আজকাল ওয়েবডেস্ক: পণের জন্য আরও এক যুবকের বর্বোরোচিত আচরণের শিকার গৃহবধূ। এবং শেষমেশ মর্মান্তিক পরিণতি। পণের দাবিতে গৃহবধূকে টানা দুই বছর ঘরবন্দি করে রাখার অভিযোগ স্বামীর বিরুদ্ধে। শুধু তাইই নয়, গৃহবধূকেও খেতেও দিতেন না স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা। শনিবার গৃহবধূ মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন। 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, এবার ঘটনাস্থল তেলেঙ্গানার কোথাগুডেম জেলায়। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ৩৩ বছর বয়সি যুবতীর নাম লক্ষ্মী প্রসন্ন। ২০১৫ সালে পুলা নরেশ বাবুর সঙ্গে লক্ষ্মী বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের এক খুদে সন্তান রয়েছে। শনিবার হঠাৎ নরেশ লক্ষ্মীর বাবা-মাকে ফোন করে জানান, স্ত্রী সিঁড়ি থেকে পড়ে গেছেন। তাঁকে রাজামহেন্দ্রভরম সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 

খবর পেয়েই তড়িঘড়ি লক্ষ্মীর পরিবার ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। গিয়েই দেখেন লক্ষ্মীর কঙ্কালসার চেহারা। দেহ ভর্তি নতুন ও পুরনো আঘাতের চিহ্ন। লক্ষ্মীর রহস্যমৃত্যু ঘিরে থানায় অভিযোগ দায়ের করে লক্ষ্মীর পরিবার। থানায় পুলিশের কাছে আরও বিস্ফোরক অভিযোগ জানান তাঁরা। 

লক্ষ্মীর বাবা, মা পুলিশকে জানিয়েছেন, বিয়ের সময় লক্ষ লক্ষ টাকা পণ হিসেবে দেওয়া হয়েছিল। দুই একর আম গাছের জমি, চাষের জমি, নগদ দশ লক্ষ টাকা, দশ লক্ষ টাকার সোনার গয়নাও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারপরেও সন্তুষ্ট ছিল না শ্বশুরবাড়ি। আরও পণের দাবিতে বিয়ের পর থেকেই তাঁরা নির্যাতন শুরু করেন। গত দুই বছর টানা তাঁকে বাড়িতে বন্দি করে রাখা হয়। তাঁকে খেতেও দেওয়া হত না দিনের পর দিন। তার পাশাপাশি চলত শারীরিক নির্যাতন, বেধড়ক মারধর। 

আরও পড়ুন: নিম্নচাপের চোখ রাঙানি! ২ ঘণ্টায় ৫ জেলা ভেসে যাবে তুমুল বৃষ্টিতে, বাংলায় ফের ভারী বৃষ্টির দাপট শুরু

এমনকী লক্ষ্মীর ছেলের সঙ্গেও দেখা করতে দেওয়া হত না। কারও সঙ্গে লক্ষ্মীর দেখা করার অনুমতি ছিল না। দেখা করলেই ছেলের প্রাণ সংশয়ের হুমকি দিতেন স্বামী। তাঁদের অভিযোগ, দিনের পর দিন অত্যাচারের জেরেই লক্ষ্মীর মৃত্যু হয়েছে। এদিকে লক্ষ্মীর পরিবারের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নরেশ ও তাঁর দাদা। তাঁদের দাবি, লক্ষ্মী অ্যামেনিয়া ও থাইরয়েডের সমস্যায় দীর্ঘদিন ধরেই ভুগছিলেন। সেই সমস্যার জেরেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। ঘটনাটি ঘিরে মামলা রুজু করে চালাচ্ছে পুলিশ। 

প্রসঙ্গত, শনিবারেই গ্রেটার নয়ডায় পণের জন্য আরও এক তরুণীর মর্মান্তিক পরিণতি হয়। ২০১৬ সালের ১০ ডিসেম্বর একই অনুষ্ঠানে নিকি এবং কাঞ্চন ভাই বিপিন এবং রোহিতকে বিয়ে করেন। কাঞ্চনের অভিযোগের ভিত্তিতে দায়ের করা এফআইআর অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিকিকে তাঁর স্বামী এবং শাশুড়ি দয়া আক্রমণ করে। কাঞ্চন বাধা দিলে তাকেও মারধর করা হয়। বিপিন নিকির উপর দাহ্য পদার্থ ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। কাঞ্চনের রেকর্ড করা মর্মান্তিক দৃশ্যে দেখা যাচ্ছে যে বিপিন নিকিকে আক্রমণ করছে। আরও একটি ক্লিপে দেখা যাচ্ছে যে জ্বলন্ত নিকি হোঁচট খাচ্ছেন সিঁড়ি দিয়ে। তাঁকে দ্রুত নিকটবর্তী একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় যেখানে তাঁকে দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে রেফার করা হয়, যেখানে তাঁর মৃত্যু হয়। কাঞ্চন বলেন যে তিনি অভিযুক্তদের বলতে শুনেছেন, “ওকে মেরে ফেলো, শেষ করে দাও।” 

নিকি এবং বিপিনের একটি ছয় বছরের ছেলে আছে। সে তার মায়ের উপর হওয়া নির্যাতন এবং মৃত্যুকে প্রত্যক্ষ করেছে। নিকি মারা যাওয়ার পর কাঁপতে থাকা ছেলেটি বলে, “তারা প্রথমে মায়ের উপর কিছু একটা চাপিয়ে দেয়। তারপর তাকে থাপ্পড় মারে এবং তারপর লাইটার দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।” 

নিকির দিদি কাঞ্চন ও বাবা জানিয়েছেন, বিয়ের সময় স্করপিও এসইউভি, রোয়াল এনফিল্ড বাইক, নগদ টাকা এবং সোনার গয়না পণ হিসেবে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারপরেও মন ভরেনি বিপিন ও তাঁর পরিবারের। আরও ৩৬ লক্ষ টাকা দাবি করেছিলেন। সেই টাকা না পাওয়া জীবন্ত অবস্থায় নিকিকে জ্বালিয়ে দেন। অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় তরুণীর মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় শনিবারেই বিপিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরিবারের বাকি সদস্যদের রবিবার গ্রেপ্তার করে তারা।