আজকাল ওয়েবডেস্ক: জনতা দল (ইউনাইটেড)-এর সভাপতি নীতীশ কুমার দশমবারের মতো বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন। পাটনার ঐতিহাসিক গান্ধী ময়দানে অনুষ্ঠিত এই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানকে ঘিরে ছিল উত্তেজনা ও উৎসবের আবহ। হাজার হাজার সমর্থক ময়দানে জড়ো হয়ে নীতীশ কুমার ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ছবি, গামছা, স্কার্ফ ও প্ল্যাকার্ড হাতে উল্লাসে মেতে ওঠেন।


অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ)-এর শীর্ষ নেতারা। এনডিএর জোরালো জয়ের পর এই শপথ নেওয়া অনুষ্ঠানের রাজনৈতিক তাৎপর্য ছিল বিশেষভাবে লক্ষণীয়।


ভাইরাল মুহূর্ত: গামছা নাড়লেন মোদি
শপথ অনুষ্ঠানটির অন্যতম আকর্ষণীয় দৃশ্য ছিল প্রধানমন্ত্রী মোদির গামছা নাড়ানো। নীতীশ কুমারসহ নবনিযুক্ত মন্ত্রীদের শপথ গ্রহণ শেষে প্রধানমন্ত্রী যখন উপস্থিত জনতার উদ্দেশে গামছা নাড়িয়ে শুভেচ্ছা জানান, তখন পুরো মাঠ উৎসাহে ফেটে পড়ে। সমর্থকরাও একইভাবে গামছা নাড়িয়ে এই মুহূর্তকে স্মরণীয় করে তোলেন।


এই অঙ্গভঙ্গিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা নতুন সরকারের সূচনাকে ধন্যবাদ ও স্বীকৃতির প্রতীক হিসেবে দেখছেন। এর আগে, ১৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী মোদি দিল্লির বিজেপি সদর দফতরে প্রবেশ করার সময়ও একইভাবে গামছা নেড়ে বিজয়ের বার্তা দিয়েছিলেন।


সাম্প্রতিক বিহার বিধানসভা নির্বাচনে এনডিএ জোট ২০২টি আসন পেয়ে উল্লেখযোগ্য জয় অর্জন করেছে। নীতীশ কুমারের জেডিইউ ৮৫টি আসন পেয়েছে, যা তাঁকে আবারও মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে সুনাম দিয়েছে। এই জয়ের ফলে নীতীশ কুমার ভারতের রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলকের দিকে এগোচ্ছেন। তিনি ইতিমধ্যেই দেশের অষ্টম দীর্ঘমেয়াদি মুখ্যমন্ত্রী। বর্তমান মেয়াদ পুরোপুরি সম্পন্ন করতে পারলে তিনি সিক্কিমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী পবন চামলিংয়ের ২৪ বছরের রেকর্ডও অতিক্রম করবেন।


অভিজ্ঞ মুখদের নিয়ে নতুন মন্ত্রিসভা
শপথ অনুষ্ঠানে নীতীশ কুমারের পাশাপাশি মোট ১৯ জন বিধায়ক শপথ নেন। প্রথম সারিতে ছিলেন বিজেপি নেতারা—সম্রাট চৌধুরী, বিজয় সিনহা এবং দিলীপ জয়সওয়াল। অভিজ্ঞ ও পরীক্ষিত নেতৃত্বকে সামনে রেখে নতুন সরকার পরিচালনার দিশা নির্ধারণ করা হবে বলেই রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা।


এই নতুন মন্ত্রিসভার গঠন স্পষ্ট করে দিচ্ছে, আগামী পাঁচ বছরে বিহার সরকার উন্নয়ন, প্রশাসনিক স্থিতিশীলতা এবং জোটের সুসংহত সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করবে। নীতীশ কুমারের দীর্ঘ প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা ও এনডিএর শক্তিশালী সমর্থন—এই দুই মিলিয়ে বিহারের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে জোটশরিকদের আশা যথেষ্ট উঁচু।


গান্ধী ময়দানে উৎসবমুখর পরিবেশে শুরু হওয়া এই নতুন অধ্যায় বিহারের রাজনীতিতে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় ঘোরানোর ইঙ্গিত দিল। জনতার উচ্ছ্বাস, নেতাদের উপস্থিতি এবং প্রতীকী গামছা নাড়ানো—সব মিলিয়ে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি হয়ে উঠল রাজনৈতিক বার্তা ও সাংস্কৃতিক আবহের এক অনন্য সমাবেশ।