আজকাল ওয়েবডেস্ক: প্রেমের সম্পর্কের ভয়ঙ্কর পরিণতি। বিয়ের আলোচনার অজুহাতে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়াকে বেধড়ক পিটিয়ে খুন‌। খুনের অভিযোগ উঠেছে তাঁর প্রেমিকার পরিবারের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘিরে তুমুল উত্তেজনা ছড়িয়েছে এলাকায়। 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, নৃশংস হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে তেলেঙ্গানায়। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাটি ঘটেছে সাঙ্গারেড্ডি জেলায়। মৃত তরুণ, দ্বিতীয় বর্ষের ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া ছিলেন। তাঁর প্রেমিকার পরিবারের হাতেই মর্মান্তিক পরিণতি হয়েছে। বিয়ের আলোচনা করতে বাড়িতে ডেকেছিলেন তরুণকে। সেই সময়ে ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়াকে খুন করা হয়েছে। 

পুলিশ আরও জানিয়েছে, মৃত তরুণের নাম, জ্যোতি শ্রবণ সাঁই। তিনি সেন্ট পিটার্স ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কম্পিউটার সায়েন্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। পড়াশোনার জন্য কুথবুল্লাপুরে একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। তাঁর প্রেমের সম্পর্কে আপত্তি ছিল তরুণীর পরিবারের। একাধিকবার হুমকি দিয়ে প্রেমের সম্পর্ক ভাঙতেও বলা হয়েছিল। এরপর ভয়াবহ হামলা চালানো হল তরুণের উপর। 

এক পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, শ্রবণ ১৯ বছর বয়সি শ্রীজার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে ছিলেন। এই সম্পর্কটি মেনে নেয়নি শ্রীজার পরিবার‌। অতীতে একাধিকবার যা ঘিরে ঝামেলা হয়েছিল। ঘটনার দিন শ্রবণকে শ্রীজার পরিবার বাড়িতে ডাকে। বিয়ের আলোচনা করবে বলেও জানায়। প্রেমিকার বাড়িতে পা রাখতেই তাঁর উপর হামলা চালায় পরিবারের সদস্যরা ও শ্রীজার মা। ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে বেধড়ক মারধর করে তাঁকে। 

মাথায় গুরুতর চোট পান শ্রবণ। দুটো পা ভেঙে যায় তাঁর। তড়িঘড়ি করে এক বেসরকারি হাসপাতালে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। ঘটনাটি ঘিরে খুনের মামলা রুজু করেছে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে ক্রিকেট ব্যাটটিও উদ্ধার করেছে তারা। জোরকদমে তদন্ত চলছে। 

প্রসঙ্গত, দিন কয়েক আগে মহারাষ্ট্রের নান্দেদে এমন আরেকটি ঘটনা ঘটেছিল। তফশিলি জাতির তরুণের সঙ্গে প্রেম। পরিবারের তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও সম্পর্ক ভাঙেননি তরুণী। শেষমেশ তাঁর অনুপস্থিতিতেই প্রেমিককে নৃশংসভাবে খুন করে তরুণীর পরিবারের সদস্যরা। 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, তিন বছরের প্রেমের সম্পর্ক ভাঙতে মরিয়া হয়ে ওঠে আঁচলের বাড়ির লোকেরা। সক্ষম তাতেকে এলাকায় দেখতে পেয়েই বাড়ির কাছে ডেকে পাঠায় আঁচলের বাবা, ভাইয়েরা। গত বৃহস্পতিবার সক্ষমকে মারধর করে, মাথায় গুলি করে খুন করা হয়। পরে পাথর দিয়ে মাথা থেঁথলে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। 

শুক্রবার সকালে খবরের কাগজে সক্ষমের মৃত্যুর খবর জানতে পারেন আঁচল। শেষকৃত্য চলাকালীন আঁচল সক্ষমের বাড়িতে পৌঁছন। নিথর প্রেমিকের হাত দিয়ে নিজের সিঁথি সিঁদুরে রাঙিয়ে তোলেন যুবতী। সক্ষমের বিধবা স্ত্রী হিসেবে বাকি জীবন শ্বশুড়বাড়িতে থাকার সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি। সক্ষমের খুনিদের মৃত্যুদণ্ড দাবি করার সময় বলেন, "আমাদের ভালবাসা জিতেছে, এমনকী সক্ষমের (প্রেমিকের নাম) মৃত্যুতেও আমার বাবা এবং ভাইয়েরা হেরে গিয়েছে।" জোর গলায় আঁচল বলতে থাকেন, তিনি বিয়ে করেছেন কারণ সক্ষম মারা গেলেও তাঁদের ভালবাসা এখনও বেঁচে আছে। গোটা পরিবারের মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানিয়েছেন আঁচল। 

পুলিশ জানিয়েছে, ১২ ঘণ্টার মধ্যে মোট আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযুক্তদের তালিকায় রয়েছে, আঁচলের বাবা গজানন বালাজি মামিদওয়ার, মা জয়শ্রী মামিদওয়ার, দাদা সাহিল গজানন মামিদওয়ার, সোমেশ সুভাষ, বেদান্ত অশোক কুন্দেকার, চেতন বালাজি মামিদওয়ার, আরও এক অজ্ঞাত পরিচয়ের ব্যক্তি‌। এই অভিযুক্তদের মধ্যে আঁচলের ১৭ বছরের এক ভাইও আছে। সক্ষম হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গতকাল ছ'জনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। ধৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে আট। 

এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে আঁচল জানিয়েছেন, সক্ষম জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরেই খুনের পরিকল্পনা করেছিল পরিবারের সদস্যদের। বৃহস্পতিবার সকালে তাঁকে নিয়ে থানায় গিয়েছিল দাদা, ভাইয়েরা। মিথ্যে মামলায় সক্ষমকে ফাঁসানোর পরিকল্পনা ছিল তাদের। কিন্তু পুলিশ সেই মামলা রুজু না করে, সক্ষমকে খুনের উস্কানি দেয়। থানা থেকে ফিরেই বৃহস্পতিবার তাঁর অনুপস্থিতিতে সক্ষমকে নির্মমভাবে খুন করে তারা। 

আঁচল আরও জানিয়েছে, 'সক্ষম তফশিলি জাতির ছিল বলেই পরিবারের আপত্তি ছিল বিয়েতে। পরিবার জানিয়েছিল, আমাকে বিয়ে করতে হলে জাতি বদলে ফেলতে হবে। তার জন্যেও প্রস্তুত ছিল সক্ষম। আমার পরিবার ওকে শেষ করার অপেক্ষায় দিন গুনছিল।' প্রত্যক্ষদর্শীরাও জানিয়েছেন, সক্ষমকে কাছে পেয়েই তড়িঘড়ি গুলি চালায় আঁচলের ভাই। স্থানীয়রা হস্তক্ষেপ করার আগেই সক্ষমের মৃত্যু হয়।