আজকাল ওয়েবডেস্ক: কারাবন্দি প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সেদেশের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের বিরুদ্ধে চাঁচাছোলা আক্রমণ শানিয়েছেন। ইমরান খান দাবি করেছেন যে, কারাগারে তাঁর অবস্থা সন্ত্রাসবাদীদের চেয়েও খারাপ। 'কাপ্তান' ইমরানের হুঁশিয়ারি, কারাগারে তাঁর কিছু হলে সম্পূর্ণরূপে দায়ী থাকবেন সেনাপ্রধান আসিম মুনির।

ইমরান খান বলেছেন, "সাম্প্রতিক কালে, কারাগারে আমার সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে তা আরও কঠোর হয়ে উঠেছে। আমার স্ত্রী বুশরা বিবির সঙ্গেও একই ঘটনা ঘটছে। তাঁর সেলের টিভি-ও কেড়ে নেওয়া হয়েছে। আমাদের সকল মৌলিক এবং আইনি অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে।"  

ইমরান খান আরও অভিযোগ করেছেন যে, তাঁর তুলনায় একজন দোষী সাব্যস্ত সামরিক কর্তা, খুনি এবং সন্ত্রাসবাদীদেরও কারাগারে ভাল পরিবেশে রাখা হয়েছে এবং ভিআইপি সুবিধা ভোগ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তাঁর সঙ্গে বাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ফলে তিনি মানসিকভাবে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, "আমি কখনও নিপীড়নের কাছে মাথা নত করিনি এবং কখনও করব না।"

"যদি আমার কিছু হয়, মুনির দায়ী থাকবেন", বলেন ইমরান খান
ইমরান খান দাবি করেছেন যে, একজন কর্নেল এবং জেল সুপারিনটেনডেন্ট কারাগারের ভেতরে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের সরাসরি নির্দেশ অনুসরণ করছেন। তাঁর দল 'পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ' (পিটিআই)-এর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে খান বলেন, "যদি আমি কারাগারে থাকাকালীন আমার কিছু হয়, তাহলে দলকে নিশ্চিত করতে হবে যে আসিম মুনিরকে জবাবদিহি করতে হবে।"

"ওরা আমার স্ত্রীকে টার্গেট করছে"
ইমরান খান অসিম মুনিরের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত প্রতিশোধ নেওয়ার অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, "প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন আমি যখন মুনিরকে আইএসআই (পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা) প্রধানের পদ থেকে অপসারণ করেছিলাম, তখন থেকেই এই সমস্যা শুরু হয়।"

খান মতে, অপসারণের পর, আসিম মুনির জুলফি বুখারীর মাধ্যমে তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবির সঙ্গে দেখা করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, বুশরা বিবি তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। ইমরানের দাবি, "সেই দিন থেকে মুনির ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি নিয়েছেন। এখন তিনি আমার উপর চাপ সৃষ্টি করতে এবং আমাকে মানসিকভাবে ভেঙে ফেলার জন্য আমার স্ত্রীকে ব্যবহার করছেন।"

ইমরান খান প্রায় দুই বছর ধরে কারাগারে বন্দি, বেশ কয়েকটি ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত। আল-কাদির ট্রাস্ট মামলায় তাঁর স্ত্রী বুশরা বিবিকেও ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খান প্রায়ই দাবি করেছেন যে, রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে তাঁকে এবং তাঁর স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই পদক্ষেপের আসল লক্ষ্য তাঁদের মুখ বন্ধ করে দেওয়া ও বিরোদী স্বর দুর্বল করা।

পিটিআই-এর দাবি 
ইমরান খানের সাম্প্রতিক বক্তব্যের পর, তাঁর দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দাবি করেছে যে, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে ‘মৃত্যু কক্ষে’ রাখা হচ্ছে এবং তাঁর মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। দ্য ডন-এর এক প্রতিবেদন অনুসারে, পিটিআই-এর কেন্দ্রীয় তথ্য সম্পাদক শেখ ওয়াককাস আকরাম বলেছেন যে- খানকে প্রতিদিন ২২ ঘন্টা তাঁর সেলে একা রাখা হচ্ছে।

আরও পড়ুন- তিনজন ব্যক্তির ডিএনএ দিয়ে জন্ম নিল আটটি শিশু! কীভাবে হল এই কাজ

তিনি আরও বলেন, "যদিও ইমরান খান একজন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, তবুও তাঁর সঙ্গে কোনও সম্মানজনক আচরণ করা হচ্ছে না। বাস্তবে, তিনি প্রতিটি সাধারণ বন্দির যে মৌলিক অধিকার থাকা উচিত তাও পাচ্ছেন না। এটি অত্যন্ত গুরুতর কারণ তিনি দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা এবং পুরো জাতি তার নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত।"

আকরাম আরও বলেন যে, "খানকে বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে - তাকে সংবাদপত্র পড়তে, টিভি দেখতে বা বই কিনতে দেওয়া হচ্ছে না। তাঁর উপর, তাঁকে বন্ধুবান্ধব বা রাজনৈতিক সহকর্মীদের সঙ্গেও দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না।"