আজকাল ওয়েবডেস্ক: দিনের পর দিন শ্বশুরবাড়িতে চরম নির্যাতন। কখনও মারধর, কখনও বা খেতে না দেওয়া, কখনও আবার যৌন নির্যাতন। লাগাতর শ্বশুরের যৌন নির্যাতন সহ্য করতে না পেরেই চরম পদক্ষেপ করলেন ৩২ বছরের এক যুবতী। গায়ে আগুন জ্বালিয়ে আত্মঘাতী হলেন তিনি।
যুবতীর অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই পণের জন্য চাপ দিতেন শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা। কখনও কখনও চলত চরম শারীরিক নির্যাতন। কখনও আবার মানসিক নির্যাতন। নিত্যদিন সংসারে অশান্তি হতেই থাকত। এর পাশাপাশি ফাঁকা বাড়িতে প্রায়ই যৌন নির্যাতন করতেন শ্বশুর। লাগাতার অত্যাচার, অপমানের জেরেই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন তিনি।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে তামিলনাড়ুতে। পুলিশ জানিয়েছে, তামিলনাড়ুর রমানাথপুরমের ঘটনা এটি। যুবতী শ্বশুরবাড়িতেই গায়ে আগুন জ্বালিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন আত্মহত্যার আগে একটি ভিডিও রেকর্ড করেছেন। সেই ভিডিওতে তাঁর ছেলেকে কিছু কথা বলতে দেখা গেছে।
আরও পড়ুন: খালের ধারে বস্তায় ও কী! আলতো করে খুলতেই বেরিয়ে এল ঠান্ডা হাত, শিউরে ওঠা কাণ্ড এই শহরে
যুবতী জানিয়েছেন, ১৩ বছর আগে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। শ্বশুরবাড়িতে পা রাখা মাত্রই শুরু হয় নির্যাতন। আরও পণের দাবি ছিল তাঁদের। কখনও হাজার হাজার টাকা চাইতেন। কখনও বা আরও সোনার গয়না। শাশুড়ি, শ্বশুর, স্বামী, সকলের দ্বারাই নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তিনি। তাই বাধ্য হয়েই এই পদক্ষেপ করছেন।
শ্বশুরের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ জানিয়ে তিনি জানিয়েছেন, ফাঁকা বাড়িতে প্রায়ই তিনি যৌন নির্যাতন করতেন। বাড়িতে কেউ না থাকলেই শ্বশুর জড়িয়ে ধরতেন। নির্জনতার সুযোগে অশ্লীলভাবে বধূকে ছুঁতেন তিনি। প্রতিবাদ করেও লাভ হয়নি। শ্বশুর পাল্টা হুমকি দিতেন। স্বামী নিত্যদিন মদ্যপ অবস্থায় বাড়ি ফিরতেন। সেই অবস্থাতেই যুবতীকে মারধর করতেন তিনি। শ্বশুরের কীর্তি একাধিকবার জানিয়েও লাভ হয়নি। স্বামীর দাবি, শ্বশুরবাড়িতে থাকতে গেলে সবকিছুই সহ্য করতে হবে। প্রতিবাদ করেও লাভ হবে না।
এখানেই শেষ নয়। যৌন নির্যাতনের পাশাপাশি পণের জন্যেও নির্যাতনের শিকার হতেন তিনি। শাশুড়ি আরও টাকা ও সোনার গয়নার দাবি করেছিলেন। নির্যাতনের বিষয়টি নিজের ছেলেকে বলেছিলেন তিনি। তাঁর একমাত্র ছেলে সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া। ভিডিওতে সে বলেছে, তার চোখের সামনেই চরম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মা।
গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার পর যুবতীর শরীরের ৭০ শতাংশ পুড়ে যায়। এই অবস্থায় তাঁকে মাদুরাইয়ের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানেই চিকিৎসা চলাকালীন প্রাণ হারান তিনি। মৃত্যুর আগে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে গেছেন, 'আমার শ্বশুর যখন তখন জড়িয়ে ধরতেন। আর সহ্য করতে পারছিলাম না এই আচরণ। এই কারণেই নিজেকে শেষ করলাম।'
যুবতীর পরিবারের সদস্যরা পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছেন। ১৩ বছর আগে বিয়ের পর থেকেই তিনি যে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, তাও স্বীকার করেছেন তাঁরা। এও জানিয়েছেন, বিয়ের পর থেকে যুবতীকে বাপের আসতে দিতেন না তাঁর স্বামী। ঘটনাটি ঘিরে মামলা রুজু করেছে পুলিশ। এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। আত্মহত্যার ঘটনার মামলা রুজু করা হয়েছে। সব দিক খতিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
