যদি আপনি কখনও ট্রেনে চড়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই প্রতিটি স্টেশনে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বিখ্যাত হলুদ বোর্ডটি দেখেছেন, যেখানে স্টেশনের নাম এবং এর কোড লেখা থাকে। এই হলুদ বোর্ডটি স্টেশনের পরিচয় হিসেবে কাজ করে, যাত্রীদের তাঁরা কোথায় পৌঁছেছেন তা নির্দেশ করে। যদি আমরা আপনাকে বলি যে এমন একটি রেলওয়ে স্টেশন আছে যার কোনও নাম নেই? হ্যাঁ, প্ল্যাটফর্মের হলুদ বোর্ডটি সম্পূর্ণ ফাঁকা।

একজন যাত্রী কীভাবে জানবেন কোথায় নামতে হবে? স্টেশনের নাম ছাড়া টিকিট কীভাবে বুক করা হবে? ভারতে এমন একটি নামহীন স্টেশন আছে যেখানে পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গেই আপনার বিস্ময় জাগবে। ভারতে, নয়াদিল্লি, হাওড়া এবং চেন্নাইয়ের মতো নামযুক্ত হাজার হাজার রেলওয়ে স্টেশন রয়েছে। তবে, একটি অদ্ভুত কারণে কেবল একটি রেলওয়ে স্টেশন রয়েছে: এর কোনও নাম নেই। 

এর হলুদ বোর্ডে কোনও নাম লেখা নেই, কোনও আনুষ্ঠানিক পরিচয় নেই, তবুও ট্রেনগুলি প্রতিদিন সেখানে থামে। লোকেরা অন্যান্য স্টেশনের মতোই টিকিট কাটেন, ট্রেনে চড়েন। এই নামহীন রেলস্টেশনটি পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত, বর্ধমান শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে। নামহীন হওয়া সত্ত্বেও, এটি সম্পূর্ণরূপে কার্যকর এবং প্রতিদিন কয়েক ডজন ট্রেন পরিষেবা প্রদান করে।

স্টেশনটি যেখানে রয়েছে সেটির দুই প্রান্তে দু’টি গ্রাম রয়েছে। উভয় প্রান্তের গ্রামবাসীদের দাবি ছিল স্টেশনটি তাদের নিজেদের গ্রামের নামে হোক। এই নিয়ে দুই গ্রামের দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে। এই বিরোধ এতটাই তীব্র হয়ে ওঠে যে এটি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। রায়ের অপেক্ষায় থাকাকালীন, রেল কর্তৃপক্ষ বোর্ড থেকে নামটি সরিয়ে দেয়। তারপর থেকে, এই রেলস্টেশনটি নামহীন রয়ে গিয়েছে।

এই রেলওয়ে স্টেশনটি কেবল তার নাম না থাকার জন্যই যে উল্লেখযোগ্য তা নয়, এটি রবিবার বন্ধও থাকে। ভারতে এই নামহীন স্টেশন ছাড়া আর কোনও রেলওয়ে স্টেশন রবিবার বন্ধ থাকে না। ভারতের বেশিরভাগ রেলস্টেশন প্রতিদিন খোলা থাকলেও, এই নামহীন স্টেশনটি রবিবার বন্ধ থাকে।

কারণ, রবিবার স্টেশন মাস্টারকে টিকিটের রেকর্ড জমা দেওয়ার জন্য বর্ধমানে যেতে হয়। তাই সেদিন স্টেশনে কোনও ট্রেন পরিষেবা দেওয়া হয় না। নিয়মিত দিনে ছ’টি ট্রেন যাতায়াত করে। তবে কেবল বাঁকুড়া-মসাগ্রাম প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি থামে এবং তাও দিনে ছ’বার। মজার বিষয় হল, এই স্টেশনে বিক্রি হওয়া ট্রেনের টিকিটের নাম ‘রায়নগর’। এই নামেই টিকিট বুকিং করা হয়।