আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাত ১০টা ২০ মিনিটের ট্রেন। শিয়ালদহ থেকে ট্রেন ছাড়ার একটু পরেই খেয়ে দেয়ে আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়লেন। তারপর ঘুমিয়ে পড়লেন। কিন্তু দু’জন যাত্রী সারা রাত জেগে থাকেন। তাঁরা দুই চোখ এক করলেই ঘটতে পারে সর্বনাশ। ট্রেনের বাকি অংশ ঘুমিয়ে থাকলেও, চালকের কেবিন মনোযোগ এবং সমন্বয়ের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করে।
দু’জন গুরুত্বপূর্ণ ক্রু সদস্য লোকো পাইলট (ট্রেন চালক) এবং সহকারী লোকো পাইলট। রাতভর তাঁরা নিয়মিত তথ্য আদানপ্রদানে লিপ্ত থাকেন। যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য সারা রাত তাঁরা সিগনাল সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ সংকেত আদানপ্রদান করে থাকেন।
ট্র্যাক বরাবর প্রতিটি সিগন্যাল জোরে জোরে পড়তে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি ১০৫০ নম্বর সিগন্যাল সবুজ দেখায়, লোকো পাইলট বলবেন, ‘সিগন্যাল ১০৫০, সবুজ’, এবং সহকারী তাৎক্ষণিকভাবে পুনরাবৃত্তি করবেন। এই ব্যবস্থা মানুষের ভুল রোধ করার জন্য একটি সহজ কিন্তু শক্তিশালী পদ্ধতি।
রেলওয়ে বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত অবকাঠামো সদস্য প্রদীপ কুমারের মতে, রুটের ট্র্যাফিক ঘনত্বের উপর নির্ভর করে সিগন্যালের দূরত্ব পরিবর্তিত হয়। নীরব অংশগুলিতে, সিগন্যালগুলি এক থেকে দুই কিলোমিটার দূরে থাকে। অন্যদিকে, উচ্চ ট্র্যাফিক বা স্টেশন জোনে ব্যবধানটি মাত্র ২০০ থেকে ৮০০ মিটারে কমে আসে।
ট্রেন ছাড়ার আগে, প্রতিটি লোকো পাইলট একটি বিস্তারিত রুট ম্যাপ পান। যেখানে প্রতিটি স্টপ, বাঁক, গতিসীমা এবং সময় তালিকাভুক্ত থাকে। এই নথিগুলিতে অস্থায়ী নির্দেশাবলী এবং ডাইভারশনগুলিও দেওয়া থাকে। যার ফলে ক্রুদের রিয়েল-টাইম পরিস্থিতিতে সঠিকভাবে সাড়া দেওয়ার সুযোগ থাকে।
যাত্রীরা যখন তাদের বার্থে ঘুমিয়ে পড়েন, তখন লোকো পাইলট সম্পূর্ণ সতর্ক থাকেন, রিয়েল টাইমে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন। এই ভূমিকার জন্য প্রযুক্তিগত দক্ষতার চেয়ে অনেক বেশি কিছু প্রয়োজন। এর জন্য শৃঙ্খলা, তীক্ষ্ণ মনোযোগ এবং সম্পূর্ণ দায়িত্বশীলতা প্রয়োজন।
