ্মনাম ব্যবহারের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে তথ্য ফাঁস ঠেকাতে। বিদেশি বিশেষজ্ঞদের আকর্ষণ করতে বিপুল বেতন, মোটা সাইনিং বোনাস, আবাসন সুবিধা এবং নাগরিকত্বের ক্ষেত্রে শিথিলতাও দেওয়া হচ্ছে।
তবুও এই উদ্যোগ সফল হলে, এআই, স্মার্টফোন এবং প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিতে চীনের স্বনির্ভরতার পথে এটি হবে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। এর ফলে বিশ্বের বাকি দেশরা অনেকটাই সমস্যায় পড়বে। সেখান থেকে দেখতে হলে চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অনেকটা খোলা টক্কর দিতে পারবে। যদিও এবিষয়ে আমেরিকা কোনও মন্তব্য করেনি। তবে জানা গিয়েছে বিষয়টি নিয়ে চিন্তায় রয়েছে মার্কিন প্রশাসনও। এবার কত দ্রুত চীন এই কাজটি শেষ করে তার ওপরই নির্ভর করবে এই প্রকল্পের কার্যকারিতা।
