আজকাল ওয়েবডেস্ক: এসআইআর-এর কাজে ক্রমেই বাড়ছে চাপ। কাজের চাপে মানসিকভাবেও বিধ্বস্ত হয়ে পড়ছেন অনেকে। এবার মধ্যপ্রদেশে বিএলওদের মৃত্যুমিছিল। শনিবার কমপক্ষে দু'জন বিএলও-র মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে এসেছে এই রাজ্যেই। 

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, রাইসেন এবং দামোহ জেলায় কর্মরত ছিলেন রমাকান্ত পাণ্ডে এবং সীতারাম গন্ড। রমাকান্ত পেশায় ছিলেন একজন শিক্ষক ছিলেন। সুলতানপুর এলাকায় একটি স্কুলে কর্মরত ছিলেন তিনি। মন্দিদীপ এলাকায় বিএলও হিসাবে তিনি দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন। গত শুক্রবার রাতে আচমকা তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর মধ্যরাতে তাঁর মৃত্যু হয়। পরিবারের অভিযোগ, এসআইএর-এর কাজ নিয়ে প্রবল চাপে ছিলেন তিনি। এর জেরেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। 

অন্যদিকে রানজ্রা গ্রামের বিএলও হিসাবেও তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন পেশায় শিক্ষক সীতারাম। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে এনুমারেশন ফর্ম ভরার সময় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তড়িঘড়ি তাঁকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। শুক্রবার সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, গত কয়েকদিন ধরেই কাজের চাপে ধকল আর সহ্য করতে পারছিলেন না। তার জেরেই মৃত্যু হয়েছে সীতারামের। 

দিন কয়েক আগেই মধ্যপ্রদেশের আরও এক শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। বিএলও হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন ভুবন সিং চৌহান নামের এক শিক্ষক। কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ সাসপেন্ড করা হয়েছিল তাঁকে। এর জেরেই মানসিক চাপে, হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। অন্যদিকে চলতি মাসেই দাতিয়া জেলায় কাজের চাপে বিধ্বস্ত হয়ে আত্মঘাতী হন এক বিএলও। 

প্রসঙ্গত, দেশের ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বর্তমানে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন অভিযান চলছে। এই সময়ে প্রতিটি বিএলওকে নির্দিষ্ট বুথ এলাকার অন্তর্গত পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভোটার তথ্য হালনাগাদ করতে হচ্ছে। 

বিহার, মধ্যপ্রদেশের মতো বাংলাতেও চালু হয়েছে ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর প্রক্রিয়া। যার জেরে অনেকের মধ্যেই আতঙ্ক লক্ষ্য করা গিয়েছে। সম্প্রতি রাজ্য জুড়ে কয়েকটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় মৃতের পরিবারের তরফে দাবি করা হয়েছে, এসআইআর-এর কারণেই মৃত্যু হয়েছে। 

এসআইআর আতঙ্কে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে আগরপাড়ায়। প্রদীপ করের মৃত্যুতে প্রতিবেশীরা দাবি করেছিলেন, তাঁর ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে। তবুও তিনি আতঙ্কিত ছিলেন। তাই নিজেকে শেষ করে দেন। গত বুধবার দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ভাঙড়ের জয়পুর এলাকার যুবক সফিকুল গাজি (৩৫) এসআইআর আতঙ্কে আত্মঘাতী হয়েছেন বলে তাঁর পরিবারের দাবি। তাঁরা স্ত্রী জানান, গত কয়েক দিন ধরে আতঙ্কে ছিলেন স্বামী। বার বার বলছিলেন, তাঁর কোনও পরিচয়পত্র নেই। ভাই-বাপ কেউ নেই। স্ত্রী বার বার অভয় দেওয়ার চেষ্টা করলেও গত বুধবার সকালে তিনি নিজেকে শেষ করে দেন। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে বহরমপুর থানার অন্তর্গত গান্ধী কলোনী এলাকায় গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হন এক ব্যবসায়ী। সেক্ষেত্রেও পরিবাররে দাবি ছিল, আত্মহত্যার কারণ এসআইআর আতঙ্ক। ২০০২ সালে ভোটার তালিকায় নাম না থাকায় ‘দেশ ছাড়তে হবে’ এই আতঙ্কে গত ৪ নভেম্বর কীটনাশক খেয়ে আত্মঘাতী হন মুর্শিদাবাদের কান্দির মোহন শেখ (৫৫)। 

এসআইআরের কাজ নিয়ে জটিলতা বাড়ছে দিনের পর দিন। নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ শেষের জন্য কার্যত চাপ দেওয়া হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের তরফে। অথচ পরিকাঠামোয় হাজারও ত্রুটি। ফলে খুব দ্রুত কাজ মুশকিল। আর এই পাহাড়প্রমাণ চাপের কাছে হার মানতে বাধ্য হচ্ছেন বহু বিএলও। অতিরিক্ত কাজের চাপে কেউ কেউ আত্মহত্যার পথও বেছে নিচ্ছেন। সুইসাইড নোটে তাঁরা স্পষ্ট করে লিখে যাচ্ছেন এসআইআর-এর কাজের চাপই তাঁদের এই চরম সিদ্ধান্তের কারণ। ধারাবাহিকভাবে এমন মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। 

শনিবার এক্স (X) হ্যান্ডেলে পোস্ট করে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছেন, “এসআইআরের চাপে এভাবে আর কত জীবন নষ্ট হবে? আর কত মৃতদেহ গুনতে হবে? বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর আকার নিচ্ছে।” তিনি আরও লেখেন, “কৃষ্ণনগরের চাপড়ার ২০১ নম্বর বুথের বিএলও, পার্শ্বশিক্ষিকা রিঙ্কু তরফদারের মৃত্যুর খবর অত্যন্ত মর্মান্তিক। তিনি সুইসাইড নোটে স্পষ্ট লিখে গিয়েছেন এসআইআর-এর অতিরিক্ত কাজের চাপ তাঁকে ভেঙে দিয়েছে।” 

মমতা ব্যানার্জি নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে দাবি করেন, অবিলম্বে এই পরিস্থিতির সমাধান করতে হবে। না হলে আরও প্রাণহানি থামানো যাবে না বলে সতর্ক করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, নদিয়ায় এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায় নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করে সুইসাইড নোট লিখে আত্মহত্যা করেন এক মহিলা বিএলও। মৃতের নাম রিঙ্কু তরফদার। বয়স আনুমানিক ৫৪ বছর। তিনি পেশায় পার্শ্বশিক্ষক ছিলেন এবং চাপরা বাঙালি স্বামী বিবেকানন্দ বিদ্যা মন্দিরে পড়াতেন।