আজকাল ওয়েবডেস্ক: কিছু ব্ল্যাক হোল তাদের চারপাশ ছুঁয়ে চলে গেলেও, কিছু আবার পুরোপুরি গিলে ফেলতে দ্বিধা করে না। ২০১৮ সালে আকাশ পর্যবেক্ষণকারী সার্ভেগুলো এমনই এক অদ্ভুত বিস্ফোরণ ধরা পড়ে। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে যার উজ্জ্বলতা ৪০ গুণ বেড়ে যায় এবং সর্বোচ্চ অবস্থায় তা দশ ট্রিলিয়ন সূর্যের সমান আলো ছড়ায়।
এই বিস্ফোরণের উৎস পৃথিবী থেকে প্রায় দশ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের একটি গ্যালাক্সি, যার কেন্দ্রে রয়েছে একটি অ্যাকটিভ গ্যালাকটিক নিউক্লিয়াস, নাম J2245+3743। এর কেন্দ্রীয় ব্ল্যাক হোলটি অতিমাত্রায় ভরসম্পন্ন।
“এটির শক্তি উৎপাদন দেখেই বোঝা যায়, বস্তুটি অত্যন্ত দূরে এবং অস্বাভাবিকভাবে উজ্জ্বল,” বলছেন গবেষণার প্রধান লেখক, ক্যালটেকের জ্যোতির্বিজ্ঞান গবেষক অধ্যাপক ম্যাথু গ্রাহাম। “এমন AGN আমরা আগে কখনও দেখিনি।”
বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সম্প্রসারণশীল হওয়ায় দূরের ঘটনা শুধু দূরে দেখায় না, সেগুলো যেন ধীরগতিতে ঘটে বলেও মনে হয়। আলো যখন আমাদের দিকে আসে, তখন প্রসারিত মহাশূন্যে তার তরঙ্গদৈর্ঘ্য বাড়ে এবং ঘটনাগুলো সময়ে টেনে ধরা পড়ে। J2245+3743 এর ক্ষেত্রে এই প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
দূরবর্তী এই ব্ল্যাক হোলের ফ্লেয়ারটি ফিকে হয়ে এলেও এখনো জ্বলছে—যথেষ্ট দীর্ঘ সময় ধরে, যাতে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা একে একে বিভিন্ন সম্ভাব্য ব্যাখ্যা বাদ দিতে পারেন। সাধারণত AGN-গুলো নিজেরাই অত্যন্ত উজ্জ্বল, কারণ বিশাল ঘূর্ণায়মান অ্যাক্রিশন ডিস্কের গ্যাস ব্ল্যাক হোলের দিকে ধাবিত হয়ে উত্তপ্ত হয় এবং আলো বিচ্ছুরিত করে। মাঝেমধ্যে এদের খাওয়ানোর হার ওঠানামা করায় স্বাভাবিক ফ্লেয়ার দেখা যায়, যা বিরল এবং তীব্র ঘটনাগুলোকে আড়াল করে।
২০১৮ সালে প্যালমারের ২০০-ইঞ্চি হেইল টেলিস্কোপ দিয়ে নেওয়া প্রথম স্পেকট্রামটিকে বেশ স্বাভাবিকই মনে হয়েছিল। কিন্তু ২০২৩ সালে, যখন ফ্লেয়ারটির পতন প্রত্যাশার তুলনায় ধীর মনে হলো, তখন হাওয়াইয়ের কিংবদন্তি কেক অবজারভেটরিতে নেওয়া নতুন স্পেকট্রাম প্রকাশ করে ঘটনার প্রকৃত তীব্রতা।
গবেষকরা প্রথমে পরীক্ষা করেন, ঘটনাটি কি পৃথিবীর দিকে কোনো জেট নিক্ষেপ করছে কি না—যা প্রকৃত উজ্জ্বলতার চেয়ে বেশি আলোক বিচ্ছুরণ দেখাতে পারে। নাসার প্রাক্তন WISE মিশনের তথ্য সেই ধারণাকে বাতিল করে। সাধারণ সুপারনোভার মতো ব্যাখ্যাও খাপ খায় না। ফলে একটি ব্যাখ্যাই জোড়ালো হয়ে ওঠে—টাইডাল ডিসরাপশন ইভেন্ট বা TDE।
TDE ঘটে যখন কোনো তারা খুব কাছে এসে ব্ল্যাক হোলের মহাকর্ষে ছিন্নভিন্ন হয়। টুকরো টুকরো গ্যাস ধীরে ধীরে ব্ল্যাক হোলের দিকে ঘূর্ণায়মান হয়ে পড়ে, আর এই খাওয়ানোর প্রক্রিয়াই মাস থেকে বছরের মতো সময় ধরে বিপুল আলো উৎপন্ন করে।
সাধারণত TDE দেখা যায় এমন ব্ল্যাক হোলে, যেগুলো আগে থেকেই সক্রিয় নয়। কিন্তু J2245+3743 এর ক্ষেত্রে ব্ল্যাক হোলটি আগেই অত্যন্ত সক্রিয় ছিল, তবু TDE-এর আলো তার স্বাভাবিক উজ্জ্বলতাকেও ছাপিয়ে গেছে—যা ঘটনাটিকে আরও বিরল করে তুলেছে।
AGN ডিস্কে তারার গঠনও ভিন্ন ধরনের। প্রবল গ্যাস, ঘনত্ব ও তীব্র অস্থিরতার কারণে তারাগুলো এখানে অস্বাভাবিকভাবে বড় হয়ে উঠতে পারে। এমনই একটি অতিভর তারাই সম্ভবত ব্ল্যাক হোলের ফাঁদে পড়ে এই অভূতপূর্ব TDE ঘটিয়েছে বলে ধারণা করছেন গবেষকেরা।
এভাবেই একটি বিশাল তারার ধ্বংস এবং ব্ল্যাক হোলের অতিভোজী ক্ষুধা মিলিয়ে তৈরি হয়েছে J2245+3743—অতিদূরবর্তী মহাশূন্যের সবচেয়ে উজ্জ্বল ও দীর্ঘস্থায়ী ঘটনাগুলোর একটি।
