আজকাল ওয়েবডেস্ক: পঞ্জাবে নতুন করে রাজনৈতিক বিতর্কের আগুন জ্বালালেন কংগ্রেস নেত্রী নাভজ্যোৎ কৌর সিধু। তাঁর দাবি, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হতে হলে লাগে “সুটকেসভর্তি ৫০০ কোটি টাকা”। তাঁর এই বক্তব্যে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। শুধু প্রতিপক্ষই নয়, পঞ্জাব কংগ্রেসের ভেতরেও চলছে চরম অসন্তোষ।

শনিবার রাজ্যপাল গুলাব চান্দ কাটারিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নাভজ্যোৎ কৌর জানান — তাঁর স্বামী এবং প্রাক্তন পঞ্জাব কংগ্রেস সভাপতি নাভজ্যোৎ সিং সিধু পুনরায় সক্রিয় রাজনীতিতে ফিরবেন, তবে একমাত্র শর্ত—কংগ্রেস তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করতে হবে।

তিনি সরাসরি অভিযোগ করেন, “আমাদের কাছে ৫০০ কোটি টাকার সুটকেস নেই মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার জন্য। কেউ আমাদের কাছ থেকে টাকা চায়নি ঠিকই, কিন্তু যিনি ৫০০ কোটি দেন, তিনিই মুখ্যমন্ত্রী হন।”

নাভজ্যোৎ কৌর আরও দাবি করেন, পঞ্জাব কংগ্রেসে অন্তর্ঘাতে ভরা, অন্তত পাঁচজন নেতা মুখ্যমন্ত্রী পদ চান এবং তাঁরা কখনও সিধুকে সামনে আসতে দেবেন না। তবুও তিনি বলেন, দল যদি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে, তাহলে সিধু রাজনীতিতে ফিরবেন, নয়তো তিনি “রাজনীতির বাইরে থেকেই ভালো আছেন।”

বিজেপির পালটা আক্রমণ

নাভজ্যোৎ কৌরের মন্তব্যে তৎক্ষণাৎ প্রতিক্রিয়া জানায় বিজেপি। দলের মুখপাত্র সুধান্শু ত্রিবেদী বলেন, তাঁর মন্তব্য প্রমাণ করে কংগ্রেসে দুর্নীতি "প্রাতিষ্ঠানিক রূপে" ছড়িয়ে পড়েছে। ত্রিবেদীর অভিযোগ — “কাউকে মুখ্যমন্ত্রী হতে হলে সুটকেসভর্তি ৫০০ কোটি টাকা দিতে হয় — এটাই কংগ্রেসের প্রকৃত চরিত্র।”

পঞ্জাব বিজেপির সভাপতি সুনীল জাখড় আরও এক ধাপ এগিয়ে দাবি করেন, অতীতে নাকি এক কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রীর পদ পেতে ৩৫০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছিল। তিনি একইসঙ্গে বর্তমান আম আদমি পার্টি সরকারের বিরুদ্ধেও তীব্র আক্রমণ করেন। তাঁর কথায়, “পঞ্জাব পুলিশের একাংশ আজ ইউনিফর্ম পরা গ্যাংস্টারে পরিণত হয়েছে। আইনের শাসন পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে।”

রাজনৈতিক অস্থিরতায় বাড়ছে প্রশ্ন

নাভজ্যোৎ সিং সিধু গত কয়েক মাস ধরে সক্রিয় রাজনীতির বাইরে। তিনি ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে প্রচারেও অংশ নেননি। বরং আবার আইপিএল ধারাভাষ্যে ফিরেছেন এবং সম্প্রতি নিজের ইউটিউব চ্যানেলও খুলেছেন। এই পরিস্থিতিতে তাঁর স্ত্রীর এ ধরনের মন্তব্য পঞ্জাব কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ কৌশল, নেতৃত্ব সংকট এবং দলীয় ঐক্য নিয়ে নতুন বিতর্ক তৈরি করেছে। পঞ্জাবে ২০২৭ সালের বিধানসভা নির্বাচন সামনে, আর ঠিক সেই সময়েই কংগ্রেসের ভেতরের ফাটল নতুন করে প্রকাশ্যে এসেছে। এদিকে, আম আদমি পার্টি সরকার এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন—নাভজ্যোৎ কৌরের মন্তব্য নিছক ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ নাকি সিধুর সক্রিয় রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তনের পরিকল্পিত ভূমিকা প্রস্তুতি? তবে এতেই স্পষ্ট—পঞ্জাবের রাজনীতি আগামী দিনগুলোতে আরও উত্তপ্ত হতে চলেছে।