আজকাল ওয়েবডেস্ক: উত্তরকাশীতে আকস্মিক বন্যার কারণে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে এসেছে। এই দুর্যোগে ইতিমধ্যেই বহু মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। অনেকে তাঁদের পরিবার-পরিজন, ঘরবাড়ি, এমনকি কয়েক কোটি টাকার ব্যবসা হারিয়েছেন। ভয়াবহ বন্যার স্রোতে কেবল একাধিক ঘরবাড়ি, দোকানপাট নয়, বরং একাধিক মানুষের জীবন সম্পূর্ণভাবে ভেসে গিয়েছে। সূত্রে জানা গিয়েছে, এহেন ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুক্রবার প্রত্যেক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ৫,০০০ টাকার চেক ‘তাৎক্ষণিক সাহায্য’ হিসেবে দেওয়া হয়। তবে অধিকাংশ মানুষের মতে তাঁদের দুঃখ-কষ্টের তুলনায় এটি কিছুই নয়।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার অনেকেই এই চেক নিতে অস্বীকার করেন। এমনকি এটিকে তাঁদের কষ্টের প্রতি এক ধরনের অবমাননা হিসেবে দেখছেন তাঁরা। এক গ্রামবাসী জানিয়েছেন, 'আমরা সব কিছু হারিয়েছি। আমাদের পরিবার, ঘরবাড়ি, ব্যবসা, জীবনের সমস্ত সহায়-সম্বল। এই ৫,০০০ টাকা দেওয়া মানে আমাদের সেই কষ্টকে তুচ্ছ করে দেখা। এটা আমাদের জন্য অপমান।'
সূত্র অনুযায়ী, দুর্যোগের পরবর্তী পরিস্থিতিও অত্যন্ত ভয়াবহ। বিদ্যুৎ সংযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। ঘটনার প্রায় চারদিন পর শুধুমাত্র কিছু সংখ্যক মোমবাতি পৌঁছয়। মানুষকে দিনের পর দিন অন্ধকারে রাত কাটাতে হয়েছে। খাবার গরম করতে হয়েছে কাঠ জ্বালিয়ে। সরকার রেশন দেওয়ার কথা বললেও, বাস্তবে বহু মানুষের কাছে এখনও সেই রেশন পৌঁছয়নি। এক স্থানীয় বাসিন্দা জানিয়েছেন, 'আমাদের নিজে থেকেই অন্যদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার খুঁজতে হয়েছে। সরকারি সাহায্য বলতে কেবল ওই মুখের কথাতেই সীমাবদ্ধ ছিল।'
এহেন দুর্বিষহ পরিস্থিতির জেরে এলাকায় তুমুল বিক্ষোভ শুরু হয়। কারণ মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি পূর্বেই ঘোষণা করেছিলেন, প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। বাস্তবে তার পরিবর্তে যে সাহায্য দেওয়া হয়েছে, তা জনসাধারণ মেনে নিতে পারছেন না।

শনিবার মুখ্যমন্ত্রী ধামি সংবাদমাধ্যমের এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এখনও পর্যন্ত এক হাজারেরও বেশি মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বিভিন্ন তীর্থযাত্রী ও ভক্তদের ইতিমধ্যেই নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে। যাঁরা আহত হয়েছেন তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। হরশিলে পুরো যোগাযোগ ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, তবে তা পুনরায় চালু করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, লাচি গাড এলাকায় একটি বেইলি ব্রিজ স্থাপন করা হবে, যা মূলত হরশিল পর্যন্ত রাস্তা পুনর্গঠনে সহায়ক হয়ে উঠবে।
তিনি আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে আগামী ছয় মাস পর্যন্ত পর্যাপ্ত রেশন সরবরাহ করা হবে। পাশাপাশি রাজ্য সচিবের নেতৃত্বে একটি তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হচ্ছে। এরা সম্পূর্ণ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ ও পুনর্বাসনের পরিকল্পনা করবে। যেসব মানুষ প্রকৃতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের জন্য পৃথকভাবে একটি ত্রাণ প্যাকেজ ঘোষণা করা হবে।
আরও পড়ুনঃ চটজলদি পথে আয়ের জন্য দেহব্যবসা মেয়ের! গোয়েন্দা লাগিয়ে হাতেনাতে ধরল বাবা মা...
এর আগে শনিবার মুখ্যমন্ত্রী ধামি রাজভবনে রাজ্যপাল প্রাক্তন লেফটেন্যান্ট জেনারেল গুরমিত সিং-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে ধারালি ও হরশিল এলাকার দুর্যোগ পরিস্থিতি এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম নিয়ে গুরুতর আলোচনা হয়। পরে মুখ্যমন্ত্রী সোশ্যাল মিডিয়ায় এক পোস্টে জানান, তিনি রাজ্যপালের সঙ্গে বর্তমান ত্রাণকার্য ও পুনর্বাসন কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করেছেন।
এহেন বিপর্যয়ে উত্তরকাশীর মানুষ এখনও সাহায্যের অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছেন। আপাতত সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দিকে তাঁদের দৃষ্টি নিবদ্ধ। তাঁরা কেবল মুখের কথা চান না, বরং বাস্তব সহায়তা চান।
