আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সন্ত্রাস দমন সংস্থা ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ)-তে বিপুল শূন্যপদের বিষয়টি ফের সামনে এল। বুধবার লোকসভায় এক লিখিত জবাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই জানান, সংস্থাটির মোট ১৯০১টি অনুমোদিত পদের মধ্যে ৫৪১টি পদ খালি রয়েছে — অর্থাৎ প্রায় ২৮ শতাংশ। এই তথ্য প্রকাশ্যে আসার আগের দিনই, অপারেশন সিঁদুর নিয়ে লোকসভায় আলোচনার সময় ডিএমকে সাংসদ কে. কানিমোঝি প্রশ্ন তোলেন কেন বিভিন্ন কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার প্রধানদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও বারবার সম্প্রসারণ (extension) দেওয়া হচ্ছে। তাঁর অভিযোগ ছিল, এসব এজেন্সিতে অস্থায়িত্ব ও স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে।
নিত্যানন্দ রাইয়ের লিখিত উত্তরে আরও বলা হয়েছে, এনআইএ-তে বর্তমানে ৭৭টি ইন্সপেক্টর, ৯৩টি সাব-ইন্সপেক্টর এবং ৫৪টি অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইন্সপেক্টর পদের শূন্যতা রয়েছে। এছাড়া উচ্চপদস্থ স্তরে ১২ জন পুলিশ সুপার (SP), ১১ জন অতিরিক্ত SP, এবং ২০ জন ডেপুটি SP-এর পদও খালি। এই পরিস্থিতিতে এনআইএ-র কার্যক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে। কারণ, একইসঙ্গে মন্ত্রী জানিয়েছেন, সংস্থাটি ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত মোট ৬৭৭টি মামলা নথিভুক্ত করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এত শূন্যপদ থাকার পরও সংস্থার ওপর মামলা তদন্তের চাপ বাড়ছে। ফলে তদন্তের গুণমান ও কার্যকারিতা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সংসদেও এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়েছেন একাধিক বিরোধী সাংসদ।
প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাগুলির নিরপেক্ষতা ও দক্ষতা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। এই প্রেক্ষিতে এনআইএ-তে এত শূন্যপদ থাকা এবং গুরুত্বপূর্ণ পদে দীর্ঘমেয়াদি শূন্যতা প্রশাসনিক দুর্বলতার দিকেই ইঙ্গিত করে, বলছেন অনেকে। ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি বা NIA হল ভারতের একটি কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা, যার মূল কাজ সন্ত্রাসবাদ সংক্রান্ত অপরাধ তদন্ত করা। ২০০৮ সালে মুম্বই শহরে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পরে সারা দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থার অভাব এবং বিভিন্ন রাজ্যের তদন্ত সংস্থাগুলির মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই ২০০৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর 'ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি অ্যাক্ট' সংসদে পাস হয় এবং এর মাধ্যমে ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে NIA প্রতিষ্ঠিত হয়।
এই সংস্থার লক্ষ্য হল দেশজুড়ে সন্ত্রাসবাদ সংক্রান্ত যেকোনো অপরাধে দ্রুত, নিরপেক্ষ ও পেশাদার তদন্ত পরিচালনা করা। বিশেষত, জিহাদি সন্ত্রাসবাদ, বামপন্থী চরমপন্থা (মাওবাদ), আন্তঃরাষ্ট্রীয় অপরাধ, অস্ত্রপাচার, জাল নোট এবং মানব পাচার–এর মতো বিষয় NIA-র আওতায় পড়ে। NIA ভারতের একমাত্র সংস্থা যা রাজ্য সরকারের অনুমতি ছাড়াই যেকোনো রাজ্যে গিয়ে তদন্ত চালাতে পারে, যদি সংশ্লিষ্ট মামলা তাদের আওতায় পড়ে। এই কারণে সংস্থাটি অনেক সময় কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে সংঘাতের বিষয়ও হয়ে দাঁড়ায়। বর্তমানে NIA একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী তদন্ত সংস্থা হিসেবে কাজ করছে, তবে সম্প্রতি এই সংস্থার নিরপেক্ষতা ও শূন্যপদের সমস্যা নিয়ে সংসদে ও সমাজে প্রশ্ন উঠছে। তা সত্ত্বেও, জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় NIA-র ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
