আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাজস্থান সরকার রাজ্যজুড়ে দু’দিন মাংস ও সমস্ত আমিষ খাবার বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। পর্যুষণ উৎসব এবং অনন্ত চতুর্দশী উপলক্ষে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সোমবারই রাজ্য সরকারের তরফে এই সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী আগামী ২৮ আগস্ট পর্যুষণ উৎসব ও ৬ সেপ্টেম্বর অনন্ত চতুর্দশীর দিনে রাজ্যের সব কসাইখানা এবং মাংস–মুরগির দোকান বন্ধ রাখতে হবে। এছাড়াও, এবার প্রথমবারের মতো ডিম বিক্রিতেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সূত্রের খবর, ধর্মীয় সংগঠনগুলির দাবি মেনেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর আগে বেঙ্গালুরুর গ্রেটার বেঙ্গালুরু মহানগর পালিকে জন্মাষ্টমী উপলক্ষে ১৬ আগস্ট পশু জবাই ও মাংস বিক্রি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। মহারাষ্ট্রেও ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস এবং ২০ আগস্ট বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে একাধিক পুরসভা মাংস বিক্রি নিষিদ্ধ করেছিল।

তবে রাজস্থানে এই সিদ্ধান্তকে ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক। বিরোধী দল এনসিপি (এসপি) এবং শিবসেনা (ইউবিটি) অভিযোগ করেছে, সরকারের এই সিদ্ধান্ত মানুষের খাদ্যাভ্যাসের ওপর হস্তক্ষেপ। মহারাষ্ট্রের উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পওয়ার-ও এই ধরনের পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন। তাঁর মতে, ‘এমন ব্যবস্থা একেবারেই ঠিক নয়’। উল্লেখ্য, ভারত এমন একটি দেশ যেখানে প্রতিটি অঞ্চলের মানুষের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় নিরামিষ খাবার রয়েছে। সে পশ্চিমবঙ্গ হোক বা গুজরাট, নিরামিষ খাবার দেশের মানুষের দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অবাক হওয়ার কিছু নেই যে ভারতে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নিরামিষাশী মানুষ রয়েছেন। তবে এমন নয় যে এখানে আমিষ খাবার খাওয়া হয় না। নিরামিষ খাবারের মতো, এখানকার মানুষ আমিষ খাবারের প্রতি আগ্রহী। একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৫ সালের মধ্যে ভারতে শুধুমাত্র মাংসের বাজার হবে ৩৫.৮৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের।

তবে দেশে এমন একটি শহরও রয়েছে যেখানে আমিষ খাবার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। সেই শহরের নাম জেনে নিন। গুজরাটের ভাবনগর জেলার পালিতানা বিশ্বের প্রথম এমন শহর যেখানে আমিষ খাবার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৪ সালে ২০০ জনেরও বেশি জৈন সাধুর একটানা প্রতিবাদের পর স্থানীয় প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত নেয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রায় ২০০ জৈন সাধু অনশন এবং ধর্মঘট করে ২৫০টি কসাইয়ের দোকান বন্ধ করার দাবি জানান। এর ফলে, জৈন সম্প্রদায়ের অনুভূতিকে সম্মান জানিয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে আমিষ খাবারের উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হয়েছিল। তবে, আমিষ খাবারের উপর নিষেধাজ্ঞার ফলে শহরে ভাল খাবারের অভাব দেখা দেয়নি। পালিতানা একটি প্রধান জৈন তীর্থস্থান এবং এখানে বিভিন্ন ধরণের নিরামিষ খাবার পাওয়া যায় যা বেশ সুস্বাদুও। আমিষ খাবারের উপর নিষেধাজ্ঞার ফলে শহরের পবিত্রতা বজায় রয়েছে। দর্শনার্থীদের জন্য আরও অনেক নিরামিষ রেস্তোরাঁ তৈরি হয়েছে। এর ফলে অর্থনীতিরও উন্নতি হয়েছে।