দিল্লিতে মেঘে বীজ বপনের (ক্লাউড সিডিং) ফলে এখনও পর্যন্ত কোনও ফল পাওয়া যায়নি। আমরা এটা সকলেই জানি। আইআইটি কানপুরের বিজ্ঞানীরাও এটা জানেন। কিন্তু দিল্লি সরকার কি এটা জানত না? তবুও কি তারা করদাতাদের ৩৪ কোটি টাকা এমন একটি পরীক্ষায় ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যেই ‘কার্যকর নয়’ সতর্ক করে দিয়েছিলেন?
২০২৪ সালের ডিসেম্বরে রাজ্যসভায় একটি প্রশ্নের লিখিত জবাবে কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রক জানিয়েছিল যে, তিনটি বিশেষ সংস্থা- কমিশন ফর এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট (CAQM), সেন্ট্রাল পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ড (CPCB) এবং ইন্ডিয়া মেটিওরোলজিক্যাল ডিপার্টমেন্ট (IMD) শীতকালে দিল্লিতে ক্লাউড সিডিংয়ের বিরুদ্ধে পরামর্শ দিয়েছিল। বিশেষজ্ঞ মতামত ছিল, বৈজ্ঞানিক ভাবে এটি সম্ভব নয়। দিল্লির শীতে পশ্চিমা ঝঞ্ঝার প্রভাব থাকে। খুব কমই ঘন, আর্দ্রতা সমৃদ্ধ মেঘ তৈরি করে ক্লাউড সিডিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয়। এমনকি যখন মেঘ দেখা দেয়, তখনও সেগুলি খুব উপরে বা খুব শুষ্ক থাকে। এর ফলে যে কোনও বৃষ্টিপাত মাটি স্পর্শ করার আগেই বাষ্পীভূত হয়ে যায়।
এই সংস্থাগুলি সর্বসম্মতভাবে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে ঠান্ডা এবং শুষ্ক মাসগুলিতে দিল্লিতে ক্লাউড সিডিং সম্ভব নয়। তারা সতর্ক করে দিয়েছিল যে প্রয়োজনীয় আবহাওয়ার পরিস্থিতি যেমন, পর্যাপ্ত আর্দ্রতা এবং মেঘের গভীরতা। যা সাধারণত নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে এনসিআর অঞ্চলে অনুপস্থিত থাকে। এমনকি যখন পশ্চিমা ঝঞ্ঝা কিছু মেঘের আবরণ তৈরি করে, তখনও স্তরগুলি বীজ বপনের জন্য পরিমাপযোগ্য বৃষ্টিপাতের জন্য খুব পাতলা থাকে। মন্ত্রক আরও উল্লেখ করেছে যে এই ধরনের অনুপযুক্ত পরিস্থিতিতে সিলভার আয়োডাইডের মতো রাসায়নিক ব্যবহারের সুবিধা নগণ্য হবে তবে সম্ভাব্য পরিবেশগত ঝুঁকি থাকে।
তবুও এই বছরের শুরুতে, দিল্লি সরকার আইআইটি কানপুরের সহযোগিতায় আনুমানিক ৩৪ কোটি টাকার ক্লাউড সিডিং প্রকল্প বাস্তবায়িত করার সিদ্ধান্ত নেয়। একটি সাক্ষাৎকারে, আইআইটি কানপুরের পরিচালক চুক্তিটি সম্পর্কে জানান যে, ইনস্টিটিউটটি পরীক্ষামূলকভাবে পরিচালনার জন্য দিল্লি সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ২৮ অক্টোবর দু’টি বিমানের সাহায্যে প্রায় ৩০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে প্রথম ধাপ পরিচালনা করা হয়। প্রতিটি বিমানের খরচ ছিল প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা। ফলাফল? প্রায় কিছুই না। দিল্লিতে কয়েক মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল মাত্র।

এই প্রকল্পের বিজ্ঞানীরাও তা স্বীকার করেছেন। আইআইটি কানপুর জানিয়েছে, পরীক্ষার সময় বায়ুমণ্ডলীয় আর্দ্রতা খুব কম ছিল (মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ) বৃষ্টিপাতের জন্য। গত বছর আইএমডি এবং সিএকিউএম এই পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক করেছিল।
তাহলে কে এই অনুমোদন দিল? বিশেষজ্ঞ সংস্থাগুলির পরামর্শ কি উপেক্ষা করা হয়েছিল? ৩৪ কোটি টাকা সরকারি অর্থ ব্যয় করার আগে কি নতুন করে পর্যালোচনা করা হয়েছিল? আর যদি বিজ্ঞান ইতিমধ্যেই এই পদ্ধতিকে অকার্যকর বলে ঘোষণা করে থাকে, তাহলে এই খরচ কী যুক্তিসঙ্গত?
দিল্লি সরকার জানিয়েছে যে ক্লাউড সিডিং উদ্যোগ এখনও পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। পরিবেশমন্ত্রীর মন্তব্য করতে রাজি হননি। তাঁর কার্যালয় জানিয়েছে যে বিভিন্ন ধরণের ক্লাউড সিডিং রয়েছে এবং কোন নির্দিষ্ট বিভাগের বিশেষজ্ঞদের মতামত চাওয়া হয়েছে তা এখনও স্পষ্ট করা হয়নি। ২৮ অক্টোবর প্রাথমিক অভিযানের পর আইআইটি কানপুর বর্তমানে একটি বিস্তারিত প্রযুক্তিগত মূল্যায়ন করছে। কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন যে আইআইটির বিশেষজ্ঞরা তাদের মূল্যায়ন সম্পন্ন করে এবং সরকারের কাছে তাদের ফলাফল জমা দেওয়ার পরে প্রকল্পের পরিধি এবং ধারাবাহিকতা নির্ধারণ করা হবে।
দিল্লিতে মেঘে বীজ বপনের চেষ্টা এটিই প্রথম নয়। পূর্ববর্তী প্রচেষ্টাগুলিও দূষণের মাত্রা বা বৃষ্টিপাত নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছিল। এখন, দু’টি বিমান উড়িয়ে, কোটি কোটি টাকা খরচ করে এবং কোনও ফল না পাওয়া সত্ত্বেও, আসল প্রশ্ন হল কখন বৃষ্টি হবে তা নয়। কে বিজ্ঞানকে উপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিল এবং কেন? কারণ দিল্লির শীতকালীন ধোঁয়াশা কোনও রহস্য নয়। কিন্তু এই ক্লাউড সিডিং পরীক্ষার সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কে? তাই আসল রহস্য।
