আজকাল ওয়েবডেস্ক: কখনও কখনও আপনি অবাক হয়ে লক্ষ্য করেন, বাড়ির উঠোনে বা জানালার ধারে পড়ে আছে ছোট পাথর, বোতলের ঢাকনা, আংটি, চকচকে ধাতব টুকরো বা অন্য কোনও অদ্ভুত বস্তু। পরে জানা যায়, এই ‘উপহার’-এর নেপথ্যে রয়েছে কাক। প্রশ্ন হল—কাক কেন মানুষের জন্য এমন জিনিস রেখে যায়?


বিজ্ঞানীদের মতে, কাক অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও সামাজিক পাখি। তাদের স্মৃতিশক্তি প্রখর, সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা অসাধারণ এবং মানুষের আচরণ পর্যবেক্ষণ করার দক্ষতাও অনেক বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে, কাক মানুষের মুখ চিনতে পারে এবং কে তাদের প্রতি সদয়, আর কে ক্ষতিকর—তা মনে রাখতে সক্ষম।


অনেক ক্ষেত্রে এই তথাকথিত ‘উপহার’ আসলে কাকের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি রূপ। যদি কোনও মানুষ নিয়মিত কাককে খাবার দেয় বা তার প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ করে, তবে কাক সেই মানুষকে একটি ‘বিশেষ ব্যক্তি’ হিসেবে চিহ্নিত করে। এর প্রতিদান হিসেবে তারা আশপাশে পাওয়া আকর্ষণীয় বা চকচকে বস্তু এনে সেই জায়গায় রেখে যায়, যেখান থেকে তারা খাবার পায়। মানুষের চোখে এগুলো উপহার মনে হলেও, কাকের কাছে এটি সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখার একটি স্বাভাবিক আচরণ।


আরও একটি কারণ হতে পারে কাকের স্বভাবজাত কৌতূহল। কাক চকচকে বা অস্বাভাবিক জিনিসের প্রতি সহজেই আকৃষ্ট হয়। বোতলের ঢাকনা, ধাতব আংটি, কাচের টুকরো বা রঙিন পাথর তাদের কাছে খেলনার মতো। কখনও কখনও তারা এসব জিনিস সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে দেয়। যদি সেই জায়গাটি মানুষের সঙ্গে তাদের পরিচিত কোনও স্থান হয়, তবে মানুষ সেটিকে ‘উপহার’ হিসেবে ধরে নেয়।


বিজ্ঞানীরা আরও বলেন, কাকদের মধ্যে সামাজিক আদান-প্রদানের প্রবণতা রয়েছে। তারা নিজেদের গোষ্ঠীর সদস্যদের সঙ্গে খাবার বা বস্তু ভাগ করে নেওয়ার অভ্যাস রাখে। মানুষের সঙ্গে দীর্ঘদিনের ইতিবাচক যোগাযোগ থাকলে, কাক মানুষকেও সেই সামাজিক বৃত্তের অংশ হিসেবে গণ্য করতে পারে। ফলে মানুষের জন্য কিছু রেখে যাওয়া তাদের কাছে অস্বাভাবিক নয়।


তবে সব ক্ষেত্রেই যে কাক ইচ্ছাকৃতভাবে মানুষকে উপহার দিচ্ছে, এমনটা নয়। অনেক সময় তারা খাবারের বিনিময়ে কোনও কিছু পাওয়ার আশায় বা কেবল বস্তু রাখার সুবিধাজনক জায়গা হিসেবে মানুষের বাড়ির আশপাশ বেছে নেয়। তবুও বারবার একই জায়গায় নির্দিষ্ট ধরনের জিনিস রেখে যাওয়ার ঘটনা বিজ্ঞানীদের ধারণাকে জোরালো করে যে কাক মানুষের আচরণ বুঝে প্রতিক্রিয়া জানাতে সক্ষম।


সব মিলিয়ে বলা যায়, কাকের ‘উপহার’ দেওয়ার আচরণ তাদের অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা, স্মৃতি ও সামাজিক অনুভূতিরই প্রতিফলন। এই ঘটনাগুলি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রকৃতির অনেক প্রাণীই মানুষের চেয়ে কম সংবেদনশীল নয়—শুধু তাদের ভাষা আর প্রকাশভঙ্গি আলাদা।