আজকাল ওয়েবডেস্ক: আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচনের আগে ঠাকুরবাড়িতে তৈরি হল মতুয়াদের নতুন সংগঠন। দাদা সুব্রত ঠাকুর বেড়িয়ে এলেন ভাই ও সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের সংগঠন থেকে। তৈরি করলেন মতুয়া মহাসঙ্ঘের তৃতীয় সংগঠন। উত্তর ২৪ পরগণার গাইঘাটা ব্লকের ঠাকুরনগরের ঠাকুরবাড়িতে এতদিন একই রেজিস্ট্রেশনে মতুয়াদের দুটি সংগঠন ছিল। একটির মাথায় ছিলেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতাবাল ঠাকুর। আরেকটির মাথায় ছিলেন সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর ও সুব্রত ঠাকুর। প্রতি বছর রাস উৎসবের দিন নতুন কমিটি ঘোষণার সময় সংগঠনের নতুন কমিটি তৈরি হয়। এবছর সেইদিনই ওই একই রেজিস্ট্রেশনে তৃতীয় 'অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘ'-এর কমিটি গঠন করলেন সুব্রত।  

যেখানে উপদেষ্টাদের তালিকায় একেবারে প্রথমেই নাম রয়েছে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। রয়েছেন বিধায়ক অসীম সরকার, অশোক কীর্তনীয়া-সহ একাধিক বিজেপি বিধায়করা। নতুন কমিটি ঘোষণার সময় মতুয়া গোসাঁই ও ভক্তদের পাশাপাশি মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিজেপির দুই বিধায়ক স্বপন মজুমদার ও অসীম সরকারও। সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুরের সঙ্গে সাম্প্রতিক সময় দাদা সুব্রত ঠাকুরের বিরোধ বারবার প্রকাশ্যে দেখা গিয়েছে। শান্তনু মতুয়াদের একটি সংগঠন 'অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘ'-এর মাথায় রয়েছেন। ওই সংঘের আরেকটি মাথা  সুব্রত ঠাকুর। একাংশের দাবি, 'মহাসঙ্ঘাধিপতি' হিসাবে সুব্রত ঠাকুর থাকলেও সমস্ত ক্ষমতার অধিকারী শান্তনু ঠাকুরই। এর মধ্যেই সম্প্রতি ঠাকুরবাড়িতে সিএএ শিবির নিয়ে দুই ভাইয়ের বিরোধ প্রকাশ্যে চলে আসে। সেই সময় তাৎপর্যপূর্ণভাবে আরও একটি মতুয়া মহাসংঘের সঙ্ঘাধিপতি তথা তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতা ঠাকুর সুব্রত ঠাকুরের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। 

সুব্রত ঠাকুর এবং শান্তনু ঠাকুর একই সঙ্গে বিজেপি করলে তাদেরকে সেভাবে দলীয় কর্মসূচিতে একসঙ্গে দেখা যায় না। ফলে সুব্রত ঠাকুরের এই নতুন সংগঠন বেশ কিছুটা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন মতুয়া সংগঠনের একাংশ। পাশাপাশি এই বিষয়ে মমতাবালা ঠাকুর জানান, সুব্রত ঠাকুর পরিবারের বড় ছেলে। তাঁর সবার আগে অধিকার পাওয়া উচিত। কিন্তু তাকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে। তবে সংগঠনের ব্যাপারে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি। কমিটি গঠন নিয়ে সুব্রত ঠাকুর বলেন, কোটি কোটি মতুয়া রয়েছেন। তিনটে কেন যদি পাঁচটি কমিটির প্রয়োজন পড়ে পাঁচটিই হবে।  পিছিয়ে পড়া সমাজে মানুষের জন্য মতুয়া মহাসংঘ কাজ করে আসছে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে । আগামীতেও কাজ করে যাবে।" বিজেপি বিধায়ক আরও বলেন, "যে মতুয়া মহাসংঘ ছিল তা ঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছিল না। তাই আমার মনে হয়েছে এই সংগঠন তৈরি করা দরকার।''

সুব্রত ঠাকুরের সংগঠন প্রসঙ্গে মমতা ঠাকুরের অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের সাধারণ সম্পাদক সুকেশ চৌধুরী বলেন, "পরিবার বড় হয়েছে এবং তার সঙ্গে সংগঠন ভাগ হয়েছে। এতে কিছু করার নেই। কিন্তু এক থাকতে পারলে ভালো হত।'' একই সঙ্গে তিনি বলেন, ভাগবাটোয়ারা নিয়ে এই ভাগাভাগি। কার হাতে ঠাকুরবাড়ির নিয়ন্ত্রণ থাকবে,   বিজেপির কাকে বেশি গুরুত্ব দেবে তা নিয়ে ভাইয়ে ভাইয়ে লড়ায়। সে সংগঠন মতুয়াদের জন্য কাজ করবে মতুয়ারা তার সঙ্গে থাকবে। অন্যদিকে সুব্রত এবং শান্তনু ঠাকুরের বাবা মঞ্জুল কৃষ্ণ ঠাকুর বলেন, পরিবার বড় হলে সংগঠন বাড়তে পারে। আমার কাছে দুই সন্তানই সমান। আমি দুজনের সঙ্গেই আছি।

বিধায়ক অসীম সরকার বলেন, পরিবার যখন বড় হয় তখন ভাগাভাগি হয় আমরা জানি। ঠাকুর বাড়িতে মতুয়া মহাসংঘ একটাই। আমাদের মধ্যে কোন ভাগাভাগি নেই। কালকে ছোট ঠাকুর শান্তনু ঠাকুর যদি ডাকেন চলে আসব।