আজকাল ওয়েবডেস্ক: লোকসভায় বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী বুধবার (১৩ আগস্ট) পুনের বিশেষ এমপি/এমএলএ আদালতে দাবি করেন, তিনি সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পদক্ষেপের পর থেকে প্রাণনাশের হুমকির মুখে রয়েছেন। বিশেষত, তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মানহানির মামলা যিনি দায়ের করেছেন সেই সত্যকি সাভারকরের পারিবারিক বংশপরিচয়কে কেন্দ্র করেই এই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আইন সংক্রান্ত ওয়েবপোর্টাল বার অ্যান্ড বেঞ্চ-এর প্রতিবেদনে জানা যায়, রাহুল গান্ধী আদালতে বলেন, মামলার ন্যায্যতা ও নিজস্ব নিরাপত্তা— দুই-ই গুরুতরভাবে বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে তিনি মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকারের কাছে “প্রতিরোধমূলক সুরক্ষা” (Preventive Protection) প্রদানের আবেদন করেছেন। তাঁর পক্ষে আইনজীবী মিলিন্দ দত্তাত্রেয় পাওয়ারের মাধ্যমে দাখিল করা আবেদনে বলা হয়, “প্রতিরোধমূলক সুরক্ষা প্রদান শুধু বুদ্ধিমানের কাজ নয়, বরং এটি রাজ্যের সাংবিধানিক দায়িত্ব।” আবেদনপত্রে উল্লেখ করা হয়, মামলার ন্যায্যতা, স্বচ্ছতা ও সততা বজায় রাখতে এই পদক্ষেপ একান্ত প্রয়োজন।
সাভারকরের বংশপরিচয় ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
আবেদনে বলা হয়, ২৯ জুলাই দাখিল করা এক লিখিত জবাবে সত্যকি সাভারকর স্বীকার করেছেন যে, মাতৃকূলের সূত্রে তিনি নাথুরাম গডসে ও গোপাল গডসের প্রত্যক্ষ বংশধর—যাঁরা মহাত্মা গান্ধী হত্যার মূল অভিযুক্ত ছিলেন। একই সঙ্গে তিনি বিনায়ক দামোদর সাভারকরের বংশধর হওয়ার দাবিও করেছেন। রাহুল গান্ধীর দাবি, “বাদীর এই বংশপরিচয়ের সঙ্গে যুক্ত সহিংস ও অসাংবিধানিক প্রবণতার ঐতিহাসিক প্রমাণের কারণে আমার ক্ষতি, মিথ্যা ফাঁসানো বা অন্য ধরনের লক্ষ্যবস্তু হওয়ার স্পষ্ট, যুক্তিসঙ্গত ও গুরুতর আশঙ্কা রয়েছে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকাণ্ড তাৎক্ষণিক কোনো পদক্ষেপ ছিল না, বরং এটি ছিল নির্দিষ্ট মতাদর্শ দ্বারা পরিচালিত একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র, যা নিরস্ত্র মানুষের ওপর উদ্দেশ্যমূলক সহিংসতার ফলাফল।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
আবেদনে রাহুল গান্ধীর সাম্প্রতিক রাজনৈতিক বক্তব্য ও পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে—
১১ আগস্ট লোকসভায় দেওয়া “ভোট চোর সরকার” স্লোগান।
নির্বাচনী অনিয়ম সংক্রান্ত নথি জমা।
সংসদে দেওয়া বক্তব্য: “সত্যিকারের হিন্দু কখনো হিংস্র হয় না, ঘৃণা ছড়ায় না। বিজেপি ঘৃণা ও হিংসা ছড়ায় এবং তারা হিন্দুদের প্রতিনিধিত্ব করে না।” তিনি দাবি করেন, এইসব মন্তব্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের শত্রুতা উস্কে দিয়েছে। আবেদনে উল্লেখ করা হয়, তাঁর এই মন্তব্যের পরপরই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব ও বিজেপি সাংসদ সুখাংশু ত্রিবেদী সংবাদ সম্মেলন করে তাঁকে হিন্দু সমাজকে অপমান করার অভিযোগে অভিযুক্ত করেন।
সরাসরি হুমকির উল্লেখ
আবেদনে দুটি প্রকাশ্য হুমকির কথাও বলা হয়—
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবনীত সিং বিট্টুর মন্তব্য, যেখানে তিনি রাহুল গান্ধীকে “দেশের এক নম্বর সন্ত্রাসবাদী” বলেন।
বিজেপি নেতা তরবিন্দর সিং মারওয়ার হুমকি।
মামলার পটভূমি
মামলাটি ২০২৩ সালের মার্চে লন্ডনে রাহুল গান্ধীর দেওয়া একটি ভাষণকে ঘিরে। সেখানে তিনি সাভারকরের লেখা থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে দাবি করেন, সাভারকর ও অন্যরা এক মুসলিম ব্যক্তিকে আক্রমণ করেছিলেন এবং সাভারকর এটিকে “আনন্দদায়ক” বলে মনে করেছিলেন। সত্যকি সাভারকর ২০২৩ সালে মানহানির মামলা করেন, দাবি করে যে সাভারকরের লেখায় এমন কোনো ঘটনার উল্লেখ নেই।
পরবর্তী শুনানি
আদালত মামলাটির পরবর্তী শুনানির তারিখ ধার্য করেছে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর।
