আজকাল ওয়েবডেস্ক: মুম্বইয়ে পাওয়াইয়ের এক অডিশন রুমে বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘটে গিয়েছে চাঞ্চল্যকর ঘটনা। যে রুমে শুরু হয়েছিল সাধারণ এক সিনেমার অডিশন, সেখানে মাত্র ৩৫ মিনিটের মধ্যেই তা পরিণত হয় ভয়াবহ হস্টেজ রেসকিউ অপারেশনে। 

শেষে পুলিশের তৎপরতায় উদ্ধার হয় ১৭ জন শিশু সহ ১৯ জন হস্টেজ। পুলিশের গুলিতে আহত অবস্থায় ধরা পড়েন অভিযুক্ত রোহিত আর্য (৩৮), যিনি পরে হাসপাতালে মারা যান। 

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনাস্থলে পৌঁছে মাত্র ৩৫ মিনিটের মধ্যেই অপারেশনটি সম্পন্ন করে মুম্বই পুলিশের কুইক রিঅ্যাকশন টিম (QRT)। আট জন কম্যান্ডো বাথরুমের একটি সরু প্রবেশপথ দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করেন, যাতে অভিযুক্তকে অপ্রস্তুত অবস্থায় ধরা যায় এবং হস্টেজরাও যাতে কোনওভাবে বিপদে না পড়েন।

পুলিশের এক সিনিয়র অফিসার জানান, ‘প্রথমে অভিযুক্তের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করা হয়, যাতে রক্তপাত না ঘটে।’ কিন্তু রোহিত আর্য, যিনি একটি বন্দুক, কিছু রাসায়নিক এবং লাইটার হাতে নিয়ে হুমকি দিচ্ছিলেন, দাবি করেন যে পুলিশ এগোলেই তিনি গুলি চালাবেন এবং ঘরে আগুন ধরিয়ে দেবেন।

অবশেষে আলোচনার চেষ্টা ব্যর্থ হলে, আর্য পুলিশের ওপর নিজের বন্দুক দিয়ে গুলি চালান। পাল্টা জবাব দেন কম্যান্ডোরা। হেড কম্যান্ডো নিজেই গুলি চালিয়ে অভিযুক্তকে আহত করেন। পরে জানা যায়, আর্যের হাতে থাকা বন্দুকটি আসলে একটি এয়ারগান ছিল।

‘আমরা কোনও ঝুঁকি নিতে পারতাম না,’ বলেন পুলিশের এক কর্মকর্তা। ‘যেই মুহূর্তে সে গুলি চালায়, আমরা তৎক্ষণাৎ পাল্টা গুলি চালাই।’ আহত আর্যকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার সময় স্টুডিওর ভিতরে ছিল এক আতঙ্কজনক পরিস্থিতি। একজন কর্মকর্তা জানান, ‘ঘরটি এতটাই গাদাগাদি ছিল যে, কম্যান্ডোরা ক্যামেরার আলো, সরঞ্জাম উল্টে যাওয়া অবস্থায় শিশুদের আড়াল করে সামনে এগিয়ে যায়।’

পরে ফরেনসিক দল ঘটনাস্থল থেকে এয়ারগান, রাসায়নিক পদার্থ এবং লাইটার উদ্ধার করে পরীক্ষার জন্য পাঠায়। পুলিশের ধারণা, অভিযুক্ত আরও ক্ষতি করার পরিকল্পনা করেছিল।

সবশেষে, ১৫ বছর বয়সী ১৭ জন শিশুসহ মোট ১৯ জনকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়। সকলের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে তাদের অভিভাবকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।জানা যায়, অভিযুক্ত রোহিত একদল শিশুকে ‘অডিশন’ দেওয়ার জন্য ডেকেছিলেন সেখানে।

আচমকা সকলকে চলে যেতে বলে, সেখানে শিশুদের বন্দি করে রাখেন। ভিডিও বার্তায় ছড়িয়ে দেন পণবন্দি করার ঘটনা। জানিয়ে দেন, যা কিছু ঘটতে পারে, যে কোনও মুহূর্তে। পুলিশ জানিয়েছে, ৮ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের প্রায় দু’ ঘন্টা ধরে আটকে রেখেছিলেন রোহিত।

তাঁর দাবি মানা না হলে, ওই স্টুডিওতে আগুন ধরিয়ে দেবেন, এমন ভয়াবহ বার্তাও দেন ভিডিওর মাধ্যমে। ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমি রোহিত আর্য। আত্মহত্যা করে মারা যাওয়ার পরিবর্তে, আমি একটি পরিকল্পনা করেছি এবং এখানে কিছু শিশুকে পণবন্দি করে রাখছি।’

তিনি বলেন, ‘সহজ দাবি, নৈতিক দাবি, এবং কয়েকটি প্রশ্ন রয়েছে আমার।’ তিনি শিশুদের বদলে যদিও কোনও টাকা পয়সা দাবি করেননি। কেবল নিজের কথা বলতে চেয়েছিলেন বলে জানা গিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমি সহজ কথাবার্তা বলতে চাই, আর সেই কারণেই আমি এই শিশুদের পণবন্দি করে রেখেছি। যদি আমি বেঁচে থাকি, আমি এটা করব, যদি আমি মারা যাই, অন্য কেউ করবে, কিন্তু এটা অবশ্যই ঘটবে।’

বৃহস্পতিবার দুপুর দুটো নাগাদ, পুলিশের কাছে খবর পৌঁছতেই, পুলিশ তৎক্ষণাৎ যোগাযোগ করে রোহিত নামক ওই যুবকের সঙ্গে। তাঁর দাবিদাওয়া শোনা হয়। পুলিশ ওই শিশুদের মুক্তি দেওয়ার কথা বললে, সেই প্রসঙ্গে কিছুতেই সম্মতি দেননি রোহিত।

একাধিকবার আলোচনায় ব্যর্থ হয়ে, বেশ কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে পুলিশ কর্তারা ওই স্টুডিওতে ঢুকে পড়েন। এর পরেই শুরু হয় উদ্ধারকার্যের রুদ্ধশ্বাস গুলির লড়াই পর্ব। রোহিত এয়ার গান থেকে গুলি চালান। পুলিশ পালটা গুলি চালালে, আহত হন যুবক। তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলেও, শেষ রক্ষা হয়নি।