আজকাল ওয়েবডেস্ক: দীপু চন্দ্র দাসের পর বাংলাদেশে হিন্দু যুবক অমৃত মণ্ডলের খুনের ঘটনায় শোরগোল পড়েছে। ফের প্রশ্নের মুখে সেদেশের সংখ্যালঘু নিরাপত্তা। এসবের মধ্যেই রাজবাড়িতে হিন্দু যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় মুখ খুলল বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালীন সরকার। দাবি করা হয়েছে, অমৃত মণ্ডলের খুনের সঙ্গে ধর্মের কোনও যোগ নেই। মহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তবর্তীকালীন সরকারের আরও দাবি য়ে, ওই হিন্দু যুবক নাকি আদতে গুন্ডা ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে তোলাবাজির অভিযোগ। এমনকী নিহত অমৃতের বিরুদ্ধে খুনের মামলাও ছিল বলে বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ সরকার জানিয়েছে, ‘সরকার সংশ্লিষ্ট সকলকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানাচ্ছে এবং বিভ্রান্তিকর, উস্কানিমূলক ও সাম্প্রদায়িক বক্তব্য প্রচার থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছে। আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ- এই দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করার যে কোনও অপচেষ্টা সরকার কড়া হাতে দমন করবে।'
অমৃত মণ্ডলের বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ?
বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালীন সরকারের তরফে দাবি করা হয়েছে, 'পুলিশের তথ্য ও প্রাথমিক তদন্ত থেকে মনে করা হচ্ছে যে ঘটনাটি মোটেই সাম্প্রদায়িক হামলার সঙ্গে জড়ত নয়। এটা তোলাবাজি ও সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ থেকে উদ্ভূত হিংসাত্মক পরিস্থিতির থেকে সৃষ্ট ঘটনা। নিহত ব্যক্তি অমৃত মণ্ডল ওরফে সম্রাট তোলারআদায়ের উদ্দেশ্যে এলাকায় উপস্থিত হয়েছিলেন। এরপর তাঁকে বিক্ষুব্ধ স্থানীয় জনতা ধরে ফেলে। পরে তাঁর প্রাণহানি ঘটে। ২০২৩ সালে রুজু করা হত্যা এবং তোলাবাজি মামলা-সহ একাধিক গুরুতর মামলার আসামি ছিলেন অমৃত। সেইসব মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও রয়েছে।'
এই ঘটনায় আটক করা হয়েছে এক ব্যক্তিকে। ইউনুস সরকারের দাবি, 'পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সম্রাটের সহযোগী সেলিমকে একটি বিদেশি পিস্তল ও একটি পাইপগান-সহ আটক করেছে। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সরকার কঠোর নিন্দা জানায়। সরকার সুস্পষ্টভাবে জানাতে চায়, যে কোনও ধরনের আইন-বহির্ভূত কর্মকাণ্ড, গণপিটুনি বা হিংসাত্মক কার্যকলাপ সরকার কোনওভাবেই সমর্থন করে না। এ ঘটনায় যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।'
এর আগে গণপিটুনিতে দীপু দাস হত্যার ঘটনায় পুলিশ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল। হত্যার ঘটনায় শোকপ্রকাশ করে কঠোর পদক্ষেপের কতা জানিয়েছিলেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের মুখ্য উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস।
ঘটনা কী ঘটেছিল?
গত বুধবার রাতে রাজবাড়ী জেলার পাংশা এলাকায় গণপিটুনিতে মৃত্যু হয় অমৃত মণ্ডল ওরফে সম্রাট (২৯) নামে এক যুবকের। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বুধবার রাত ১১টা নাগাদ হোসেনডাঙ্গা পুরাতন বাজার এলাকায় শহিদ শেখ নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে ১০-১২ জন সঙ্গী নিয়ে চড়াও হয়েছিল অমৃত। দু'লক্ষ টাকা দাবি করে তারা। সেই সময়ে শহিদ শেখ সেখানে ছিলেন না। তোলা না পেয়ে শহিদের ছেলেকে মারধর করে তারা। এই সময়ে শহিদ শেখের বাড়ির লোকজন ‘ডাকাত-ডাকাত’ বলে চিৎকার করে ওঠে।
দলবল নিয়ে পালাতে যায় সে। তাদের তাড়া করে গ্রামবাসীরা। হোসেনডাঙ্গা গ্রাম থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে বসুয়া গ্রামের কাছে অমৃত ও সেলিম নামে তার এক সঙ্গীকে ধরে ফেলে উত্তেজিত জনতা। শুরু হয় গণপিটুনি। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় অমৃতের। অন্যদিকে সেলিম শেখকে গুরুতর আহত অবস্থায় পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। বাজেয়াপ্ত করা হয় দু'টি আগ্নেয়াস্ত্র। সেলিমকে আটক করে পুলিশ।
