আজকাল ওয়েবডেস্ক: আপনার মস্তিষ্কের অল্প অংশ নয় পুরোটা চাই তাঁর। মানুষের মস্তিষ্কের ঘিলু খেয়ে ‘বুদ্ধি চুরি’ করা উত্তরপ্রদেশের এক সিরিয়াল কিলারকে দ্বিতীয়বার যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়েছে। এটি দেশের ইতিহাসে ‘বিরল থেকে বিরলতম’ মামলা। ভারতের সবচেয়ে জঘন্য অপরাধে অভিযুক্ত রাম নিরঞ্জন ওরফে রাজা কোলান্ডারের নৃশংস কর্মকাণ্ড শুক্রবার ফের সামনে উঠে এসেছে। লখনউয়ের একটি আদালত তাঁকে ২৫ বছর পুরনো একটি জোড়া খুনের মামলায় ফের যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছে।
মামলাটির পরিচালনাকারি উত্তরপ্রদেশের পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিরঞ্জন তাঁর শিকারদের শিরশ্ছেদ করে খুলি সংরক্ষণ করে রাখতেন এবং সেই ঘিলু খেয়ে নিতেন। তাঁর বিশ্বাস ছিল যে এর ফলে তাঁর শক্তি এবং বুদ্ধি বৃদ্ধি হবে।
অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালত রাজার শ্যালক ভক্ষরাজকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে। দু’জনকেই আড়াই লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ২০০০ সালের জানুয়ারিতে রায়বেরেলির ২২ বছর বয়সী মনোজ কুমার সিং এবং তাঁর গাড়িচালক রবি শ্রীবাস্তবকে অপহরণ ও নৃশংস হত্যার মামলায় এই সপ্তাহের শুরুতে দু’জনকেই দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল।
অপর একটি খুনের মামলায় ইতিমধ্যেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত রাজা ২০০০ সালে প্রয়াগরাজে সাংবাদিক ধীরেন্দ্র সিংয়ের মুণ্ডু কাটা দেহ উদ্ধারের পর প্রথম শিরোনামে আসেন। সেই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত পরবর্তীতে হত্যা, নরমাংস ভক্ষণ এবং অঙ্গচ্ছেদের এক ভয়াবহ ধারা উন্মোচিত হয়। তদন্তকারী দল এবং আদালত উভয়েই হত্যাকাণ্ডটিকে উত্তরপ্রদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে নৃশংস অপরাধ হিসাবে বর্ণনা করেছে।
সর্বশেষ রায়টি মনোজ সিং এবং রবি শ্রীবাস্তবের অপহরণ ও হত্যার সঙ্গে সম্পর্কিত। দু’জনকে শেষ দেখা গিয়েছিল ২০০০ সালের ২৪শে জানুয়ারী। লখনউ থেকে ভাড়া করা টাটা সুমোতে রেওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার পর। ধারণা করা হচ্ছে তাঁরা রাজার স্ত্রী ফুলন দেবীকে চারবাগ রেলওয়ে স্টেশন থেকে যাত্রী হিসেবে তুলেছিলেন। তাঁরা ফিরে না আসায় মনোজের পরিবার নাকা হিন্দোলা থানায় নিখোঁজ ব্যক্তিদের খোঁজে ডায়েরি করে। কয়েকদিন পর, প্রয়াগরাজ জেলার শঙ্করগড়ের কাছে জঙ্গলে তাঁদের নগ্ন, খণ্ডিত মৃতদেহ উদ্ধার হয়।
যদিও ২০০১ সালে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছিল কিন্তু মামলাটি বছরের পর বছর ধরে ঝুলে ছিল। ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিচার শুরু হয়নি। সাংবাদিক ধীরেন্দ্র সিং হত্যার তদন্ত করার সময় তদন্তকারীরা উল্লেখযোগ্য সূত্র খুঁজে পান। একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন মামলার সূত্র রাজার ভয়াবহ অপরাধের পর্দা ফাঁস করে দেয়।
২০০০ সালের ডিসেম্বরে মধ্যপ্রদেশের সীমান্তবর্তী একটি গ্রামে ধীরেন্দ্র সিংয়ের মুণ্ডবিহীন দেহ পাওয়া যায়। তাঁর ভাই একজন পুলিশ অফিসার ছিলেন। তিনি ষড়যন্ত্রের সন্দেহ করেন এবং সন্দেহের তির গিয়ে পড়ে রাজার দিকে।
পিপরিতে রাজার খামারবাড়িতে অভিযানের সময় পুলিশ ভয়াবহ জিনিস দেখতে পায়। পাত্রে সংরক্ষিত মানুষের খুলি, কমপক্ষে ১৪টি খুনের বিবরণ সহ একটি ডায়েরি এবং নিখোঁজ ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত জিনিসপত্র। মনোজ সিংয়ের কোট এবং তাঁর টাটা সুমো। তখন থেকে গাড়িটি পুনরায় রঙ করা হয়েছিল এবং ‘ফুলন দেবী’ লেখা একটি স্টিকার লাগানো হয়েছিল।
জেরায় রাজা স্বীকার করে নেন যে স্ত্রীকে ব্যবহার করে শিকারদের জালে ফেলতেন তিনি। খামারবাড়িতে নিয়ে গিয়ে তাঁদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হত।
সেন্ট্রাল অর্ডন্যান্স ডিপোর প্রাক্তন কর্মচারী রাজা একজন সামন্ত রাজা ভাবতেন। তাঁর সন্তানদের নাম রেখেছিলেন আদালত, জামানত এবং আন্দোলন। তাঁর স্ত্রী একজন জেলা পঞ্চায়েত সদস্য ছিলেন। সেই দৌলতে স্থানীয় রাজনীতিতেও প্রভাব খাটাতেন।
কিন্তু এর আড়ালে লুকিয়ে ছিল রক্তপিপাসা এবং অন্ধকার বিশ্বাসে মগ্ন এক ব্যক্তি। জেরায় স্বীকার করেছিলেন, সহকর্মী কালীপ্রসাদ শ্রীবাস্তবকে হত্যা করেছিলেন এবং তাঁর ঘিলু খেয়ে ফেলেছিলেন। তাঁর বিশ্বাস ছিল যে কায়স্থের বুদ্ধি তীক্ষ্ণ। সেই ঘিলু খেয়ে তাঁদের বুদ্ধি নিজের করে নিতে পারবেন। জিজ্ঞাসাবাদের সময়, বিস্তারিতভাবে বলেছিলেন যে কীভাবে সে আগুনের পাশে শিকারদের গুলি করেছিল, তাদের মৃতদেহ টুকরো টুকরো করেছিলেন এবং বিভিন্ন স্থানে দেহাবশেষ ফেলে রেখেছিলেন।
