আজকাল ওয়েবডেস্ক: ঘুমের ওষুধ কিনতে গিয়ে ৬২ বছরের এক মহিলা দিল্লিতে ভয়ঙ্কর প্রতারণার শিকার হয়েছেন। জানা গিয়েছে, তাঁর কাছ থেকে প্রতারকেরা হাতিয়ে নেয় ৭৭ লক্ষ টাকা। ঘটনাটি ঘটে ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে। জানা গিয়েছে, পেশায় প্রাক্তন শিক্ষিকা নীরু নামে ওই মহিলা দিল্লির বসন্ত কুঞ্জে একাই বসবাস করেন। নিউরোর কিছু সমস্যার জন্য মাসে মাসে তাঁকে ঘুমের ওষুধ খেতে হত। এরকমই একদিন ওষুধ কেনার জন্য তিনি বিভিন্ন অনলাইন ফার্মেসি ঘাঁটছিলেন। ওষুধ অর্ডার করার কিছুদিন পর তিনি একটি ফোন পান, যেখানে এক ব্যক্তি নিজেকে নারকোটিক্স কন্ট্রোল ব্যুরোর অফিসার বলে দাবি করে। ফোন করে ওই মহিলাকে বেআইনি ওষুধ কেনার অভিযোগে অভিযুক্ত করে।
তাঁকে জানানো হয়, তাঁর বিরুদ্ধে মাদক সরবরাহের অভিযোগ রয়েছে এমনকি গ্রেপ্তারের সম্ভাবনাও রয়েছে। দুটি বিকল্প দেওয়া হয়, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট যাচাই করার জন্য কিছু টাকা ট্রান্সফার করা অথবা গ্রেপ্তারি পরোয়ানার মুখোমুখি হওয়া। ভয় পেয়ে ওই মহিলা বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা পাঠিয়ে দেন। ১০ দিন পর আবার তাঁর কাছে একটি ফোন আসে। এবার এক ব্যক্তি নিজেকে ‘ভালো অফিসার’ হিসেবে পরিচয় দেন। বলেন, নীরু নির্দোষ সেটা প্রমাণ করা সম্ভব। এমনকি, তিনি ওই মহিলাকে বলেন, টাকা ফেরত পাওয়া সম্ভব। বিশ্বাস অর্জনের জন্য তিনি প্রথমে ২০ হাজার টাকা ফেরত পাঠান। এই অফিসারের প্রতি বিশ্বাস জন্মে যায় নীরুর।
এরপর হোয়াটসঅ্যাপে একটি ভিডিও কল আসে, যেখানে চারজন ব্যক্তি নিজেদের এনসিবি অফিসার বলে দাবি করে। তাঁরা নীরুকে বলেন, ফোনের স্ক্রিন শেয়ার করে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে। নির্দ্বিধায় নীরু তাঁদের নির্দেশ মেনে নিয়ে নিজের নেট ব্যাঙ্কিং অ্যাক্সেস তাঁদের হাতে তুলে দেন। এরপরই শুরু হয় একের পর এক টাকা কাটার মেসেজ। ৫ লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ টাকার লেনদেনের নোটিফিকেশন আসতে থাকে। যখন নীরু সেই ‘ভালো অফিসার’-কে ফোন করেন, তখন তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর দিল্লি পুলিশের স্পেশাল সেলের IFSCO ইউনিটে অভিযোগ দায়ের করেন। এসিপি মনোজ কুমার এবং সাব-ইনস্পেক্টর করমবীরের নেতৃত্বে তদন্ত শুরু হয়। চলতি বছরের জুন মাসে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে প্রথম অভিযুক্ত অখিলেশ। দিল্লির মুখার্জি নগরের একটি ভাড়া বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় অখিলেশকে।
জেরায় সে স্বীকার করে, আমজাদ, শহিদ ও শাকিল মিলে প্রতারণায় যুক্ত ছিল এবং ভিডিও কলে স্ক্রিন শেয়ার করে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকে টাকা তুলে নিয়েছিল। এরপর ২৭ জুন পুলিশ হরিয়ানার পুনহানা এলাকায় হানা দিয়ে ভাল অফিসার সাজা আমজাদ ও তার সঙ্গী শহীদকে গ্রেপ্তার করে। জেরায় আমজাদ জানায় তার শ্যালক শহীদ এবং বন্ধু শাকিলের সঙ্গে মিলে সে ওই বৃদ্ধার কাছ থেকে টাকা আদায়ের জন্য মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়েছিল। ভুয়ো এনসিবি অফিসার সাজিয়ে ভয় দেখানো চতুর্থ অভিযুক্ত হামিদকে গত ১ জুলাই রাজস্থানের দিগ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রামবাসীরা বাঁচাতে চেষ্টা করলেও পুলিশ হামিদ এবং শাকিল দু’জনকেই গ্রেপ্তার করে। তবে নীরু এখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র ৩ লক্ষ টাকা ফিরে পেয়েছেন। পুলিশ বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হদিশ করে তদন্ত চালাচ্ছে, যেগুলোর মাধ্যমে টাকা ঘুরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
