আজকাল ওয়েবডেস্ক: সম্প্রতি মুম্বইয়ের বৃহন্মুম্বই মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (BMC) জানিয়েছে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত মোট ১০,৭৭৮টি পথকুকুর সংক্রান্ত অভিযোগ পেয়েছে তারা। এই বিশাল সংখ্যক অভিযোগ শহরের বাসিন্দাদের মধ্যে পথকুকুর নিয়ে ভয়াবহ আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এহেন পরিস্থিতি শহরে বাড়তে থাকা পথকুকুর কেন্দ্রিক উদ্বেগকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরছে। ফলস্বরূপ রাস্তার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। রাস্তায় চলাফেরার সমস্যা থেকে শুরু করে র‍্যাবিসসহ বিভিন্ন সংক্রামক রোগের ঝুঁকি নিয়ে জনসাধারণ অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, নাগরিকদের সমস্যা জানানোর প্রক্রিয়া সহজ করতে বিএমসি (BMC) তাদের 'মাই বিএমসি' (MyBMC) মোবাইল অ্যাপ ও অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে সম্প্রতি একটি অনলাইন অভিযোগের বিশেষ ব্যবস্থাপনা করেছে। জানা গিয়েছে, যে কেউ সেখানে রেজিস্ট্রেশন করে, লগ ইন করে, সমস্যার অবস্থান ও ধরন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিয়ে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। অভিযোগ জমা করার পরই সংশ্লিষ্ট ফোন নম্বরে একটি রেফারেন্স নম্বর পাঠানো হয়। পরে ব্যবস্থা নেওয়ার পর আপডেটও জানিয়ে দেওয়া হয়।

এমনকি সমস্যার দ্রুত সমাধান নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে সপ্তাহে অন্তত তিনবার এসব নানা ধরণের অভিযোগ পর্যালোচনার নির্দেশ দিয়েছে। বিএমসি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, এর ফলে অভিযোগগুলো দ্রুত ট্র্যাক করা যাচ্ছে এবং সেই সমস্ত ঘটনাস্থলে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে।

পথকুকুর নিয়ন্ত্রণ মুম্বইয়ের জন্য নতুন কোনও সমস্যা নয়। সূত্র অনুযায়ী ১৯৯৪ সাল থেকেই বিএমসি পথকুকুরদের নির্বীজকরণ ও র‍্যাবিস প্রতিরোধমূলক কর্মসূচির দায়িত্বে রয়েছে। হিসেব করে দেখা গিয়েছে, ২০২৩ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে মোট ৪,২০,৩৪৫টি পথকুকুরকে নির্বীজ এবং টিকাদান করেছে বিএমসি।

বর্তমানে মুম্বই জুড়ে বিএমসি-র পশু চিকিৎসা বিভাগের অধীনে সাতটি নির্বীজকরণ কেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে। এই কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে পশু ও পাখি নিয়ন্ত্রণ শাখা এবং মোবাইল পশু চিকিৎসা পরিষেবা ইউনিট। নির্বীজকরণ ও নিয়মিত র‍্যাবিস টিকাদানই এখনও পর্যন্ত জনস্বাস্থ্য রক্ষার ও পথকুকুরদের আগ্রাসী হয়ে ওঠা প্রতিরোধের প্রধান কৌশল হিসেবে কাজ করছে।

আরও পড়ুনঃ 'চার দেওয়ালের মাঝে এসব চলে?' প্রশ্ন ছুঁড়লেন অনেকেই, গাজিয়াবাদে সোসাইটিতে যা হল... 

তবে চলমান এই উদ্যোগ সত্ত্বেও, ক্রমেই এই অভিযোগ বৃদ্ধির হার ইঙ্গিত দিচ্ছে যে সমস্যা এখনও সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বিএমসি সূত্র জানিয়েছে, মুম্বই শহরের অতিমাত্রায় জনবহুলতা, খোলা আবর্জনার স্তূপের সহজলভ্যতা এবং জনসমক্ষে পথকুকুরদের খাওয়ানোর প্রবণতা এই সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে।

কর্মকর্তারা নাগরিকদের অনুরোধ জানিয়েছেন, তাঁরা যেন এই অনলাইন অভিযোগ ব্যবস্থা নির্দিষ্ট সময়ে সক্রিয়ভাবে ব্যবহার করেন। এই পদ্ধতির মাধ্যমে প্রতিটি অভিযোগ রেকর্ড, ট্র্যাক করা সম্ভব হবে। এমনকি গঠিত প্রক্রিয়ায় সমাধান করা সম্ভব হয়। বর্তমানে অনেক জনসাধারণ আশা করছেন, সঠিক নজরদারি, দ্রুত পদক্ষেপ এবং দায়িত্ববান সামাজিক আচরণের মাধ্যমে মুম্বইয়ে পথকুকুর সংক্রান্ত সমস্যার সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে আসবে।

আরও পড়ুনঃ নাগপুরে মর্মান্তিক দৃশ্য! ট্রাকের ধাক্কায় স্ত্রীর মৃত্যু, অসহায় স্বামী মোটরবাইকে বেঁধে নিয়ে গেলেন স্ত্রীর মরদেহ

প্রসঙ্গত, তামিলনাড়ুতে সম্প্রতি এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। তামিলনাড়ুর মাদুরাইয়ে এই দু্র্ঘটনাটি ঘটেছে। এহেন মর্মান্তিক কাণ্ড স্থানীয় সকলেই ভীত সন্ত্রস্ত। খবর মারফত জানা গিয়েছে, রাস্তা দিয়ে যাওয়া একটি পথকুকুর আচমকা এক তরুণকে আক্রমণ করেছে। এই আক্রমণের ঘটনায় এলাকাজুড়ে শোরগোল। ঘটনার ভিডিও ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে৷ সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ী,  পথকুকুরটি হঠাৎ করে একটি বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়ে। এরপর ওই কুকুর বাড়িতে থাকা ৮ বছর বয়সী এক শিশুকে কামড়ে দেয়। 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, শিশুটি স্কুলে যাওয়ার আগে বাথরুমে যেতে গিয়েই এই ভয়াবহ ঘটনা ঘটে। খবর অনুয়ায়ী তখনই এই হামলা হয়। শিশুটির হাতে, পায়ে এবং উরুতে কুকুরটি কামড় দেয়। তার চিৎকার শুনে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা সেখানে ছুটে আসে। শিশুর বাবা তাকে বাঁচাতে গেলে কুকুরটি তার বাবাকেও আক্রমণ করে।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, কুকুরটি বাড়ির ভিতর উত্তেজিতভাবে দৌড়াদৌড়ি করছে এবং আক্রমণাত্মকভাবে মানুষকে তাড়া করছে। ঘটনার জেরে, বাবা ও ছেলেকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জানা গিয়েছে৷ ছেলেটির তিনটি স্থানে সেলাই দিতে হয় এবং তাকে অ্যান্টি-র‍্যাবিস চিকিৎসা দেওয়া হয়।