আজকাল ওয়েবডেস্ক: কে না জানে, মশা কারও কম তো কারও বেশি টানে। কিন্তু কেন এমনটা হয়? নেদারল্যান্ডসের লোল্যান্ডস মিউজিক ফেস্টিভ্যালে ২০২৩ সালের আগস্টে এক অভিনব গবেষণা দেখাল, কয়েকটি ছোট অভ্যাসই আপনাকে মশাদের কাছে বাড়তি আকর্ষণীয় করে তোলে।


র্যা ডবাউড ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের গবেষকরা সেখানে চালান এক ব্যতিক্রমী ফিল্ড এক্সপেরিমেন্ট, নাম দেন “Mosquito Magnet Trial”। তাঁরা শিপিং কন্টেনার সাজিয়ে ছোট্ট একটি ল্যাব বানান, সঙ্গে আনেন প্রায় ১,৭০০ স্ত্রী অ্যানোফেলিস মশা যা ম্যালেরিয়ার বাহক।


৪৬৫ জন স্বেচ্ছাসেবী এতে অংশ নেন। প্রত্যেকে একটি সংক্ষিপ্ত হিসেব পূরণ করেন, তারপর শ্বাস ছাড়েন এবং নিজের হাতের পাতাকে একটি ছিদ্রযুক্ত প্যানেলে ধরে রাখেন। মশারা কেবল গন্ধ পায়, কামড়াতে পারে না। ক্যামেরায় রেকর্ড হয় তিন মিনিটের এই ট্রায়াল, আর গবেষকরা গোনেন হাতে বসা মশার সংখ্যা বনাম চিনির প্যাডে বসা মশার সংখ্যা।

আরও পড়ুন: আয়কর রিফান্ড: বড় অঙ্কে কি দেরি হয়? জানুন বিস্তারিত


ফলাফল বলছে, মশাদের বিশেষ পছন্দ আছে। বিয়ার পানকারীরা যাঁরা অন্তত ১২ ঘণ্টা মদ্যপান থেকে বিরত ছিলেন, তাঁদের তুলনায় প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বেশি মশার টান পান। অর্থাৎ হপস আর আঙুরে ভিজে থাকা শরীর মশাদের কাছে সত্যিই সুস্বাদু! এই ধারা অন্যান্য ভ্যারিয়েবল হিসেবেও ধরা পড়ে।


শুধু তাই নয়, যারা আগের রাতে কারও সঙ্গে বিছানা বা তাঁবু ভাগ করে ঘুমিয়েছেন, তাঁদের ওপরও মশার আগ্রহ বেশি। একা ঘুমানোরা তুলনামূলক কম ‘আকর্ষণীয়’ প্রমাণিত হন। গবেষকরা মজা করে লেখেন, “মশারা যেন ভোগবিলাসী মানুষদের প্রতিই টান অনুভব করে।”


অন্যদিকে, সানস্ক্রিন ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে দৃশ্য ছিল উল্টো। বিশেষত যারা হাতের পাতায় সানস্ক্রিন লাগিয়ে সদ্য স্নান সেরে এসেছিলেন, তাঁদের ওপর মশার আক্রমণ প্রায় অর্ধেক কম ছিল। অনুমান করা হচ্ছে, সানস্ক্রিন হয়তো ত্বকের গন্ধ ঢেকে দেয় বা এমন কিছু উপাদান থাকে যা মশার আকর্ষণ কমায়।


অনেকের ধারণা রক্তের গ্রুপ মশার পছন্দে বড় ভূমিকা রাখে। কিন্তু এই পরীক্ষায় তেমন কোনও প্রমাণ মেলেনি। প্রায় সবাই কোনও না কোনওভাবে মশার টান পেয়েছেন—শুধু চারজন অংশগ্রহণকারী পুরোপুরি রেহাই পান তিন মিনিটের পরীক্ষায়।


গবেষকরা ত্বকের ব্যাকটেরিয়ার ভূমিকা নিয়েও খোঁজ নেন। দেখা যায়, যাঁদের গায়ে বেশি ক্ষত ছিল, তাঁদের প্রতি মশার আগ্রহ কিছুটা বেশি। তবে এতেও স্পষ্টভাবে বোঝা যায়নি কেন কেউ মশার জন্য চুম্বক আর কেউ নয়।


অবশ্যই মনে রাখতে হবে, এটি একটি প্রাণবন্ত গবেষণা, নিয়ন্ত্রিত ল্যাব পরীক্ষার মতো নয়। কেবল একটি মশার প্রজাতি পরীক্ষা করা হয়েছে। ফেস্টিভ্যালের ঘাম, সুগন্ধি আর রাতজাগা জীবন এর সঙ্গে মিশে ফলাফলে কিছু প্রভাব ফেলতেই পারে।


তাহলে সমাধান কী? গবেষণার প্রধান সারা ব্লাঙ্কেনের সহজ উপদেশ—গরমকালে বিয়ার উপভোগ করতে চান? করুন। তবে লম্বা জামা, সঠিক রিপেলেন্ট আর নিয়মিত সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। এগুলোই রক্তের গ্রুপ নিয়ে চিন্তা করার চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর সুরক্ষা দেবে।


সংগীত, ভিড় আর উচ্ছ্বাসে ভরা ফেস্টিভ্যালে মশারা এলোমেলোভাবে বসেনি। বরং বেছে নিয়েছে। ঠান্ডা বিয়ার খাওয়া বা কারও সঙ্গে বিছানা ভাগ করা আপনাকে মশাদের মেন্যুতে শীর্ষে তুলতে পারে। তবে সানস্ক্রিন ও একটা ঝরঝরে স্নান আপনাকে অনেকটাই বাঁচিয়ে দিতে পারে।