আজকাল ওয়েবডেস্ক: জয়পুরে মাত্র নয় বছরের এক ছাত্রী স্কুলের চার তলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হয় গত পয়লা অক্টোবর। একটি তদন্ত কমিটি জানিয়েছে, মৃত্যুর আগে শেষ ক্লাসে মেয়েটি প্রায় ৪০ মিনিট ধরে চরম মানসিক কষ্টের মধ্যে ছিল। বারবার সহপাঠীদের নামে নালিশ জানালেও শিক্ষকের থেকে সে কোনও সাহায্য পায়নি। সিসিটিভি ফুটেজে ক্লাস ফোরের ওই ছাত্রীকে ঝাঁপ দিতে দেখা যায়, যা দেখে দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
পাঁচ সদস্যের তদন্তকারী দলের প্রধান, জেলা শিক্ষা আধিকারিক রামনিবাস শর্মা জানিয়েছেন, শ্রেণিকক্ষের ফুটেজ দেখেই সবটা পরিষ্কার হয়েছে। দেখা যায়, পাঁচ থেকে সাতজন সহপাঠী লাগাতার মেয়েটিকে বিরক্ত ও হেনস্থা করছিল। শর্মা বলেন, "৪০ মিনিটের ক্লাসে মেয়েটি অন্তত তিন বার শিক্ষকের কাছে অভিযোগ নিয়ে গিয়েছিল।" কিন্তু প্রথম দিকে তার কোনও অভিযোগকেই শিক্ষক পাত্তা দেননি। যদিও ফুটেজে আওয়াজ পাওয়া যায়নি, তবুও ভিডিও দেখেই বোঝা যাচ্ছিল মেয়েটি ভীষণভাবে চাপের মধ্যে ছিল। শর্মা জানান, "সে ক্রমাগত সহপাঠীদের বিষয়ে অভিযোগ জানাচ্ছিল, কিন্তু শিক্ষক কেবল তাকে নিজের জায়গায় ফিরে যেতে বলছিলেন।"
মেয়েটিকে যারা উত্ত্যক্ত করছিল, তাদেরও শিক্ষককে পাল্টা অভিযোগ জানাতে দেখা যায়। এর পরই শিক্ষক উঠে দাঁড়িয়ে গোটা ক্লাসকে শান্ত থাকতে বলেন এবং সবাইকে আসনে ফিরে যেতে নির্দেশ দেন।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার পর প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা চলেছে। পুলিশ আসার আগেই সব ধুয়ে মুছে সাফ। ঘটনার সঠিক কারণ জানতে এবং মৃত্যুর কারণ নির্ধারণে কর্মকর্তারা স্কুলের বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা শুরু করেন। মানসরোবর থানার এসএইচও লক্ষ্মণ খাটানা সাংবাদিকদের জানান, মৃত ওই কিশোরী তার বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান ছিল। নীরজা মোদি স্কুলের চারতলা থেকে সে পড়ে যাওয়ার পর গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে দ্রুত নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
জয়েন্ট পেরেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র অভিষেক জৈন অবশ্য দাবি করেছেন যে, এটি আত্মহত্যারই ঘটনা। পাশাপাশি তাঁর অভিযোগ, শিক্ষিকার আচরণে মেয়েটি ক্ষুব্ধ ছিল। এ প্রসঙ্গে জৈন বলেন, "আমরা অনেক ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। জানা গিয়েছে যে এক শিক্ষিকার আচরণে হতাশ হয়ে সে চারতলা থেকে ঝাঁপ দেয়। যদিও স্কুল কর্তৃপক্ষ ঘটনার স্থান পরিষ্কার করে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করেছে।"
তিনি আরও বলেন, "সরকার বা স্কুল কেউই নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে না। কোনও ঘটনা ঘটলেই তারা কেবল নড়েচড়ে বসে।" অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, স্কুলের বিভিন্ন কমিটিতে অভিভাবকদের অন্তর্ভুক্ত করা হোক, যাতে তাঁরা তাদের পরামর্শ দিতে পারেন। এসএইচও জানিয়েছেন, তদন্ত শেষ হওয়ার পরেই কিশোরীর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
ওই অফিসার আরও জানান, "ঘটনাস্থল থেকে নমুনা সংগ্রহ করতে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের ডাকা হয়েছিল। বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করা হবে। জয়পুরিয়া হাসপাতালে মৃতদেহের ময়নাতদন্ত চলছে। সেখানে মেয়েটির বাবা-মা এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত আছেন।"
এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেন স্কুল শিক্ষামন্ত্রী মদন দিলাওয়ার। তিনি বলেন, "মনে হচ্ছে, স্কুলে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। এটা বড়সড় গাফিলতি। কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে দেখা উচিত ছিল। আমি জেলা শিক্ষা অফিসারকে বিষয়টি তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিতে বলেছি।"
