সুমনা আদক
চৈত্রের শেষ পর্বে পাতা ঝরা বসন্ত বেয়ে চলে নিজের মতো। দাবদাহের প্রখরতা কাটিয়ে হালখাতা নিয়ে শুরু হওয়া বৈশাখের দিনটা বড়ই কাছের আপামর বাঙালির চোখে। আজকাল পয়লা বৈশাখ শুধু বাঙালির নয়, পাশাপাশি অবাঙালিদের কাছেও বেশ জনপ্রিয়। সময়ের পাশাপাশি, স্বাভাবিক ভাবেই সংস্কৃতির পরিধির পরিবর্তন ঘটেছে। হালখাতার সন্ধ্যায় শরবতের বদলে চলে এসেছে সফ্ট ড্রিঙ্কস, মিষ্টির বদলে নোনতার স্থান বদল ঘটেছে খাবারে। পয়লা বৈশাখের আবহে গা ভাসিয়েছে প্রবাসীরাও।
প্রায় সাড়ে সাত হাজার মাইল পেরিয়ে ইংল্যান্ডের কোনও এক শহরের বাঙালির বাড়িতে বেশ সাজোসাজো রব। ইংল্যান্ডের একাধিক শহরের ভিন্ন প্রান্তে কর্মসূত্রে থাকা প্রবাসী বাঙালিরা এখন বৈশাখী আড্ডার টানে বেজায় ব্যাস্ত। বার্মিংহাম, নটিংহ্যাম, মিডল্যান্ড, সাউথ লন্ডন থেকে শুরু করে কেমব্রিজ, বেডফোর্ড সর্বত্র বাঙালি পাড়া খুশির আনন্দে জেরবার। একদিকে এদেশের ইস্টারের ছুটির পাশাপাশি বসন্তের সমারোহ বলে দেয় নতুনের আগমনের কথা।
কর্মক্ষেত্রে বসবাসকারী এদেশের সব বাঙালির কাছে এই বিশেষ দিনটার গুরুত্ব রয়েছে। সাধারণভাবে কাজের ব্যাস্ততার ফাঁকে উইকেন্ডই পয়লা বৈশাখ উৎযাপনের রীতি বলা চলে। এবছর কোথাও কোথাও আবার পয়লা বৈশাখের দিনেও আয়োজন করা হচ্ছে পুরোনো ছন্দের বৈশাখী আড্ডার। বেশিরভাগ কমিউনিটি হল ভাড়া নিয়ে সবাই মিলে উৎসবের আনন্দ মিলেমিশে ভাগ করে নেওয়ার একটা পর্ব এটি। বাঙালির আড্ডা থাকবে আর খাওয়া দাওয়া হবে না সেটা সম্ভব কখনোই নয়। খাবারের লম্বা তালিকায় স্পেশাল বাঙালি পদের ব্যবহার।
এছাড়াও, নাচ,গান,হাসি,আনন্দ সবমিলিয়ে, একেবারে বৈঠকী জমাটি আড্ডাখানা কেন্দ্র ইংল্যান্ডের শহরগুলো। কোনও কোনও শহরে আবার কলকাতা থেকে শিল্পীর উপস্থিতি এদেশের বৈশাখীর পরিবেশকে আরো শৌখিন করে তোলে প্রতিবছর। এবছরও তার ব্যাতিক্রম হবে না। ইংরেজি শিক্ষার পাশাপাশি মাতৃভাষা এবং নিজের সংস্কৃতিকে ভালভাবে আগলে রাখা এখানকার বিশেষ রীতি।
"এসো হে বৈশাখ" এর স্রোত প্রতিবছর বাংলার চৌকাঠ বেয়ে নিমেষে চলে আসে প্রবাসের অন্দরমহলে। একসময় গুটিকয়েক বাঙালির হাত ধরে শুরু হওয়া পয়লা বৈশাখের আনন্দ ফেলে আসা দেশের হালখাতার আনন্দকে ভুলতে দেয় না কখনও। হঠাৎই স্মৃতির পাতায় সুদূর প্রান্তে বসে থাকা কোনও এক বাঙালির চোখের জল নেমে আসে নিঃশব্দে। এটাই হলো সত্যতা যা হাজার বছর ধরেও মেটানো যায় না তা ইংল্যান্ডই হোক কিংবা নিউইয়র্ক অথবা কলকাতা। বাঙালি রয়েছে সেই বাঙালিতেই।
