আজকাল ওয়েবডেস্ক: ফিরোজপুরে সংঘ স্বেচ্ছাসেবক নবীন অরোরার হত্যাকাণ্ডে ৭২ ঘণ্টা পার হলেও পুলিশ এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার রাতে আরএসএস ও বিজেপি পাঞ্জাব সরকারকে দুই দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। এর মধ্যে তদন্তে কোনও সুনির্দিষ্ট অগ্রগতি না হলে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফাজিলকা-ফিরোজপুরে আরএসএসের সমন্বয় প্রধান, নগর প্রধান, বিজেপি নেতৃত্ব এবং ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি বৈঠক হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, বুধবার পাঞ্জাবের সব ২২টি জেলার ডেপুটি কমিশনারদের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে স্মারকলিপি জমা দেবেন আরএসএস স্বেচ্ছাসেবক, সংঘের সহযোগী সংগঠন এবং বিজেপি নেতারা।
ফিরোজপুর জেলা বিজেপি সভাপতি সরবজিৎ সিং বাথ বলেন, “রাজ্য সরকারকে দুই দিনের আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছে। ২১ নভেম্বরের মধ্যে তদন্তে সাফল্য না এলে ফিরোজপুরে ধর্নায় বসা হবে। এরপর আরও বড় আকারে প্রতিবাদ কর্মসূচি চলবে।”
বাথ জানান, পাঞ্জাব প্রদেশ বেপার মণ্ডল, বিভিন্ন মন্দির কমিটি এবং এনজিও-র প্রতিনিধিরাও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর কথায়, “এটা শুধু সংঘ বা একটি পরিবারের বিষয় নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ধর্নায় সব শ্রেণির মানুষই শামিল হবেন।” আরএসএস নগর প্রধান অশ্বিনী ধাওয়ান দ্রুততম সময়ে অপরাধীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
নবীন অরোরা, বয়স ৩২, ফিরোজপুর শহরের মূল বাজারে একটি ছোট দোকান চালাতেন। ১৫ নভেম্বর রাতে তিনি দোকান বন্ধ করে বেরোনোর সময়ই দুই ব্যক্তি তাঁকে গুলি করে হত্যা করে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, একজন সাদা হুডি এবং অন্যজন কালো জ্যাকেট পরে আগেই বাজার এলাকায় ঘোরাফেরা করে রেকি চালায়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ফুটেজ দেখে একজন সন্দেহভাজনকে শনাক্ত করা হয়েছে এবং ফিরোজপুরের ভারত নগরে তাঁর পরিবারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছে। দ্বিতীয় ব্যক্তির পরিচয় এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। হত্যার পর একটি অল্প পরিচিত খালিস্তানি সংগঠন ঘটনাটির দায় স্বীকার করে। তারা হুমকি দেয় যে ভবিষ্যতে আরএসএস, শিব সেনা, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের টার্গেট করা হবে।
এদিকে, মঙ্গলবার অরোরার অন্তিম প্রার্থনা সভা সম্পন্ন হয়। তিনি রেখে গেছেন তাঁর বাবা-মা, স্ত্রী, ছয় বছর বয়সি কন্যা এবং দুই বছরের পুত্রকে।
স্থানীয় মানুষজনের অভিযোগ, তিন দিন কেটে গেলেও তদন্তে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। আরএসএস ও বিজেপি নেতৃত্বের মতে, এই ধীরগতি জনসাধারণের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে এবং এলাকায় অস্থিরতা বাড়াচ্ছে।
রাজ্য সরকার এখনও পর্যন্ত আলটিমেটাম নিয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে প্রশাসনিক সূত্র বলছে, তদন্ত দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যেতে বিশেষ দল কাজ করছে। ফিরোজপুরে সংঘ স্বেচ্ছাসেবকের হত্যাকাণ্ড এখন শুধু একটি অপরাধ তদন্ত নয়, বরং রাজনৈতিক উত্তাপের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে—আগামী ৪৮ ঘণ্টা পাঞ্জাবের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে চলেছে।
