আজকাল ওয়েবডেস্ক: উত্তরকাশীতে সম্প্রতি পরপর মেঘ ভাঙা বৃষ্টি। একের পর এক ভয়াবহ দুর্যোগ। সোমবার ভোরে রাজ্যজুড়ে ভারী বৃষ্টিপাত। বৃষ্টিপাত চলাকালীন উদ্ধারকাজে ভয়াবহ বিঘ্ন ঘটে৷ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধারালি গ্রামে পাহাড়ি বন্যা ও কাদামাটির ধসের কারণে প্রায় অর্ধেক গ্রাম মাটিচাপা পড়ে যায়। ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তর (IMD) পুরো উত্তরাখণ্ড রাজ্যের জন্য ইতিমধ্যেই ‘ইয়েলো’ সতর্কতা জারি করেছে।

স্থানীয় প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত চারজনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। দুর্ঘটনার জেরে দুজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও ৪৯ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। ভয়াবহ এই ট্র্যাজেডির এক সপ্তাহ পার হয়ে গিয়েছে।  জীবিতদের উদ্ধারের আশা ক্রমে ক্ষীণ হয়ে আসছে। উদ্ধারকারী দলগুলি ধ্বংসস্তূপের নিচে অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে। কিছু জায়গায় উদ্ধারকর্মীরা হাতে কোদাল নিয়ে ধ্বংসস্তূপ খুঁড়ে দেখছেন। ধারালিতে ইন্দো-টিবেটান বর্ডার পুলিশ (ITBP)-এর এক কর্মকর্তা জানান, একটি হোটেল সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। এমনকি দুর্যোগের সময় এই হোটেলের সামনে লোকজন চলাফেরা করছিলেন বলে অনুমান করা হচ্ছে। সেই কারণে, হোটেলটির ধ্বংসাবশেষ বর্তমানে হাতে খুঁড়ে ও রাডার যন্ত্রের সাহায্যে পরীক্ষা করা হচ্ছে, যদি সেখানে কেউ চাপা পড়ে থাকেন।

প্রশাসন জানিয়েছে, গঙ্গনানি এলাকায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বেইলি সেতু নির্মাণ করে ভাগে ভাগে উদ্ধারকাজ চালু করা হয়েছে। সূত্র মারফত এটি ধারালি ও তার আশপাশের বন্যাকবলিত এলাকার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে। তবে গঙ্গোত্রী জাতীয় সড়ক (National Highway) এখনও বিভিন্ন স্থানে আটকে আছে এবং একইসঙ্গে বিভিন্ন অংশে ধ্বংসপ্রাপ্ত। মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি জানান, সড়ক পরিষ্কার ও মেরামতের কাজ যুদ্ধকালীন ভিত্তিতে চলছে। খবর অনুযায়ী, মঙ্গলবার বা বুধবার নাগাদ পুরোপুরি চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সড়কটি সোনগাড়, ডবরানি এবং হর্ষিল এলাকায় এখনও অবরুদ্ধ। হর্ষিল অঞ্চলে বন্যার পর একটি বিশাল হ্রদ সৃষ্টি হয়েছে। এই হ্রদের জলস্তর হ্রাসের প্রচেষ্টা চলছে৷ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে উত্তরকাশীর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট প্রশান্ত আর্য  পরিদর্শন করেছেন। এই বন্যা হর্ষিলে অবস্থিত একটি সেনা শিবিরেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সূত্রে জানা গিয়েছে, এই শিবির থেকে এক জন জুনিয়র কমিশন্ড অফিসারসহ নয়জন সেনা জওয়ান নিখোঁজ রয়েছেন।

আরও পড়ুনঃ 'এইটুকু অর্থে কী হবে?' উত্তরাখণ্ড সরকারের ভূমিকা নিয়ে পশ্ন, বিক্ষোভে ফুঁসে উঠলেন বাসিন্দারা...

এদিকে, আবহাওয়া দপ্তর সোমবারের জন্য গোটা উত্তরাখণ্ড রাজ্যে বৃষ্টির ‘ইয়েলো’ সতর্কতা জারি করেছে। এর পাশাপাশি, আলমোড়া, দেরাদুন, হরিদ্বার, নয়নিতাল, পৌরি এবং উধম সিং নগর জেলাগুলির জন্য ‘রেড’ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এই এলাকাগুলিয়ে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে।

সোমবার সকাল থেকেই দেরাদুনে প্রবল বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে, এবং উত্তরকাশীতেও বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে, যার ফলে উদ্ধারকাজে জটিলতা আরও বাড়ছে।

প্রসঙ্গত, এই দুর্যোগে ইতিমধ্যেই বহু মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। অনেকে তাঁদের পরিবার-পরিজন, ঘরবাড়ি, এমনকি কয়েক কোটি টাকার ব্যবসা হারিয়েছেন। ভয়াবহ বন্যার স্রোতে কেবল একাধিক ঘরবাড়ি, দোকানপাট নয়, বরং একাধিক মানুষের জীবন সম্পূর্ণভাবে ভেসে গিয়েছে। সূত্রে জানা গিয়েছে, এহেন ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুক্রবার প্রত্যেক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ৫,০০০ টাকার চেক ‘তাৎক্ষণিক সাহায্য’ হিসেবে দেওয়া হয়। তবে অধিকাংশ মানুষের মতে তাঁদের দুঃখ-কষ্টের তুলনায় এটি কিছুই নয়।

সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার অনেকেই এই চেক নিতে অস্বীকার করেন। এমনকি এটিকে তাঁদের কষ্টের প্রতি এক ধরনের অবমাননা হিসেবে দেখছেন তাঁরা। এক গ্রামবাসী জানিয়েছেন, 'আমরা সব কিছু হারিয়েছি। আমাদের পরিবার, ঘরবাড়ি, ব্যবসা, জীবনের সমস্ত সহায়-সম্বল। এই ৫,০০০ টাকা দেওয়া মানে আমাদের সেই কষ্টকে তুচ্ছ করে দেখা। এটা আমাদের জন্য অপমান।'